স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৮ জুলাই : সোমবার হয় পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। এন ডি এ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হা। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বিধানসভায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ত্রিপুরা বিধানসভার লেবিতে হয় ভোট। ত্রিপুরা থেকে ভোট দেওয়ার কথা ছিল ৬২ জন। এর মধ্যে ৬০ জন বিধায়ক।
এর মধ্যে ৩৬ জন বিধায়ক বিজেপি’র, ৮ জন সরকারের শরিক আই.পি.এফ.টি দলের বিধায়ক, ১৫ জন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সি পি আই এম এবং কংগ্রেসের একজন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। তবে শরিক দলের দুই বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা এবং মেবার কুমার জমাতিয়াকে ভোট দিতে আসতে দেখা যায়নি। রাজ্যের দুইজন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক ও রেবতী কুমার ত্রিপুরা ভোট দেন দিল্লির সাংসদ ভবনে। যদিও রাজ্যে ৬৩ জন ভোটার হওয়ার কথা। কিন্তু ৪ জুলাই রাজ্যসভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বিধায়ক হিসেবে ভোট দেন সোমবার। মুখ্যমন্ত্রী তথা বিধায়ক ডাঃ মানিক সাহা ভোট দিন বলেন, এ ডি এ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু জয়ী হবে তা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। কারণ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে চলেছে তাতে এ ডি এ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর কোন আশঙ্কা নেই। পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে ক্রুশ ভোট হবে না বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন, তিনি আশাবাদী দেশে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি পাবে। এবং নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সঠিকভাবে দেশের দায়-দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের উপর যাতে কোন ধরনের আচরণ না আসে এবং সংবিধান বাঁচিয়ে রাখতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন সুদীপ রায় বর্মন। দেশ নতুনভাবে শক্তি যোগিয়ে পথ চলা শুরু করবে বলে আশাবাদী।
আজকের দিনটা দেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। একজন জনজাতি মহিলাকে সংবিধানের গুরু দায়িত্ব পালন করার জন্য সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। সুতরাং এই ধরনের জনজাতি অভিজ্ঞ মহিলাকে এ ডি এ পার্থী হিসেবে নির্বাচিত করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই ভোট দানের পর উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মা।
এদিকে বেশ খোশ মেজাজে ভোট দিলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তবে বাম বিধায়ক ১৫ জন কি তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে ভোট দিয়েছেন কিনা বড় দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্রুশ ভোট হতে পারে বলে ধারণা। ভোট-গণনা হবে ২১ জুলাই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মু বনাম যশবন্ত সিন্হার লড়াইয়ে দেশের প্রায় ৪,৮০০ জন সাংসদ ও বিধায়ক ভোট দেবেন। বিজেপি নেতৃত্বের হিসাব অনুযায়ী, অঙ্কের নিরিখে এগিয়ে আছেন এন ডি এ-র মনোনীত প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। আর বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিন্হার জন্য লড়াইটা মতাদর্শের বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দ্রৌপদী মুর্মু মনে করছেন তিনি প্রার্থী হওয়ায় আদিবাসী ও মহিলাদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে দশ কোটি জনজাতির মানুষ রয়েছেন। আদিবাসীদের মধ্যে সাতশোর বেশি সম্প্রদায় রয়েছে। সকলেই মনোনয়নে আনন্দিত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে যশবন্ত সিন্হা প্রায় রোজই মুখ খুলে নিজের কথা বললেও মুর্মু প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হা গোটা দেশ জুড়ে প্রচার করেছেন। তিনি সব দলের কাছেই ভোট চেয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কোনও ব্যক্তির লড়াই নয়। মতাদর্শের লড়াই। তিনি দেশের গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে লড়ছেন। বিপরীত দিকে মুর্মুকে যাঁরা প্রার্থী করেছেন, তাঁরা রোজ গণতন্ত্রের উপরে হামলা চালাচ্ছেন।
২৫ জুলাই নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করবেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ জুলাই। ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ এই পদের জন্য বিহারের তৎকালীন রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেছিল বিজেপি। সে বছর ২১ জুলাই ভারতের চতুর্দশ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন রামনাথ কোবিন্দ। সেই সময়ে ৬৫.৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বিরোধী প্রার্থী তথা লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষা মীরা কুমারকে পরাজিত করেছিলেন রামনাথ কোবিন্দ। জয় নিয়ে আশাবাদী রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু ।