Thursday, June 12, 2025
বাড়িরাজ্যসীমান্তে বাঁধ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা, ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষ, প্রশাসনিক দুর্বলতা...

সীমান্তে বাঁধ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা, ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষ, প্রশাসনিক দুর্বলতা বললেন বিরোধী দলনেতা, জেলাশাসক জনগণকে আতঙ্কিত না হতে আহ্বান জানান

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২১ মে :আসন্ন বর্ষার পাক মুহুর্তে বাংলাদেশ খাল বন্ধ করে দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে বিপাকে ফেলল বিলোনিয়া সীমান্তবর্তী বল্লামুখা গ্রামের মানুষকে। গত কয়েকদিন ধরে গোটা এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় জলমগ্ন হয়ে আছে। জলের নিচে মানুষের বাড়ি ঘর এবং কৃষিজ জমি। গত ১৯ মে স্যন্দন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হওয়ার পরেও প্রশাসন এবং সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে পরিদর্শনে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা পলিটব্যুরোর সদস্য জিতেন্দ্র চৌধুরী। সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন বিরোধী দলনেতা। এবং এই বাধ কবে নাগাদ গড়ে তোলা হয়েছে সে বিষয়ে অবগত হন।

 তারপর তিনি বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে আধিকারিকের সাথে কথা বলেন। পরে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মানুষের বাড়িঘর এবং জমি বাঁচাতে ভারতের সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে এই বাঁধ নির্মাণ করেছে। সবটাই দিনের আলোতে হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনরকম বাধা দেওয়া হয়নি। এটা সরকারের গাফিলতি, অবহেলা এবং ভুল। এটা কোনভাবেই বাঞ্চনীয় ছিল না। ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় যখন কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছিল তখন এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হলে ওপার থেকে বাংলাদেশের সেনারা ভারতের উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়তো। অথচ এখন তারা বেআইনিভাবে এত বড় বাঁধ নির্মাণ করে ফেলল অথচ রাজ্য প্রশাসন ও বিএসএফের পক্ষ থেকে কোনো রকম বাধা দেওয়া হয়নি। এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্বল্প বৃষ্টি হলেই মুহুরী নদীর জলের স্রোত এই বাঁধের জন্য আটকে যায়। যার ফলে বাংলাদেশের বাড়িঘর এবং জমি রক্ষা হয়, কিন্তু আমাদের এপারের অসহায় মানুষদের ফসল এবং বাড়ি ঘর সবকিছু নষ্ট হচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব ছিল যুদ্ধকালীন উদ্যোগ নেওয়ার। কারণ এটা সরকারের শুরু থেকেই এবং দুর্বলতা বলা যায়। তিনি আরো বলেন বিএসএফের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান এই বাধ নাকি আগে থেকে ছিল।

কিন্তু এই বাঁধ নতুনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। চোখের সামনেই এত বড় বাঁধ নির্মাণ করার পরে প্রশাসন চুপ করে বসে থাকা নিয়ে তিনি তাজ্জব হয়ে যান। সরকারের উচিত ছিল বাংলাদেশের এ ধরনের বেআইনি বাঁধের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার। তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন এই সমস্যা নিয়ে যদি ইতিমধ্যে তারা আওয়াজ না তুলে তাহলে তাদের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে এটা। তাদের মধ্যে অধিকাংশ পরিবার কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এমন হলে আগামী দিন তারা চাষাবাদ করতে পারবে না। বিরোধী দলনেতা আরো জানিয়েছেন দক্ষিণ ত্রিপুরার জেলার জেলাশাসক এবং রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন তিনি। অবিলম্বে এই বেআইনি বাঁধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয় তার জন্য দাবি জানানো হবে বলে জানান তিনি। জানা যায়, এই বাঁধের কারণে প্রায় পাঁচ শতাধিকের বেশি পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ বড় সমস্যায় পড়েছে। গত শনিবার রাতে টানা দুই ঘন্টার বৃষ্টিতে গোটা গ্রামে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সীমান্ত সংরক্ষিত ভূমিতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুক্তি অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ সরকার তাদের এলাকায় ভারতীয় সীমান্তের কোথাও ৫০ গজ আবার কোথাও ১০ গজেরও কম এলাকায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন দীর্ঘ এক থেকে দেড় কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করার সময় হঠাৎ গ্রামবাসী প্রত্যক্ষ করে যে বাঁধের কোথাও জল যাওয়ার রাস্তা রাখা হয়নি। আগে যে খাল ছিল তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাবাসীরা যেখানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুক্তি ছিল কোন দেশ সীমান্তে কিছু করতে গেলে তা সীমান্তের পিলার থেকে দেড়শো গজ দূরে করতে হয়। তা না করে বাংলাদেশের এই বাঁধ নির্মাণ করে নিয়েছে। এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করছে এলাকার জনগণ। দাবি তুলছে অতিসত্বর বাংলাদেশ সরকার আগের জায়গায় খাল খুলে বাঁধ ভেঙে দেওয়ার জন্য, নতুবা ভারতীয় ভূখণ্ডে আই সি নগর ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় নতুন খাল তৈরীর করার দাবি উঠেছে। এদিকে আজকে বিরোধী দলনেতার সাথে পরিদর্শনে ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক সুধন দাস, বিধায়ক অশোক মিত্র এবং বিধায়ক দীপঙ্কর সেন সহ সিপিআইএমের একটি প্রতিনিধি দল।

এদিকে বুধবার দুপুরে দক্ষিণ জেলা শাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে সাংবাদিক সম্মেলন করে দক্ষিণ জেলা শাসক মোহাম্মদ সাজাদ পি জানান, বিলোনিয়া মহকুমার সুকান্ত নগর গ্ৰাম পঞ্চায়েত ও আইসি নগর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সীমান্তবর্তী বল্লামুখা এলাকার বাংলাদেশের বাঁধ নিয়ে জনগণকে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলা প্রশাসন জগগনের পাশে আছে। এলাকায় যাতে জল প্লাবন না হয় সেই ভাবে কাজ করে যাচ্ছে জল সম্পদ দপ্তর। আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা শাসক আরো জানান, গত দুই দিন ধরে রাজ্যের অন্যান্য জেলা চাইতে দক্ষিণ জেলাতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে কাঁটাতার সীমান্তবর্তী বল্লামুখা এলাকা। এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর এলাকা থেকে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্ৰহন করার ফলে এলাকা থেকে জলস্তর কমে। জল মগ্ন যাতে না হয় সেই ব্যাবস্থা নিয়ে কাজ চলছে বলেন জেলা শাসক। এই দিনের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা শাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা শাসক ও জেল জলসম্পদ দপ্তরের আধিকারিক।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!