স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ অক্টোবর: জনমত জরিপে পাওয়া ধারণাই সত্যি প্রমাণ হল; জাপানের আগাম নির্বাচনে দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ফল দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)।জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডায়েটে এলডিপি ও তাদের শরিক কোমেইতো মিলে পেয়েছে ২১৫টি আসন, যেখানে বিরোধীরা পেয়েছে ২৩৫টি আসন। নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেতে অন্তত ২৩৩টি আসনের প্রয়োজন হয়।বিবিসি লিখেছে, এলডিপির নতুন নেতা শিগেরু ইশিবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে এই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে তিনি বলেছেন, “ভোটাররা আমাদের কঠোর রায় দিয়েছে এবং আমাদেরকে এই ফল বিনয়ের সঙ্গে মেনে নিতে হবে।”
শিগেরু ইশিবা বলেন, “জাপানের জনগণ এলডিপির কাছে তাদের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছে এবং এলডিপি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দল হয়ে উঠবে।”নির্বাচনের আগে জাপানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, এলডিপি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে ইশিবা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। আর সেটি হলে যুদ্ধোত্তর জাপানে সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি।২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এলডিপি। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি বেশিরভাগ সময়ই জাপানের ক্ষমতায় ছিল।
একের পর এক কেলেঙ্কারিতে এলডিপির টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই রোববার জাপানে আগাম নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়।রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ নিয়ে কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর এ বছরের শুরুতে জনমত জরিপে এলডিপির প্রতি মানুষের আস্থা ২০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। কিন্তু বিরোধীরা যে সে বিষয়টি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে, তা বলা যাবে না।এলডিপির টালমাটাল অবস্থাতেও বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনই শাসনের প্রশ্নে তারা যে ক্ষমতাসীনদের বিকল্প তা ভোটারদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সময় প্রধান বিরোধী দল সিডিপির প্রতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন ছিল। দলটি ১৪৮ আসনে জয়ের মুখ দেখেছে।
সিডিপি নেতা ইয়োশিহিকো নোদা সোমবার বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের সরাতে তিনি অন্যান্য দলের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন।কেয়ার-হোম সেক্টরে কাজ করা দীর্ঘদিনের এলডিপি সমর্থক মিয়ুকি ফুজিসাকি নির্বাচনের আগে বিবিসিকে বলেন, “দল বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন, আমি মনে করি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে।”দুর্নীতির অভিযোগের কারণে এলডিপি যে সংকটে আছে, তা মেনেই ৬৬ বছর বয়সী এই জাপানি বলেন, “কিন্তু বিরোধীরা সেইভাবে দাঁড়াতে পারেনি। তারা অনেক অভিযোগই করেছে, তবে তারা কী চায় তা স্পষ্ট নয়।”ভোটের ফল আসার পর নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে প্রায় ১.৫ শতাংশ, আর ডলারের বিপরীতে অবনমন হয়েছে ইয়েনের।বিবিসি লিখেছে, মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জাপানের রাজনীতি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে।
২০২১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো ফুমিও কিশিদা গত অগাস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর দলীয় প্রধানের নির্বাচনে জয় পেয়ে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিগেরু ইশিবা।হারানো জনসমর্থন ফেরাতে এলডিপি যখন মরিয়া, ঠিক তখনই এই সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা আসে।দীর্ঘদিনের রাজনীতিক সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইশিবা এই নির্বাচনকে ‘জনগণের রায়’ হিসেবে দেখছেন।একের পর এক কেলেঙ্কারি শাসক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এর মধ্যে প্রধান হল- বিতর্কিত ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে দলের সম্পর্ক; সমালোচকরা যে চার্চকে গুপ্তসংঘ বলে থাকেন।এরপরই প্রকাশ্যে আসে রাজনৈতিক তহবিল দুর্নীতি কেলেঙ্কারির ঘটনা। কয়েক ডজন এলডিপি আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহের আয়োজন থেকে অর্থ তসরুপের অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন কৌঁসুলিরা।
কোটি কোটি ডলার আত্মসাতের ওই অভিযোগ শক্তিশালী রাজনৈতিক দলটির মেরুদণ্ডকে দুর্বল করে দিয়েছে।এমন এক সময়ে এ নির্বাচন হয়েছে, যখন জাপানিরা নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের জন্য হাঁপিয়ে উঠেছে। তিন দশক ধরে মজুরি না বাড়লেও জিনিসপত্রের দাম গত দুই বছরে এতো বেড়েছে যা বিগত অর্ধ শতাব্দীতে দেখা যায়নি।এ মাসে ভোটাররা যখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি ডাক, ওষুধ, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মত নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে।টোকিওর উপকণ্ঠে উরাওয়া স্টেশনে মিচিকো হামাদা নামে একজন বলেন, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির যে অভিযোগ এসেছে, তার দৃষ্টিতে তা ক্ষমার অযোগ্য।
“প্রতি মাসে খাবারের জন্য আমি ১০ হাজার বা ২০ হাজার ইয়েনের বেশি ব্যয় করি। আর এখন অনেক জিনিসই কিনছি না যেটা আগে কিনতাম। আমি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু এটি এখন আরো বেড়ে গেছে। ফলের মত জিনিসের দাম অনেক বেশি।”নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি একাই উদ্বিগ্ন নন। পেনশনভোগী চি শিমিজু বলেন, এখন তাকে পার্টটাইম কাজ করতে হবে।উরাওয়া স্টেশনের একটি স্ট্যান্ড থেকে কিছু খাবার নিতে নিতে তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমাদের ঘণ্টাপ্রতি মজুরি কিছুটা বেড়েছে, তবে সেটা জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে যায় না।“আমি সস্তা এবং ভালো কিছু খুঁজতে এই ধরনের জায়গায় আসি, কারণ সাধারণ দোকানে সবকিছুই ব্যয়বহুল।”