স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। ২১ সেপ্টেম্বর : বিজেপিশাসিত ওড়িশায় থানার ভিতরেই এক সেনা অফিসার ও তাঁর বাগদত্তাকে মারধর ও চরম যৌন হেনস্তার ঘটনা সামনে আসতেই শিউরে উঠেছে দেশবাসী। শুক্রবার ওই নির্যাতিতার বয়ান প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, থানার ভিতরেই অন্তর্বাস খুলে তাঁর বুকে বার বার লাথি মারা হয়, যৌনাঙ্গ দেখান থানার আইসি। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ-সহ ৫ জন পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুবনেশ্বরের ভরতপুর থানায় সেনা অফিসার এবং তাঁর বাগদত্তাকে মারধর ও যৌন নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার ওড়িশা হাই কোর্টের নির্দেশে নির্যাতিতা জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পরেই থানার লকআপের ভেতরে কীভাবে তাঁকে অত্যাচার করা হয়েছিল সেই কথা বর্ণনা করেন নির্যাতিতা। পেশায় আইনজীবী ওই মহিলা একটি রেস্তোরাঁ চালান। একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। এরপরেই তাঁদের গ্রপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
নির্যাতিতার অভিযোগ, “ইন্সপেক্টর ইনচার্জ বর্বরতার সব সীমা অতিক্রম করেছেন। তিনি আমাকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন।” নির্যাতিতার অভিযোগ, নিজেদের বাঁচাতে পুলিশ তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ তাঁর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে তাঁকে একটি ঘরে ফেলে দেয়। সেখানে একজন পুরুষ অফিসার তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “একজন পুরুষ পুলিশ অফিসার এসে আমার অন্তর্বাস খুলে বারবার আমার বুকে লাথি মারতে থাকেন।” তিনি আরও বলেন, “পরে সকাল ৬টা নাগাদ ইন্সপেক্টর ইনচার্জ পৌঁছন। তিনিও চরম দুর্ব্যবহার করেন।” নির্যাতিতা বলছেন, “ইন্সপেক্টর ইনচার্জ আমাকে ধাক্কা দেন, হুমকি দেন এবং অশ্লীল ইঙ্গিত করেন। তিনি নিজের প্যান্টের বোতাম খুলে যৌনাঙ্গ দেখিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ার কথা জানান। তিনি আমার শ্লীলতাহানিও করেছেন।” সেনা অফিসার জানান, তাঁকে ভোর ৩টে থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লক আপে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়। তাঁর অভিযোগ, সকাল ৬টা নাগাদ থানায় পৌঁছন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ। তিনি যখন পুলিশ অফিসারের কাছে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চান তখন তাঁকেও হেনস্থা করা হয়। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ অফিসার বাগদত্তাকে হয়রানি ও শ্লীলতাহানি করেছেন। তিনি ৩০ মিনিট ধরে বাগদত্তার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন।
যদিও পুলিশ কর্মীরা নির্যাতিতার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই অভিযোগ ওঠার পরেই ওড়িশা পুলিশের অপরাধ শাখা ঘটনার তদন্ত করছে। এই ঘটনার পর বিজেপি শাসিত ওড়িশায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যেখানে থানার মধ্যেই কোনও মহিলাকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তবে সারা রাজ্যে কে তাদের রক্ষা করবে? এদিন, দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, “ওড়িশায় কী ঘটছে এবং তাও একজন মহিলার সঙ্গে যিনি নিজে একজন আইনজীবী এবং একজন সেনা সদস্যের বাগদত্তা। থানার ভিতরেই একজন মহিলারকে এমন অসম্মান। এই ঘটনাগুলি কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যেই ঘটে? কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে মহিলারা নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার শিকার হয়?”