Saturday, July 27, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদআফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহারের জন্য ‘ট্রাম্পদায়ী’

আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহারের জন্য ‘ট্রাম্পদায়ী’

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৭ এপ্রিল: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের বিশৃঙ্খল প্রত্যাহারের দায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকেই দিচ্ছে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।ওই প্রতিবেদনের ১২ পৃষ্ঠার এক সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বন্ধে ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে করা চুক্তিসহ সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাইডেনকে ‘মারাত্মক চাপে’ ফেলে দিয়েছিল।অবশ্য বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরও আগেই শুরু করা উচিত ছিল বলে ওই প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি।এর প্রত্যুত্তরে ট্রাম্প বলেছেন, হোয়াইট হাউজ ‘অপপ্রচারের খেলায়’ মেতেছে।২০২১ সালের অগাস্টে আফগানিস্তান থেকে ওই সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধের ইতি ঘটায়।

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিতে মার্কিন সেনাদের হ-য-ব-র-ল কর্মকাণ্ডের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ সেনা ও প্রায় দুইশ আফগানের প্রাণ যায়।যেসব সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের দিকে নিয়ে গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পেন্টাগন সেসবের পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার গোপনীয়তার সঙ্গে তা মার্কিন কংগ্রেসকে দিয়েছে।সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তদন্ত করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানরা কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রতিবেদনটি দেখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।প্রতিবেদনটি গোপনই থাকছে, তবে এর উপসংহারের একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘ইনপুট’সহ ওই সারসংক্ষেপটি তৈরি করেছে।পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থিত কাবুল সরকারের পতনকালে তালেবানের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করা বিপুল সংখ্যক মানুষ কাবুল বিমানবন্দরে হাজির হলে তুমুল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই ২৬ অগাস্ট বিমানবন্দরটিতে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৭০ আফগান ও ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হয়।কয়েকদিন পর যুক্তরাষ্ট্রও কাবুলে একটি ড্রোন হামলা চালায়। এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে ‘টার্গেট’ করে হামলাটি চালানো হয়েছে, পেন্টাগন প্রথমে এমনটি দাবি করলেও পরে ওই ড্রোন হামলায় ৭ শিশুসহ ১০ বেসামরিক নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করে তারা।ওই সেনা ও বেসামরিক প্রত্যাহারের কার্যক্রমে ব্রিটিশ সেনারাও সম্পৃক্ত ছিল, তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস পরে বলেন, সেসময় যুক্তরাজ্য ‘খুবই জটিল পরিস্থিতিতে’ পড়ে গিয়েছিল। 

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি আগের প্রশাসনকে দোষারোপ করে বলেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা-বেসামরিক সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা তারা পূর্বসূরী ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে পেয়েছেন।প্রতিবেদনে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘অবহেলা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ক্ষয়ের’ কথা বলা হয়েছে।এই শব্দগুলোর মাধ্যমে মূলত সেনা-বেসামরিক প্রত্যাহারের বছরখানেক আগে যুদ্ধ বন্ধে তালেবানদের সঙ্গে কাতারে চুক্তি, ট্রাম্পের মেয়াদে সেখান থেকে মার্কিন সেনা কমিয়ে নেওয়া, হাজার হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তি এবং আফগান মিত্রদের সরিয়ে নিতে ব্যবহৃত ভিসা কর্মসূচি সীমিত করার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে, বলেছেন কারবি।“প্রত্যাহার গুরুত্বপূর্ণ, এখান থেকে প্রথম এই শিক্ষাটাই নেওয়া যায়। নতুন প্রশাসনের এরকম একটি প্রত্যাহারে এর চেয়ে বেশি কিছু করার সামর্থ্য ছিল না,” প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ হাজির করার সময় বলেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

এর কয়েক ঘণ্টা পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ট্রাম্প। বলেন, “হোয়াইট হাউজের নির্বোধরা নতুন একটি অপপ্রচারের খেলায় মেতেছে, তারা আফগানিস্তানে তাদের চরম ব্যর্থ আত্মসমর্পণের দায়ও ‘ট্রাম্পের’ উপর চাপাতে চাইছে।”“এই ব্যর্থ আত্মসমর্পণের দায় কেবলই বাইডেনের, অন্য কারও নয়,” বলেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।কাবুলের পতনের পর বাইডেন প্রশাসনকে দেশে-বিদেশে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। অসংখ্য আফগান ও বিপুল সংখ্যক মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র ছেড়ে আসায় অনেকে সেসময় ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিলেন।   কারবি বলছেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে কিছু শিক্ষা হয়েছে, বিশেষ করে আফগান সরকারের আচমকা পতন সম্বন্ধে অনুমান করার ব্যর্থতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছু শিখেছে।এই শিক্ষা রাশিয়ার সেনা অভিযানের আগে ইউক্রেইনকে সহায়তায় মার্কিন নীতিতে প্রভাবও ফেলেছে, বলেছেন তিনি।যেভাবে প্রত্যাহার সম্পন্ন করা হয়েছে, তাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘দুঃখ পেয়েছেন’ কিনা তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র কারবি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য