স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১২ জুন: মানুষ আর ইঁদুর একসঙ্গে থাকতে পারে? ইঁদুরের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্লান্ত প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষের নেতারা এখন সেটাই খুঁজে দেখার চেষ্টা করছেন।বিশ্বের অনেক বড় শহরের মত ফ্রান্সের রাজধানীকেও ইঁদুরের উপদ্রপ কমাতে রীতিমত জুঝতে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা থেকে রেহাই না মেলায় ইঁদুরের সঙ্গেই কীভাবে বসবাস করা যায়, সেটা গবেষণা করে দেখতে একটি কমিটি গঠন করছেন প্যারিসের মেয়র অ্যানি ইদালগো।সিএনএন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সিটি কাউন্সিলের সভায় ইঁদুরের সমস্যা নিয়ে প্যারিসের ১৭তম প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান ও ডানপন্থি রিপাবলিকান পার্টির সদস্য জিওফ্রয় বোলার্ডের এক প্রশ্নের জবাবে ওই কমিটি গঠনের কথা জানান শহরের জনস্বাস্থ্যের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি মেয়র অ্যানি সুরিস।শহরের উন্মুক্ত স্থানে ইঁদুরের বিস্তার রোধে নগর কর্তৃপক্ষকে আরও উচ্চাভিলাষী কোনো পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বোলার্ড।প্যারিস থেকে ইঁদুর তাড়াতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে বামপন্থি সোশালিস্ট পার্টির মেয়র ইদালগোর সমালোচনাও করেন তিনি। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্যারিসে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ধর্মঘটের সময়ও তিনি মেয়রের সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন।বোলার্ড বলেন, মানুষের চলাচলের জায়গাগুলোতে ইঁদুরের উপস্থিতি প্যারিসবাসীর জীবনমানের ক্ষতি করছে। প্রজেক্ট আর্মাগেডন নামে চলমান ওই গবেষণা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ইঁদুরের সংখ্যা কীভাবে কমানো যায়, তা খুঁজে বের করাই ওই প্রকল্পের লক্ষ্য। সেইসঙ্গে ইঁদুর সম্পর্কে প্রচলিত সংস্কারগুলো দূর করে ছোট প্রাণিগুলোর সঙ্গে একই প্রতিবেশে কীভাবে প্যারিসবাসী আরও ভালোভাবে থাকতে পারে, সেটাও খুঁজে দেখবেন গবেষকরা।ফ্রান্স সরকারের অর্থায়নে এই গবেষণা চলছে, প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষেরও অংশীদারিত্ব আছে তাতে।ডেপুটি মেয়র অ্যানি সুরিস বলেন, মানুষ ও ইঁদুর কতটা কার্যকরভাবে একসঙ্গে বাস করতে পারে এবং পরিস্থিতি কেমন হলে তা প্যারিসবাসীর সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে না, তা বুঝতে এই গবেষণা হচ্ছে।ইঁদুরের রোগ ছড়ানো নিয়ে ডেপুটি মেয়র বলেন, যে ইঁদুরগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে সেগুলো প্লেগের জীবাণু বহনকারী কালো ইঁদুর নয়। আর অন্য ধরনের ইঁদুরও ব্যাকটেরিয়াজনিত লেপ্টোস্পাইরোসিসের মত রোগ ছড়াতে পারে।
২০১৭ সালে প্যারিসের ইঁদুরবিরোধী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেওয়া কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরেন সুরিস। এর মধ্যে ইঁদুরকে মাটির নিচে ফিরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে হাজারো নতুন বিন বসানোর কথাও বলেন।পরে এক টুইটে সুরিস বলেন, ইঁদুর এখন প্যারিসে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক কোনো ঝুঁকি তৈরি করছে না।এ নিয়ে বারও আপত্তি থাকলে ফরাসি ‘হাই কাউন্সিল অন পাবলিক হেলথ’ কর্তৃপক্ষকে তা খতিয়ে দেখতে বলেন তিনি। সেই সঙ্গে এও বলেন, “আমাদের বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দরকার, কোনো রাজনৈতিক প্রেস রিলিজ নয়।”প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা প্যারিস অ্যানিমাক্স জুপোলিস (পাজ) নগর কর্তৃপক্ষের গবেষণার ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, প্যারিসের মত ফ্রান্সের অন্যান্য বড় শহরেও ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে ইঁদুরের সঙ্গে সহবস্থানের প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই এখানে আসে।”“পাজে যখন আমরা ইঁদুরের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ এর কথা বলি, তার মানে ইঁদুর নিয়ে বাড়িঘর বা অ্যাপার্টমেন্টে বাস করার কথা বোঝাই না। আমরা যেটা নিশ্চিত করার কথা বলি তা হল, এই প্রাণিগুলো যেন কষ্ট না পায় এবং সেগুলোর উৎপাতে আমরাও যেন বিরক্ত না হই।”