স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৬ আগস্ট: ইসরায়েলে ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সীমান্ত যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম বড় লড়াইয়ের ঘটনাটি ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। এটি সীমান্ত যুদ্ধ হলেও ব্যাপকতা অনেক বেশি ছিল।গাজা যুদ্ধের সমান্তরালে শুরু হওয়া ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সীমান্ত লড়াই যদি বড় আকার ধারণ করে তবে তাতে হিজবুল্লাহর সমর্থক ইরান ও ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর সেরকম কিছু হলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে।
হিজবুল্লাহ রোববার ভোরে ইসরায়েলে শত শত রকেট ও ড্রোন যোগে হামলা চালায় আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বড় ধরনের আক্রমণ রুখতে তারা প্রায় ১০০ জঙ্গি বিমান দিয়ে লেবাননে আঘাত হানে।রয়টার্স জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে পেছনে বাষ্পের ধারা রেখে ভোরের আকাশে ছুটে যেতে দেখা গেছে, এ সময় ইসরায়েলে আকাশ হামলার সতর্কতা দিয়ে সাইরেন বেজেছে আর বিস্ফোরণে দিগন্ত আলোকিত হয়েছে, এই একই সময় দক্ষিণ লেবাননের বাড়িগুলোর ওপর দিয়ে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
পাল্টাপাল্টি হামলায় লেবাননে তিনজন ও ইসরায়েলে একজন নিহত হয়েছেন। উভয় পক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে, এই পাল্টাপাল্টি হামলা আর না বাড়ায় তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু সামনের আরও আঘাত হানা হতে পারে বলে উভয়পক্ষই সতর্ক করেছে।হিজবুল্লাহর নেতা সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, তাদের প্রতিশোধমূলক হামলা ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী’ সম্পন্ন হয়েছে।তিনি জানিয়েছেন, তারা তাদের আক্রমণের ফলাফল যাচাই করে দেখবেন, যদি তা সন্তোষজনক না হয় তাহলে আবারও হামলা চালানোর ‘অধিকার তারা রাখেন’।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ হিজবুল্লার সঙ্গে পুরো মাত্রার যুদ্ধ চায় না। কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, “এটিই গল্পের শেষ নয়।”এর আগে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “আমাদের দেশকে রক্ষায় যে কোনো কিছু করার জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যে কেউ আমাদের ক্ষতি করবে আমরাও তার ক্ষতি করবো।”দুই কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই দুই পক্ষই বার্তা বিনিময় করে একে অপরকে জানিয়েছে, তারা কেউই আর ঘটনা বাড়াতে চায় না। উভয়ের উপসংহার হচ্ছে, পাল্টাপাল্টি হামলা ‘সম্পন্ন’ হয়ে গেছে।
হিজবুল্লাহ বড় ধরনের আক্রমণ চালাতে যাচ্ছে, এমনটি নিশ্চিত হয়ে তাদের আগেই লেবাননে হামলা শুরু করে দেয় ইসরায়েল। নেতানিয়াহু বলেছেন, আগ বাড়িয়ে চালানো এই হামলার কারণে হিজবুল্লাহর আরও বড় ধরনের আক্রমণ বানচাল করে দেওয়া গেছে। কিন্তু নাসরাল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি।
নাসরাল্লাহ জানান, হিজবুল্লাহর প্রায় সব রকেট ও ড্রোনের লক্ষ্যস্থল ছিল তেল আবিবের কাছে ইসরায়েলের এক গোয়েন্দা সংস্থার ঘাঁটি।অপরদিকে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের একটি ‘কৌশলগত অবস্থানকে’ লক্ষ্যস্থল করা সবগুলো ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার ভোরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের অনেকগুলো শহরে অন্তত ৪০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।হিজবুল্লাহ জানায়, এসব হামলায় আল-তিরিতে তাদের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহর মিত্র আমল গোষ্ঠী জানায়, খিয়ামে তাদের এক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর হামলায় তাদের নৌবাহিনীর এক সেনা নিহত ও আরও দুইজন আহত হয়েছেন।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার থেকে ছোড়া একটি রকেট এসে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় রিশন লেটসিয়নের খোলা জায়াগায় পড়ে। রকেটটি গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে, এটি তারা শনাক্ত করেছে।ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড বলেছে, তারা ইসরায়েলের তেল আবিব লক্ষ্য করে একটি ‘এম৯০’ রকেট ছুড়েছিল।