স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩০ মার্চ। তুরস্কে শান্তি আলোচনায় রাশিয়া কিইভের আশপাশ ও চেরনিহিভে তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের তীব্রতা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও মস্কো তাদের কথা রাখবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ইউক্রেইন।দুই শহরের কাছ থেকে সৈন্য সাময়িকভাবে সরালেও রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেইনের অন্যান্য অংশে আক্রমণ আরও জোরদার করতে যাচ্ছে বলে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেইনের ‘নিরস্ত্রীকরণ’ ও দেশটিকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করার লক্ষ্য নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রতিবেশী দেশটিতে ‘সর্বাত্মক হামলা’ শুরু করেছিল। এতে এরই মধ্যে কয়েক হাজারের বেশি হতাহত হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ ইউক্রেইনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন; রাশিয়ার অর্থনীতিকেও পড়তে হয়েছে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো দেশে হওয়া সবচেয়ে বড় এ হামলার এক মাসেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের এক প্রাসাদে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের আলোচকরা মুখোমুখি বসেছিলেন।বেশিরভাগ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেইনীয়দের ‘তীব্র প্রতিরোধের’ মুখে রাশিয়ার অগ্রগতি বেশ কিছুদিন ধরে অনেকটা থমকেই আছে। ইউক্রেইনীয়রা সম্প্রতি কিছু এলাকা পুনর্দখল করেছে; এদিকে রুশ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ একাধিক শহরে হাজার হাজার বেসামরিক আটকাও পড়ে আছে।
“পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি, আরো আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি এবং সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য অর্জনে কিইভ ও চেরনিহিভের দিকে সামরিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা ব্যাপক পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্ডার ফোমিন।বে ইউক্রেইনের যেসব এলাকায় তুমুল লড়াই চলছে, দক্ষিণপূর্বে মারিউপোল, পূর্বাঞ্চলে সুমাই ও খারকিভ এবং দক্ষিণে খারসন ও মাইকোলাইভ, সেসব এলাকার বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।মঙ্গলবার পরের দিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ইউক্রেইনের জনগণ আহাম্মক নয়। হামলার ৩৪ দিনে এবং ডনবাসে গত ৮ বছরের যুদ্ধে তারা শিখেছে, কেবলমাত্র সুনির্দিষ্ট ফলেই আস্থা রাখা যায়।”
ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলছে, কিছু এলাকায় সামরিক অভিযানের তীব্রতা কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সম্ভবত বিভিন্ন ইউনিটের পালাবদল ও অন্যদের বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে।ইউক্রেইনের বাহিনী বিভিন্ন শহরে অস্ত্রবিরতির সুযোগ নিয়ে পুনর্গঠিত হচ্ছে এবং হাসপাতাল ও স্কুলকে ব্যবহার করে সেসব স্থাপনা থেকে গুলি ছুড়ছে বলে রাশিয়াও অভিযোগ করছে।জেলেনস্কির মতো তার পশ্চিমা মিত্ররাও রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।মঙ্গলবার পেন্টাগন বলেছে, রাশিয়া কিইভের আশপাশ থেকে খুবই সামান্য পরিমাণ সেনা সরানো শুরু করেছে; এই পদক্ষেপ পিছু হটা বা যুদ্ধ থেকে সরে যাওয়া না হয়ে জায়গা বদলও হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
“ইউক্রেইনের অন্য এলাকাগুলোতে বড় ধরনের আক্রমণ দেখার জন্য আমাদের সবার প্রস্তুত থাকা দরকার। এর অর্থ এই নয় যে, কিইভের ওপর হুমকি আর নেই,” সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমনটাই বলেছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি।যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য বলছে, রাশিয়া সম্ভবত এখন অন্য এলাকাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে হামলা জোরদার করতে চাইছে।এদিকে মস্কোর সমর্থন পাওয়া স্বঘোষিত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, দোনেৎস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পরই তারা রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত হওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করে দেখবেন।
এ ধরনের পদক্ষেপের কোনো আইনি ভিত্তি থাকবে না বলে মন্তব্য করেছে ইউক্রেইন।