Saturday, February 15, 2025
বাড়িখেলাসেই চেলসিকে হারিয়ে এফএ কাপ জিতল লিভারপুল

সেই চেলসিকে হারিয়ে এফএ কাপ জিতল লিভারপুল

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ মে।   একই ভেন্যু। সেই দুই দল। ঠিক যেন মাস তিনেক আগের লিগ কাপের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হলো। লিভারপুল দাপট দেখালেও দিক না হারিয়ে পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়াল চেলসি। পরতে পরতে উত্তেজনায় ঠাসা লড়াই নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে গড়াল টাইব্রেকারে। স্নায়ুচাপের রোমাঞ্চকর সেই লড়াইয়ে জিতে এফএ কাপ জয়ের উল্লাসে মাতল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শনিবার শিরোপা লড়াইয়ে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় ছিল গোলশুন্য ড্র। পরে পেনাল্টি শুট আউটে ৬-৫ গোলে জেতে লিভারপুল।ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতাটিতে তারা এই নিয়ে আটবার চ্যাম্পিয়ন হলো, ২০০৬ সালের পর প্রথম। আর চলতি মৌসুমে দ্বিতীয় শিরোপা জিতল দলটি। গত ফেব্রুয়ারিতে টমাস টুখেলের দলকেই টাইব্রেকারে হারিয়ে লিগ কাপ জিতেছিল লিভারপুল।লিভারপুলের শুরুর দাপটের পর পাল্টা জবাব দেয় চেলসি। কিছু সময় চলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, এরপর আবারও আক্রমণের স্রোত বইয়ে দেন সাদিও মানে ও লুইস দিয়াসরা। সুযোগও মেলে অসংখ্য। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে দুই দল মিলিয়ে তিনবার পোস্ট ও ক্রসবার কাঁপায় বল।

অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায় অবশ্য ছিল না সেই গতি। তবে টাইব্রেকারে আবারও জমে ওঠে লড়াই। চেলসির দ্বিতীয় শট নিতে এসে পোস্টে মেরে বসেন অধিনায়ক সেসার আসপিলিকুয়েতা। লিভারপুলের প্রথম চার শটের সবগুলোই জালের দেখা পাওয়ায় নির্ধারিত পাঁচ শটেই ম্যাচ শেষ হয়ে যেতে পারত; কিন্তু তাদের শেষ শট নিতে আসা মানের প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে লড়াইয়ে নতুন করে প্রাণ ফেরান চেলসি গোলরক্ষক এদুয়াঁ মঁদি।তবে তার গড়ে দেওয়া ভিতে ইমারত গড়তে পারেনি চেলসি। সাডেন ডেথের দ্বিতীয় শট নিতে গিয়ে ব্যর্থ হন ম্যাসন মাউন্ট, তার শট ঠেকিয়ে দেন আলিসন। আর কস্তাস সিমিকাসের পরের শটটি জাল স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে লিভারপুল।

১০ বছরের পুরনো ক্ষতে প্রলেপ দিল ‘অল রেড’ নামে পরিচিত দলটি। এর আগে ২০১২ সালে সবশেষ প্রতিযোগিতাটির ফাইনালে উঠেছিল তারা। সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল চেলসি; সেই লড়াইয়ে জিতেছিল ‘ব্লুজ’ নামের স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলটি।চলতি মৌসুমে এই নিয়ে চারবার দেখা হলো দল দুটির। টাইব্রেকারের জয়-পরাজয় বাদ দিলে প্রতিবারই লড়াই শেষ হলো সমতায়।আক্রমণাত্মক ফুটবলে শুরু থেকে চাপ বাড়ানো লিভারপুল অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে শট নেন দিয়াস। পা দিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক মঁদি, তারপরও বল যাচ্ছিল লক্ষ্যের দিকে। শেষ মুহূর্তে বল বিপদমুক্ত করেন মিডফিল্ডার নাবি কেইতা।প্রথম ১৫ মিনিটে ঘর সামলানোয় ব্যস্ত সময় কাটানোর পর প্রথম আক্রমণে ওঠে চেলসি। তবে ডি-বক্সে রোমেলু লুকাকুর হ্যান্ডবলে তা ভেস্তে যায়। এরপর আবারও লিভারপুলের আক্রমণের ঢেউ।

খেলার ধারার বিপরীতে ২৭তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় চেলসি। ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের দারুণ পাস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে নিচু শট নেন মার্কোস আলোনসো, এগিয়ে গিয়ে ঠেকিয়ে দেন আলিসন।

খানিক পর কয়েক মিনিটের মধ্যে লিভারপুল শিবিরে বড় ধাক্কা হয়ে আসে চোট শঙ্কা। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আলিসন খেলায় ফিরলেও পারেননি মোহামেদ সালাহ। পায়ে অস্বস্তি নিয়ে ৩৩তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন তিনি, বদলি নামেন দিয়োগো জটা।মৌসুম শেষের ভীষণ ব্যস্ত এই সময়ে আগামী দুই সপ্তাহে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াইয়ে শেষ ২ রাউন্ড ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলবে লিভারপুল। বড় কোনো চোট এড়াতেই হয়তো আগেভাগে সালাহকে তুলে নেন কোচ।বিরতির আগে দুই দলই একটি করে হাফ-চান্স পায়। কিন্তু গোলমুখে জটার ভলি ক্রসবারের ওপর দিয়ে যাওয়ার পর চেলসির সবচেয়ে দামি ফুটবলার লুকাকুও বল আকাশে তোলেন।

প্রথমার্ধে বারবার চেলসি শিবিরে ভীতি ছড়ানো দিয়াস ৫২তম মিনিটে আবারও একটুর জন্য জালের দেখা পাননি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ডের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। আট মিনিট পর আরেকবার হতাশ করেন তিনি।বাকি সময়েও ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ৮৩তম মিনিটে মানের পাস ধরে দিয়াসের শট কাছের পোস্ট কাঁপায়। পরক্ষণে আবারও দুর্ভাগ্য বাঁধ সাধে লিভারপুলের পথে; এবার কাছ থেকে জটার নেওয়া শট পোস্টে বাধা পায়।অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে আধিপত্য করে চেলসি। দুটি সুযোগও তৈরি করে তারা, যদিও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি কেউ। আর পরের ১৫ মিনিটে অপরিকল্পিত আক্রমণে কেবল সময় অতিবাহিত হয়েছে।ম্যাচটাকে টাইব্রেকারে নেওয়াই যেন ছিল মূল লক্ষ্য। সেখানে বাজিমাত করল লিভারপুল।কোয়াড্রপল জয়ের আশাও টিকে রইল ক্লপের শিষ্যদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠা লিভারপুল অবশ্য প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। শেষ দুই ম্যাচে তাদের জিততে তো হবেই, সেই সঙ্গে প্রার্থনা করতে হবে যেন ম্যানচেস্টার সিটি হারে।

চেলসির জন্য ব্যর্থতার গ্লানি অনেক বেশি। দুটি প্রতিযোগিতার শিরোপা জয়ের খুব কাছে গিয়েও ফিরতে হলো খালি হাতে, মৌসুমটাও শেষ হচ্ছে শূন্য হাতে। একই সঙ্গে অপ্রীতিকর একটা রেকর্ড গড়ল তারা; ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে এফএ কাপে টানা তিন বছর ফাইনালে উঠে হারল আটবারের চ্যাম্পিয়নরা (২০২০ সালে আর্সেনালের বিপক্ষে ও গত বছর লেস্টার সিটির বিপক্ষে)।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য