স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১২ মে : ‘অ্যান্টি–ন্যাশনাল’, ‘প্রতারক’, ‘বেইমান’। এভাবেই সোশাল মিডিয়ায় কদর্য আক্রমণ করা হয়েছে বিদেশসচিব বিক্রম মিসরিকে। শনিবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘোষণার পরই ধেয়ে আসে কটাক্ষ। শুধু তাই নয়, বিদেশসচিবের মেয়েকেও অশ্লীল মন্তব্যের মুখে পড়তে হয়েছে। নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। বিদেশসচিবের হয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন রাজইতিক দলের নেতারা।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফুঁসছে দেশবাসী। সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর গুঁড়িয়ে দিতে ৬ মে মাঝরাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। যার পালটা দিতে ভারতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে ইসলামাবাদ। যা রুখে দেয় ভারতীয় সেনা। দু’দেশের এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে আন্তর্জাতিক মহলে। এই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংকে প্রতিদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে নানা তথ্য জানাতেন বিদেশ সচিব। গত ১০ মে (শনিবার) ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার দাবি করে আমেরিকা। অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার ঘোষণাই সাংবাদিক সম্মলনে করেন বিক্রম মিসরি। কিন্তু আমেরিকার মধ্যস্থতা নিয়ে তিনি কোনও কথা বলেননি। তাঁর ঘোষণার ঘণ্টাকয়েক পরই পাকিস্তান হামলা চালাতে থাকে ভারতের নানা জায়গায়। এরপরই সোশাল মিডিয়ায় কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় বিদেশসচিবকে। ছাড়া হয়নি তাঁর পরিবারকেও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘর্ষবিরতির ঘোষণার পরে নেটিজেনদের একাংশ মিসরিকে যে ভাবে নিশানা করে, তাতে মনে হয় যেন এই সিদ্ধান্ত তাঁরই। পরিবার-সহ মিসরির বিভিন্ন ছবিতে কুরুচিকর মন্তব্য করেন অনেকে। কেউ কেউ লেখেন, তিনি নাকি ‘দেশকে বিক্রি’ করে দিয়েছেন! কিন্তু সিদ্ধান্ত তো শীর্ষ স্তরে। সেখানে মিসরির ভূমিকা খুব সীমিত। তিনি তো সেদিন শুধু সরকারিভাবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে এবং তাঁর মেয়েকে কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে।
এনিয়ে সরব বিরোধীরা। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর-সহ অনেকেই। ওয়েইসি বলেন, “তিনি খুবই সৎ এবং পরিশ্রমী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কারণে তাঁকে এভাবে আক্রমণ করা মেনে নেওয়া যায় না।” কেন্দ্রকে দুষে অখিলেশ বলেন, “সরকার বিক্রম মিসরির সম্মান রক্ষা করতে পারেনি। তিনি তো শুধু কেন্দ্রের বার্তা সকলকে দিয়েছেন।” জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে নিজের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল লক করে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসে বিদেশসচিব পদে নিযুক্ত করা হয় মিসরিকে। এর আগে তিনি ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলেছেন। একসময় ছিলেন চিনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত। ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর উত্তেজনা কমাতে দিল্লি-বেজিংয়ের মধ্যে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নিয়েছিলেন।