Tuesday, June 3, 2025
বাড়িরাজ্যতিপরা মথা-টিপিএফ সংঘর্ষ, উত্তাল খুমুলুঙ

তিপরা মথা-টিপিএফ সংঘর্ষ, উত্তাল খুমুলুঙ

আগরতলা, ১৬ ডিসেম্বর (হি.স.) : গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের ডাক দিয়ে জনজাতিদের মধ্যে ঐক্য চাইছিলেন তিপরা মথা-সুপ্রিমো তথা এমডিসি প্রদ্যুৎকিশোর দেববর্মন। সেই স্বপ্নে বিভোর এডিসি এলাকার ভোটাররা স্বশাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দু-হাত উজাড় করে সমর্থন দিয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু মোহ হয়তো কাটতে শুরু করেছে।

ফলে, সংঘাত চরমে গিয়ে ঠেকেছে। আজ বৃহস্পতিবার এডিসি সদর খুমুলুঙে অনৈক্যের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিপরা মথা এবং ত্রিপুরা পিপলস ফ্রন্ট (টিপিএফ)-এর মধ্যে সংঘাতে বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়েছেন। দুটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, জনরোষ থামাতে গিয়ে ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন প্রদ্যুৎকিশোর দেববর্মন।

 পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল, তাঁকে কেঁদে ভাসাতে হয়েছে। আজকের ঘটনা স্বাভাবিকভাবে গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের স্বপ্নকে চুরমার করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, দলের ওপর প্রদ্যুতের যে নিয়ন্ত্রণ নেই তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্রের খবর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপনের জন্য খুমুলুঙে অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিল ত্রিপুরা পিপলস ফ্রন্ট। কিন্তু পুলিশ তাঁদের অনুমতি দেয়নি। ফলে পরবর্তী সময়ে এডিসি প্রশাসনের কাছে খুমুলুঙের খুম্পুই ময়দানে অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিল। সেই অনুমতি টিপিএফ পেয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাতে সেই অনুমতি বাতিল করে দেয়। তাই তারা আজ খুম্পুই ময়দানে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেন। তখন তিপরা মথার কর্মীরা গিয়ে টিপিএফ-কর্মীদের মারধর করেছেন। তাতে পরিস্থিতি রণংদেহী রূপ নিয়ে নেয়। কারণ, টিপিএফ কর্মীরা পাল্টা মারধর করেছে বলে অভিযোগ।

ওই ঘটনার রেশ মুহূর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। টিপিএফ সমর্থকরা বিশাল মিছিল করে খুম্পুই ময়দানে হাজির হন। তাঁরা সকলেই প্রদ্যুৎকিশোর দেববর্মনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। এতে তিপরা মথার কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং সংঘর্ষ বেঁধে যায়। উত্তেজিত টিপিএফ কর্মীরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশাল পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন প্রদ্যুৎকিশোর ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেন। তাঁকে দেখে টিপিএফ কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। একজন কর্মী উত্তেজিত হয়ে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন। তখন প্রদ্যুৎকিশোরও তার দিকে তেড়ে যান। তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কারণ, পরিস্থিতি দেখে প্রদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

কিছু সময় যাওয়ার পর পরিস্থিতি সামান্য নিয়ন্ত্রণে আসলে প্রদ্যুৎ সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ করেন। তাতে ফুটে উঠেছে তিপরা মথা দল পরিচালনায় তাঁর ব্যর্থতার চিত্র। শুধু তা-ই নয়, জনজাতিদের মধ্যে ঐক্যের ডাক কার্যত ফানুসে পরিণত হচ্ছে, নিজের চোখে দেখে হয়ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। রাজনীতির কঠিন অভিজ্ঞতা আজ প্রদ্যুৎকে আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল। ফলে, তাঁকে ভাষণ দেওয়ার সময় কেঁদে ভাসাতে দেখা গিয়েছিল।

তাঁর সাফ কথা, শান্তি রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে একজোট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অশান্তি ছড়ানোর দায়ে প্রয়োজনে তিপরা মথার কর্মীর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ প্রদ্যুৎকিশোর টের পেয়েছেন, গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার দিকেই এগিয়ে চলেছে। কারণ, জনজাতিদের রোষের মুখে পড়ে প্রদ্যুৎকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এডিসি নির্বাচনে সাফল্যে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর প্রদ্যুৎকিশোর এখন জনজাতিদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চিন্তায় পড়বেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!