Monday, February 10, 2025
বাড়িরাজ্যশপথ নিতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী, শপথ নিলেন তিন বিধায়ক

শপথ নিতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী, শপথ নিলেন তিন বিধায়ক

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৮ জুন : উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া তিন বিধায়ক এবং বিধায়িকা মঙ্গলবার শপথ গ্রহণ করেন। দ্বাদশ বিধানসভার নব নির্বাচিত সদস্য সদস্যা হিসাবে এদিন শপথ নেন। এদিন বিধানসভায় নব নির্বাচিত সদস্য- সদস্যাদের শপথ বাক্য পাঠ করান অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী। এদিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা, মন্ত্রী রতন লাল নাথ, মন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস, মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া, সাংসদ রেবতী কুমার ত্রিপুরা সহ একাধিক বিধায়ক এবং মেয়র দীপক মজুমদার সহ অন্যান্যরা।

গত ১৫ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন ডাঃ মানিক সাহা। এরপর উপ নির্বাচনের মাধ্যমে ৮ টাউন বড়দোয়ালী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তিনি। গত ২৩ জুন রাজ্যের চারটি আসনের উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ জুন ফল প্রকাশিত হয়। এদিন বিধায়ক হিসাবে শপথ নেন ৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজয়ী প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মণ, ৪৬ সুরমা কেন্দ্রের বিধায়িকা স্বপ্না দাস পাল এবং ৫৭ যুবরাজনগর কেন্দ্রের মলিনা দেবনাথ। অধ্যক্ষ একে একে সমস্ত সদস্য- সদস্যাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার শপথ গ্রহণ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী জানান মুখ্যমন্ত্রী একজন সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত। আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তাই এই দুটির মধ্যে একটি তাঁকে ছাড়তে হবে। সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে একজন সাংসদ বা বিধানসভার সদস্য হিসাবে ভোট দিতে পারবেন তিনি। তবে কোন পদে থেকে ভোট দেবেন তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে ডাঃ মানিক সাহাকে। বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর নির্দিষ্ট কোন সময়ের মধ্যে শপথ নিতে হয় না। আগামী অধিবেশনের আগে শপথ নিতে পারবেন তিনি। দুটি হাউজের জন্য নির্বাচিত হলে ১৪ দিনের মধ্যে একটি পদ তাঁকে ছারতে হবে। এই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। তবে ২৬ জুন ফল ঘোষণার দিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলে জানান অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা জানান বিষয়টি দলগত ভাবে আলোচনা হবে। পরবর্তী সময় সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত করা হবে সকলকে।

বিধায়ক হিসাবে শপথ গ্রহণের পর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার সঙ্গে সৌজন্য মূলক করমর্দন করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। বিধায়ক মেবার কুমার জমাতিয়ার সঙ্গে আলিঙ্গন করতে দেখা যায় তাঁকে। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন জানান, আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বসবাস করা জনগণের সমস্যা সমাধান করা যায় সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করবেন। সবার আগে জনগণের সমস্যা সমাধান করা এবং উন্নয়নমূলক কাজ করার দিকে বিগত দিনের মতো নজর থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

৪৬ সুরমা কেন্দ্র থেকে জয়ী বিধায়িকা স্বপ্না দাস পাল শপথ গ্রহণ শেষে জানান প্রথম বার পবিত্র বিধানসভার সদস্যা হিসাবে শপথ নিলেন। বিজেপি-র একনিষ্ঠ কার্যকরতা হিসাবে কাজ করে এই সাফল্য পেয়েছেন। তারজন্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয়, প্রদেশ নেতৃত্ব এবং মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যেই এই সাফল্য এসেছে।

৫৭ যুবরাজনগর কেন্দ্রের বিধায়িকা হিসাবে শপথ গ্রহণের পর নব নির্বাচিতা সদস্যা মলিনা দেবনাথ জানান উন্নয়ন হবে তার প্রধান লক্ষ্য। যুবরাজ নগরের উন্নয়ন ঘটানোই হবে প্রধান বিষয়। সংগঠনের সাথে দীর্ঘ সময় জড়িত। সেই সুবাদে বিধানসভার বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সঙ্গে রয়েছে আন্তরিক সম্পর্ক। তাদের সাথে হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবেন বলে জানান বিধায়িকা মলিনা দেবনাথ।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো উপনির্বাচনে শাসক দল বিজেপি চারটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে জয়ী হয়েছে। ফলে রাজ্য বিধানসভায় শাসক দলের সদস্য সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ -এ। কিন্তু দুই বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা এবং সুদীপ রায় বর্মনের ইস্তাফা, বিধায়ক আশিস দাসের দল বিরোধী কার্যকলাপ এবং অপর বিধায়ক যুবরাজ নগর কেন্দ্রের প্রয়াত হওয়ার পর শাসক বিরোধী উভয় দলের সদস্য সংখ্যা কমে গিয়েছিল। যদিও শাসক দলের সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট স্থানে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩৬ জন। কিন্তু বিরোধীদল সিপিআইএমের যুবরাজনগর কেন্দ্রটির হাতছাড়া হওয়ায় বিরোধীদল সিপিআইএমের একজন সদস্য কমে যায়। তবে ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দল খাতা খুলতে না পারলে উপনির্বাচনে খাতা খুলতে সফল হয়েছে। তৎকালীন বিজেপি থেকে টিকিট পেয়ে আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হওয়া সুদীপ রায় বর্মন উপনির্বাচনে একই কেন্দ্রে থেকে লড়াই করেছেন। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। শাসক দলের প্রার্থী ডাঃ অশোক সিনহাকে পরাজিত করে ২০২৩ -এ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা দিয়েছে বলা যায়। কিন্তু প্রধান বিরোধীদল সিপিআইএম উপনির্বাচনে কোন একটি আসনে জয়লাভ করতে না পেরে নিজেদের ভুল ত্রুটি নেই ইতিমধ্যেই পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। কারণ দীর্ঘ ২৯ বছরে বামেদের দখলে থাকা কেন্দ্র যুবরাজ নগর এবার হাতছাড়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকে যুবরাজ নগর কেন্দ্রটির নিয়ে অনেকটাই মনোবল ছিল সি.পি.আই.এম নেতৃবৃন্দের। কিন্তু কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়া মনোবলের উপর আঘাত নেমে এসেছে সিপিআইএমের।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য