Saturday, July 27, 2024
বাড়িখেলাকাতারে স্বপ্নের বিশ্বজয় আর্জেন্টিনার, ফ্রান্সকে পরাস্ত করে কাপ ছিনিয়ে নিল মেসিরা

কাতারে স্বপ্নের বিশ্বজয় আর্জেন্টিনার, ফ্রান্সকে পরাস্ত করে কাপ ছিনিয়ে নিল মেসিরা



দোহা, ১৮ ডিসেম্বর (হি.স.): নিজের শেষ বিশ্ব কাপ ম্যাচে অবশেষে ট্রফিটাতে হাত ছোঁয়ালেন ফুটবলের রাজপুত্তুর লিওনেল মেসি । কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ১২০ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে এক্সট্রা টাইম ছাপিয়ে পেনাল্টি শুটআউটের শেষে বিশ্ব কাপটা উঠল মেসির হাত । অতিরিক্ত সময়ে খেলার ফলাফল ছিল ৩-৩। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ফ্রান্সকে পরাস্ত করে স্বপ্নের সোনালী কাপ ছিনিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে মারাদোনার হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিয়ানরা। এরপর দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার পর স্বপ্নের জয় ।

রবিবার দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে বা প্রান্ত থেকে ক্রস করেন ডি মারিয়া। সেখান বল পেয়ে পাস দিলে না নিজের দখলে নেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস। ম্যাচের ৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। তবে তা আটকে দেন হুগো লরিস। এরপর ম্যাচের ৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ডি পল। তবে ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হলে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ফের গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ডান দিক থেকে পাস দেন ম্যাক অ্যালিস্টার। সেখান দারুণ ফিনিশিংয়ে বল ফ্রান্সের জালে জড়ান ডি মারিয়া। তার গোলে ম্যাচে ২-০ গোলের লিড পায় আর্জেন্টিনা। এর মাঝে একাধিকবার গোল করার সুযোগ পেলেও শেষপর্যন্ত কাঙ্খিত গোল আসেনি ফ্রান্স । শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

বিরতি থেকে ফিরেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৭৮ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা একাধিক গোলের সুযোগ পেলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর ম্যাচের ৭৯ মিনিটে কোলো মোনিকে বক্সে ফাউল করার কারণে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপ্পে। তার গোলে ম্যাচে ব্যবধান কমায় ফ্রান্স। এরপর ম্যাচের ৮২ মিনিটে ফের গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। কোম্যানের পাস থেকে দুর্দান্ত শটে বল আবারও জালে জড়ান এমবাপ্পে। তার জোড়া গোলে ম্যাচে সমতা আনে ফ্রান্স। এমবাপ্পের গোল সংখ্যা দাঁড়ায় ৭। এরপর একাধিক চেষ্টা করেও গোল করতে ব্যর্থ হয় দু’দল। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ফাইনাল ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই আর্জেন্টিনাকে আরেকবার এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি। ম্যাচের ১০৮ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনাকে ৩-২ গোলে লিড এনে দেয় লিওনেল। খেলার ১১৮ মিনিটের মাথায় ফের সমতা ফেরান এমবাপ্পে। পেনাল্টি থেকে জালে জড়িয়ে হ্যাট্রিক করেন তিনি। এবার খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারের প্রথম শট থেকে গোল করেন এমবাপ্পে। এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম শট থেকে গোল করেন মেসি। ফ্রান্সের পক্ষে কোম্যানের নেওয়া দ্বিতীয় শট রক্ষা করেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার পক্ষে দ্বিতীয় শট থেকে গোল করেন পাওলো দিবালা। এরপর ফ্রান্সের পক্ষে শট থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় চুয়ামেনি। তবে আর্জেন্টিনার পক্ষে তৃতীয় শট থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে আরও এগিয়ে নেন পারদেস। এরপর ফ্রান্সের পক্ষে চতুর্থ শট থেকে গোল করেন কোলো মোয়ানি। আর্জেন্টিনার পক্ষে চতুর্থ শট থেকে গোল করে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত করেন গঞ্জালো মন্টিয়েল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশকাপের শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা।

সেই সঙ্গে যাঁর হাতে কাপটা দেখবার জন্য সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষ অপেক্ষা করেছিল এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ কাপ জিতল আর্জেন্তিনা। মারাদোনার প্রয়াণের পর এটাই প্রথম বিশ্ব কাপ। আর সেই বিশ্ব কাপটা আর্জেন্তিনায় নিয়ে গিয়ে বেশ ভালভাবেই মারাদোনা প্রণাম জানালেন মেসি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। এই বিশ্ব কাপটা আজের্ন্তিনার তৃতীয় বিশ্ব কাপ। মারাদোনার পর মেসির হাতে উঠল। আসলে এবারের কাপটা যত না আর্জেন্তিনার, তার চেয়েও অনেক বেশি মেসির। ৩৫ বছরের জীবনে ফুটবল থেকে তিনি সব কিছুই পেয়ে গেলেন। কারন এটাই ছিল বিশ্ব কাপে তাঁর শেষ ম্যাচ। আর এবার বিশ্বকাপ জয়ে সাতটা ব্যালন দে ওর, চারটা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং একটা কোপা আমেরিকা পাশে তাঁর ক্যাবিনেটে ট্রফির বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল বলাই যায় ।



এই বিশ্বকাপে মেসির হাতে উঠল সোনার বল। কাতারে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করে দলকে জেতানোর নজির গড়েছেন তিনি। বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে দু’বার সোনার বল পাওয়ার রেকর্ডও নিজের নামে করে ফেললেন মেসি। মেসির থেকে একটি গোল বেশি করে বুট জিতে নিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ফাইনালে তাঁর অবিশ্বাস্য লড়াই মনে রাখবে বিশ্ব। তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে আটটি গোল। আর্জেন্টিনার তেকাঠির নিচে দাঁড়িয়ে বারবার গোল রুখে দিয়ে দলের ত্রাতা হয়ে ওঠা এমি মার্টিনেজের হাতে উঠল সোনার গ্লাভস। বিশ্বকাপের সেরা তরুণ তারকার শিরোপা জিতলেন এঞ্জো ফার্নান্দেজ (আর্জেন্টিনা) ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য