স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ মে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় শূন্য কোভিড-নীতি বাস্তবায়নে নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি ‘কার্যকর’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন, এতে ‘অপ্রয়োজনীয় বা অনাবশ্যক’ কারণে বিদেশ যেতে কঠোরভাবে বারণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চীনের জাতীয় অভিবাসন প্রশাসন বলেছে, পাসপোর্টের মতো ভ্রমণ নথির বিষয়ে তারা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে কঠোর করবে। বিদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুকদের কঠোরভাবে সীমিত করবে।সিএনএন জানিয়েছে, চীনের এই পদক্ষেপের পেছনে যুক্তি হলো- দেশ ছাড়ার সময় এবং দেশে ফের প্রবেশের সময় ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো।এ কারণে কেবল ‘প্রয়োজনীয়’ উদ্দেশ্য যেমন- পুনরায় কাজ শুরু, পড়ালেখা, ব্যবসা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাবেন নাগরিকরা।ঘোষণা অনুসারে, যারা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দুর্যোগে ত্রাণ সংস্থানের জন্য বিদেশ যেতে চান তাদের আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।নতুন এই বিধিনিষেধ কীভাবে প্রয়োগ করা হতে পারে বা বৈধ কাগজপত্র থাকা নাগরিকদের ভ্রমণ কীভাবে আটকানো হবে তা জানাননি কর্মকর্তারা।
সিএনএন লিখেছে, শূন্য কোভিড-নীতি বাস্তবায়নে বিদেশ ভ্রমণের এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ, যা দেশের জনগণের উপর আরও চাপ তৈরি করছে। কারণ, গত দুই বছরে মানুষ গণ-পরীক্ষা ও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনসহ ‘ড্রাকোনিয়ান স্টাইলে’ কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সহ্য করেছে।সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় টুইটারের মতো চীনের প্লাটফর্ম উইবোতে একজন মন্তব্য করেছেন “প্রয়োজন না হলে বাইরে যাবেন না, প্রয়োজন না হলে দেশ ছাড়বেন না, প্রয়োজন না হলে সন্তান জন্ম দেবেন না।”অন্যরা মনে করছেন, বেইজিংয়ে ফের কোভিডের সংক্রমণ বাড়ায় সরকারের নতুন লকডাউনের ভয়ে লোকজন দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যে কারণে কর্তৃপক্ষ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালাতে যাচ্ছে।
সাংহাইয়ের মতো লকডাউনে থাকা শহরগুলোতে বিশৃঙ্খলা এবং কর্মহীনতার কারণে এই ভয়গুলো আরও বেড়েছে।উইবোতে একজন মন্তব্য করেছেন, “যারা চীন থেকে পালাতে চান তারা এ কারণে ভীত যে, সরকারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মুখে (মহামারীর মধ্যে) জনগণের অধিকার এবং মর্যাদা কিছুই নয়।”আরেকজন লিখেছেন,“আমরা কি কিং রাজবংশের জাতীয় নিঃসঙ্গতার নীতিতে ফিরে যাচ্ছি?” এই কিং রাজবংশ ছিল ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে চীনের শেষ রাজবংশ, সেসময় বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে চীন আলাদা হয়ে পড়েছিল।দেশজুড়ে গত কয়েক মাস ধরে লকডাউনের কারণে চীনা জনসাধারণের হতাশা ক্রমাগত বাড়ছে।সিএনএন’র হিসাব অনুযায়ী, চীনের কমপক্ষে ৩২টি শহর এখনও সম্পূর্ণ বা আংশিক লকডাউনের অধীনে, যা ২২ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ধনী শহর সাংহাই, মার্চের শেষ দিক থেকে শহটি লকডাউনের অধীনে রয়েছে। পুরো এপ্রিল জুড়ে বাসায় বন্দী মানুষগুলো খাবার, ওষুধ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাচ্ছে না।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ উঠছে, কমিউনিটির কর্মীরা অনুমতি ছাড়াই জোরপূর্বক মানুষের বাড়িতে প্রবেশ করে জীবাণুমুক্তকরণের সময় তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের ক্ষতি করছে।
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বাসিন্দারা পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে তর্ক করছেন, তাদের জোর করে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোন নীতিতে বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বা কোথায় পাঠানো হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।সিএনএন জানিয়েছে, সাংহাইয়ের পর দেশটির রাজধানী বেইজিং পরবর্তী টার্গেট বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।বেইজিং কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকতে উত্সাহিত করেছে, গণপরীক্ষা চালানো হচ্ছে। সুপারমার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আতঙ্ক বাড়ছে, লকডাউনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদের ক্ষেত্রে বাজারে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে ছবিগুলোতে।বেইজিং কর্মকর্তারা লকডাউনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জনগণকে খাদ্য মজুদ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
তবে তাদের এই আহ্বান খুব কমই কাজে আসতে পারে। জনগণের আস্থা ইতোমই ভেঙে গেছে। কারণ সাংহাইয়ে ক্ষেত্রেও এমন অস্বীকার করার পর শহরব্যাপী লকডাউন জারি করা হয়েছিল।সিএনএন জানিয়েছে, বেইজিং কর্মকর্তারা জনসাধারণকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন এমন একটি ভিডিওর নিচে একজন উইবো ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এটি একটি পরিচিত চিত্র।”অন্যজন লিখেছেন, “এই শিক্ষার পর কে ঝুঁকি নিতে চায়?”