Saturday, July 27, 2024
বাড়িখেলাআরও একবার উইজডেনের ‘লিডিং ক্রিকেটার’ স্টোকস

আরও একবার উইজডেনের ‘লিডিং ক্রিকেটার’ স্টোকস

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,,১৮ এপ্রিল: এই নিয়ে চার বছরের মধ্যে তৃতীয়বার ছেলেদের ‘লিডিং ক্রিকেটার’ হলেন স্টোকস। ২০১৯ ও ২০২০ সালেও তিনি হয়েছিলেন সেরা। তিনবার সেরা হতে পেরেছেন আর কেবল বিরাট কোহলি। ভারতীয় গ্রেট অবশ্য একটি জায়গায় এখনও অনন্য। টানা তিনবার ‘লিডিং ক্রিকেটার’ হতে পেরেছেন কেবল তিনিই (২০১৬-২০১৮)। মেয়েদের ক্রিকেটে মুনি সেরা হলেন তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার। এর আগে দুইবার সেরা হতে পেরেছেন কেবল তার অস্ট্রেলিয়ান সতীর্থ অলরাউন্ডার এলিস পেরি (২০১৬ ও ২০১৯)। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের ২০২৩ সালের সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার। ক্রিকেটের অনেক ইতিহাসের দলিল এই অ্যালমানাকের ১৬০তম সংস্করণ এটি। উইজডেনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও দারুণ সম্মানজনক স্বীকৃতি ‘বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার’-এর তালিকায় এবার জায়গা পেয়েছেন ইংল্যান্ডের বেন ফোকস ও ম্যাথু পটস, নিউ জিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল ও টম ব্লান্ডেল এবং ভারতের হারমানপ্রিত কৌর।

মূলত ইংলিশ গ্রীষ্মে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের বিবেচনায় নেওয়া হয় পাঁচ বর্ষসেরার বাছাইয়ে। একাধিকবার এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না কাউকে। বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের সম্মান পেয়েছেন ভারতের সূর্যকুমার যাদব। এই বছর থেকে পুরস্কারের নতুন একটি ক্যাটেগরি চালু করেছে উইজডেন। ক্রিকেটের আইন প্রণেতা সংস্থা এমসিসির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই স্বীকৃতির নাম ‘উইজডেন ট্রফি ফর আউটস্ট্যান্ডিং ইন্ডিভিজুয়াল টেস্ট পারফরম্যান্স।’ ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলিয়ে কোনো এক টেস্টের অসাধারণ পারফরম্যান্সকে বেছে নেওয়া হবে এখানে। প্রথম বছরে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন জনি বেয়ারস্টো। গত জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে তার জোড়া সেঞ্চুরিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বর্ষসেরা পারফরম্যান্স হিসেবে।  ‘উইজডেন ট্রফি ফর আউটস্ট্যান্ডিং ইন্ডিভিজুয়াল টেস্ট পারফরম্যান্স’ জিতেছেন জনি বেয়ারস্টো। ওই টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে বিপর্যয়ের মধ্যে নেমে পাল্টা আক্রমণে সেঞ্চুরি করেন বেয়ারস্টো। শেষ বড় রান তাড়ায় করেন ম্যাচ জেতানো অপরাজিত সেঞ্চুরি। জো রুটের সঙ্গে গড়েন ২৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। নিজেদের রেকর্ড ৩৭৮ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড।

আগে দুই দফায় লিডিং ক্রিকেটার হলেও এবারের স্বীকৃতি স্টোকসের জন্য একটু আলাদা। এবার শুধু নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স নয়, এই খেতাব জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তার নেতৃত্বের। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম টেস্ট কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর আগ্রাসী ঘরানায় টেস্ট ক্রিকেটে যে বিপ্লব বয়ে এনেছে ইংল্যান্ড, তা বাস্তবয়ন করার মূল কুশীলব স্টোকসই। মাঠের ভেতরে-বাইরে দুর্দান্ত নেতৃত্বে তিনি নজর কেড়েছেন।এই দুজন দায়িত্বে আসার আগে ১৭ টেস্টের মধ্যে স্রেফ একটি জয় ছিল ইংল্যান্ডে। কিন্তু ম্যাককালাম-স্টোকস জমানায় ১২ টেস্টের ১০টিই জিতেছে ইংলিশরা। অধিনায়ক স্টোকস গড়েছেন রেকর্ডও। এতটা দ্রুত ১০ টেস্ট জয়ের স্বাদ পাননি আর কোনো ইংলিশ অধিনায়ক। মাইকেল ভনের ১৬ টেস্টে ১০ জয় ছিল আগের রেকর্ড। বিশ্বরেকর্ডেও স্টোকস স্পর্শ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার লিন্ডসে হ্যাসেটকে।এই সময়টায় যথারীতি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও উজ্জ্বল ছিলেন স্টোকস। ১২ টেস্টে ৩৬.১৬ গড়ে রান করেছেন ৬৫১, উইকেট নিয়েছেন ২০টি। এছাড়া বছরের শেষ দিকে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়েও ফাইনালে অপরাজিত ফিফটি উপহার দেন তিনি। উইজডেন সম্পাদক লরেন্স বুথ লিখেছেন, লিডিং ক্রিকেটারের লড়াইয়ে স্টোকসের মতো উপযুক্ত আর কেউ ছিল না।

