Friday, October 18, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদইউক্রেইন: জাতিসংঘে রাশিয়া- যুক্তরাষ্ট্র উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

ইউক্রেইন: জাতিসংঘে রাশিয়া- যুক্তরাষ্ট্র উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ ফেব্রুয়ারি।  ইউক্রেইন সীমান্তে মস্কোর বিপুল সৈন্য সমাবেশ নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক ডাকার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন দূতের সঙ্গে রাশিয়ার দূতের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, রাশিয়া যে পরিমাণ সৈন্য হাজির করেছে ইউরোপ গত কয়েক দশকে তেমনটা দেখেনি।এর জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আতঙ্ক ছড়ানো এবং রাশিয়ার বিষয়ে ‘অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ তুলেছেন।ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়া আনুমানিক এক লাখ সৈন্য, বিপুল সংখ্যক ট্যাঙ্ক, কামান ও মিসাইল মোতায়েন করেছে; যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রুশ দূত ভাসিলি নিবেনজা বলেছেন, রাশিয়া যে ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এর কোনো প্রমাণ নেই এবং সংকট সৃষ্টির লক্ষ্যেই যে মস্কো বিপুল সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে, জাতিসংঘ তাও নিশ্চিত করেনি।

রাশিয়া প্রায়ই তার নিজ ভূখণ্ডের ভেতর সৈন্য সমাবেশ ঘটায় এবং এ নিয়ে ওয়াশিংটনের মাথা ঘামানোর কারণ নেই, বলেছেন তিনি।বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেইন উত্তেজনা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত আলোচনাও আটকে দিতে চেয়েছিল, তবে ১০-২ ভোটে তাদের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ‘উত্তেজনা ও কথার লড়াইয়ে হাওয়া দিচ্ছে, উত্তেজনা যেন বাড়ে সেজন্য উসকাচ্ছে’ বলেও অভিযোগ করেন নিবেনজা।

“এটা কেবল আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপই নয়, একইসঙ্গে তা ওই অঞ্চলের বাস্তব পরিস্থিতি এবং বর্তমান বৈশ্বিক উত্তেজনার কারণ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাও বটে,” বলেছেন তিনি।

মার্কিন দূত গ্রিনফিল্ড বলেন, উত্তেজনার কূটনৈতিক সমাধান আছে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে আসছে; তবে রাশিয়া যদি ইউক্রেইনে আক্রমণ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যবস্থা নেবে তা নিশ্চিত আর সেই প্রতিক্রিয়া হবে ‘ভয়াবহ’।“ইউরোপে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সৈন্য সমাবেশ। আমরা যখন কথা বলছি তখন রাশিয়া আরও সৈন্য ও অস্ত্র তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পাঠাচ্ছে,” বলেছেন তিনি।

মস্কো প্রতিবেশী বেলারুশে মোতায়েন করা সৈন্যের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার পরিকল্পনা করছে বলেও অভিযোগ এ মার্কিন দূতের।বেলারুশের অবস্থান ইউক্রেইনের উত্তর সীমান্তে।দুই পক্ষের মধ্যে এমন কথার লড়াইয়ের মাঝেও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে।ওয়াশিংটন জানিয়েছে, তারা ইউক্রেইন সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে যে প্রস্তাব দিয়েছিল, রাশিয়া তার লিখিত জবাব পাঠিয়েছে। তবে সেই প্রস্তাব এবং তার জবাবে মস্কো কী বলেছে, তা খোলাসা করেনি তারা।

রুশ প্রতিক্রিয়া নিয়ে জনসমক্ষে দরকষাকষি ‘নিস্ফলা’ হবে বলে মনে করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র।তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের ব্যাপারে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইউক্রেইনসহ তার মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রাখবে।মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভ যাচ্ছেন।মস্কোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক সমাধান বের করতে এবং আরও ‘রক্তক্ষয় এড়াতে’ ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি আছে জনসনের।

রাশিয়া যদি ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালায়, তবে মস্কোর ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেছেন, ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ বহু ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ‘টার্গেট’ করতে পারবে এমন আইন করার প্রস্তুতি চলছে।আর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার অর্থ হতে পারে, ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ অনেকের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, বলেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।সোমবার যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশে কর্মরত মার্কিন সরকারি কর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরও দেশটি ছাড়তে বলেছে; কারণ হিসেবে বেলারুশে ‘অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক রুশ সৈন্য সমাবেশের’ কথা উল্লেখ করেছে তারা।এর আগে ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও একই ধরনের একটি নির্দেশনা জারি করেছিল ওয়াশিংটন।

মস্কো চাইছে, ইউক্রেইন যেন কখনো নেটো জোটে না যায়, তার প্রতিশ্রুতি। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন এই জোটের কোনো সদস্য জোটের বাইরের কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্যরা তাকে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।রাশিয়ার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

নেটোর ৩০ সদস্য দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ছাড়াও লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ার মতো কয়েকটি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রও রয়েছে, যেগুলো রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত।

পূর্ব ইউরোপের এ দেশগুলোতে নেটো সৈন্যের উপস্থিতিকে মস্কো তার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে।রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, গত শতকের ৯০-র দশকে নেটো আর পূর্বদিকে অগ্রসর না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।তবে সেসময় আসলে কী কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। তার পরপরই  রুশপন্থি বিদ্রোহীরা ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, মস্কো ওই বিদ্রোহীদেরও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।ডনবাসে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য