স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩১ অক্টোবর : সারা দেশে যদি আগুন লাগে তাহলে নিজের ঘরটাও রক্ষা করা যাবে না। এক জটিল ঠিকানায় দেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মানুষের আয়-উপার্জন নেই। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের সারিতে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই সরকারের সর্বনাশের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বুঝতে হবে লড়াই করলে কেউ হারে না। সমাজের সকল মানুষকে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। রবিবার স্টুডেন্ট হেলথ হোমে উমাপদ বর্মন ও অঞ্জলি বর্মন চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুঃস্হ এবং মেধাবী পড়ুয়াদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে এমনটাই অভিমত প্রকাশ করলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের জন্য আগামী দিনের বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। কারিকুলামের সমস্ত কিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় সংস্থার মালিকরা কারিকুলাম তৈরি করছে তাদের মুনাফা অর্জনের জন্য। অর্থাৎ ছোট্ট একটি অংশকে স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি একটি উদ্দেশ্য মূলক।
এবং এই শিক্ষানীতি মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেসরকারিকরণের দিকে চলে যাচ্ছে। এমনকি রাজ্য সরকার একই পথে হাঁটছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন বিগত সরকারের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল রাজ্যের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের জায়গায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই জায়গায় হাউসিং কমপ্লেক্স করতে চাইছে। সরকারের এ ধরনের নীতির ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় আঘাত নেমে আসছে। একইভাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে দুটি হাসপাতালে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী যাতে তৈরি করা যায় তার জন্য কলেজ গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু এগুলি বর্তমান সরকার শেষ করে দিতে চাইছে। জিবি হাসপাতালের কথা বললে এখন মানুষ ভয় পায়। গরু ছাগল বিক্রি করে মানুষ এখন বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে। মানুষের কোন পরিষেবা পায় না বলে হাসপাতলে আসছে না। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পুরোপুরি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। স্বাধীনতার পর যেগুলি গড়ে তোলা হয়েছিল সব শেষ করে দিচ্ছে সরকার। অতীতের স্মৃতিগুলি মুছে ফেলতে চাইছে। স্বাধীনতার পর যে স্মৃতিগুলি রাজ্য এবং দেশে ছিল সেগুলো মুছে দিতে চাইছে। তাই মানুষকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। পাশাপাশি তিনি এদিন রাজ্যে করোনা তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন রাজ্যে সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে যারা বহি রাজ্য থেকে ত্রিপুরায় আসবে তাদের ৪৮ ঘণ্টা আগে আর টি পি সি আর টেস্ট করাতে হবে। কিন্তু রাজ্যে সম্প্রতি দেখা গেছে করোনার নমুনা পরিক্ষা অনেকটাই কমে গেছে। পর্যাপ্ত নমুনা পরিক্ষা হচ্ছে না রাজ্য। রাজ্য সরকার এতদিন কোথায় ছিল, সরকার কি ঘুমিয়ে ছিল নাকি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যদি ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে নমুনা পরিক্ষা করা হলে রাজ্যে করোনা শনাক্তের হার বাড়বে। তাই করোনা নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
তবে এই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে শুভেচ্ছা জানান বিরোধী দলের নেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন এ ধরনের উদ্যোগ হলো সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। এমন উদ্যোগ আগামী দিনে সমাজের অন্যান্য মানুষদের আকৃষ্ট করবে।
এদিকে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এই টাস্ট সমাজের জন্য কাজ করে আসছে। ট্রাস্ট নিজের সাধ্যমত সমাজের ছাত্রছাত্রী এবং রোগীদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা ট্রাস্টের দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন যদি সমাজে কোন ছাত্র ছাত্রীর পরিবার দারিদ্র হয়ে থাকে তাহলে এর জন্য দায়ী ছাত্র-ছাত্রী এবং তার পিতা-মাতা নয়। এর জন্য দায়ী সমাজ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। এদিন অনুষ্ঠানে ৩৮ জন মেধাবী এবং গরীব ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।