“বেন স্টোকস ছাড়া অন্য কেউ এত দ্রুত একটা দলের ভাগ্য এভাবে বদলে দিতে পারতেন, এটা ভাবাও কঠিন। তিনি টেস্ট নেতৃত্ব নেওয়ার সময় ইংল্যান্ড সবশেষ ১৭ টেস্টের স্রেফ একটি জিতেছিল। কিন্তু সেই তিনি যখন পরে প্রথম সফরকারী অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেন, তখন নেতৃত্বে তার ১০ টেস্টের ৯টিই জেতা হয়ে গেছে এবং তার দল তখন খেলছে অভূতপূর্ব স্টাইল ও তেজ দেখিয়ে।”মেয়েদের ক্রিকেটের সেরা বেথ মুনি বছরজুড়ে ছিলেন ধারাবাহিক। কমনওয়েলথ গেমসে অস্ট্রেলিয়ার সোনা জয় ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের অভিযানে তিনিই ছিলেন দলের সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটার। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ ধরে রাখায়ও তিনি রাখেন বড় অবদান।গত বছর ১০ ওয়ানডে খেলে তার গড় ছিল ১০০.৭৫, স্ট্রাইক রেট ৯৬.৪১! টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংসে ৪৪৯ রান করেন ৫৬.১২ গড় ও ১৩৪.৪৩ স্ট্রাইক রেটে।বেন ফোকস বর্ষসেরা পাঁচে জায়গা পেয়েছেন উইকেটের সামনে-পেছনে পারফরম্যান্সের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দলের বিপর্যয়ে নেমে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন তিনি, স্টোকসের সঙ্গে উপহার দেন দারুণ জুটি। গোটা বছরে আরও কয়েকবার ব্যাট হাতে অবদান রাখেন তিনি দলের প্রয়োজনের সময়। উইকেটের পেছনে তিনি ছিলেন সাবলিল।ম্যাথু পটস কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ডিভিশন টু-তে ডারহামের হয়ে স্রেফ ১০ ম্যাচে শিকার করেন ৫৮ উইকেট। এই পারফরম্যান্সে টেস্ট অভিষেকও হয়ে যায় তার। ইংল্যান্ডের হয়ে ৫ টেস্টে নেন ২০ উইকেট। কেন উইলিয়ামসন, বিরাট কোহলিদের মতো ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়ে নজর কাড়েন ২৪ বছর বয়সী এই পেসার।

ড্যারিল মিচেলের এই তালিকায় থাকা অবধারিতই ছিল। গত বছর ইংল্যান্ড সফরে তিন টেস্টের প্রতিটিতেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১০৭.৬০ গড়ে সিরিজে ৫৩৮ রান করেন তিনি। ওই সিরিজে ৪০০ রানও করতে পারেননি দুই দল মিলিয়ে আর কেউ।ওই সিরিজেই ৭৬.৬০ গড়ে ৩৮৩ রান করে টম ব্লান্ডেল জায়গা করে নেন বর্ষসেরা পাঁচে। এছাড়া উইকেটের পেছনে ১১টি ডিসমিসালও ছিল কিউই কিপারের।বর্ষসেরা পাঁচের আরেকজন, হারমানপ্রিত কৌর ভারতকে নেতৃত্ব দেন ২০০৯ সালের পর প্রথমবার ইংল্যান্ডে সিরিজ জয়ে। নিজেও ব্যাট হাতে ওই সিরিজে ছিলেন দারুণ সফল। প্রথম ম্যাচে করেন অপরাজিত ৭৪, পরের ম্যাচে ১১১ বলে অপরাজিত ১৪৩! এছাড়াও তার নেতৃত্বে কমনওয়েলথ গেমস ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয় ভারত।বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের লড়াইয়ে সূর্যকুমার যাদবের তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আসলে ছিল না। গোটা বছরে ১ হাজার ১৬৪ রান করেন তিনি ১৮৭.৪৩ স্ট্রাইক রেটে। এর মধ্যে ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ বলে ১১৭, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ বলে ১১১ রানের ইনিংস।এছাড়াও এবারের অ্যালমানাকে আলাদা করে জায়গা পেয়েছেন শেন ওয়ার্ন। গত বছরের মার্চে প্রয়াত এই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির জীবন ও ক্যারিয়ারকে উদযাপন করা হয়েছে উইজডেনের পাতায় পাতায়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য