আগরতলা, ১৮ মে (হি.স.) : পুলিশ আধিকারিককে ‘স্যার’-এর বদলে ‘দাদা’ সম্বোধন করায় বিপদ ডেকে এনেছে সাংবাদিকের। পরিণামে জমিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করে রাতভর থানার লকআপে, সাথে কিল, চড়, লাথি, ঘুষি, এমন-কি মাটিতে ফেলে বুকের উপর পুলিশের বুটের আঘাত সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। ত্রিপুরায় সাংবাদিককে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিগ্রহের ঘটনায় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সমস্ত অংশের জনগণ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকালে আগরতলা প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা পূর্ব আগরতলা থানা ঘেরাও করেন। পরবর্তীতে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরের বাইরে গিয়ে তাঁরা ধরনায় বসেন। দাবি, অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের অপসারণ এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ সাংবাদিকদের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিককে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিগৃহীত সাংবাদিককে আজ পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছিল। আদালত পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পূর্ব আগরতলা থানার ওসি এবং কলেজ টিলা ফাঁড়ি ইনচার্জের বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট তলব করেছে।
অভিযোগ, মঙ্গলবার গভীর রাতে আগরতলার রাধানগর পেট্রোল পাম্পে দীর্ঘ লাইনের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন সাংবাদিক নিতাই দে। ওই সময় কলেজটিলা ফাঁড়ির ইনচার্জ অরিন্দম রায় পদের অপব্যবহার করে তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। অপরাধ কী, সে বিষয়ে কিছুই না জানিয়ে তাঁকে পূর্ব আগরতলা থানায় নিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড মারধর করেন তিনি।
সাংবাদিক নিতাই-এর অভিযোগ, তাঁকে জোর করে মদ্যপান করানো হয়েছে। পরে আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়েছে পুলিশ। তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশ নগদ টাকা ও জিনিসপত্র তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে। এদিকে জমিনযোগ্য ধারায় তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও রাতভর নিতাই-কে পূর্ব আগরতলা থানার লকআপে রাখা হয়েছিল।
নিতাই জানিয়েছেন, শুধু কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মেরেই থেমে থাকেননি পুলিশ অফিসার, তাঁকে মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে বুকে আঘাত করা হয়েছে। এদিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাংবাদিক মহলে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আগরতলা প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে সাংবাদিকরা পূর্ব আগরতলা থানা ঘেরাও করেন আজ। আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক প্রণব সরকার, সহ-সভাপতি অরুণ নাথ সহ বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। এতে সাংবাদিক নিতাই-কে গতকাল রাতে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। সম্পূর্ণ আইনি পদ্ধতি মেনে তাঁকে গ্রেফতার করা এবং জামিন দেওয়া হয়নি, স্বীকার করেছেন কলেজ টিলা ফাঁড়ির ইনচার্জ অরিন্দম রায়।
সামগ্রিক বিষয় জানার পর সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন আরও বেড়ে যায়। এদিকে থানায় পৌঁছে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ দাস সাংবাদিক নিতাই দে-কে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু, আদালত থেকেই তাঁর জামিন নেওয়া হবে বলে পুলিশকে সাফ জানান বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা। এর পরই তাঁরা পুলিশের সদর দফতরের সামনে গিয়ে গতরাতে সংগঠিত ঘটনার প্রতিবাদে ধরনায় বসেন। আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক প্রণব সরকার বলেন, সাংবাদিক নিতাই দে পুলিশি জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাঁকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে থানায় আটকে মারধর করা হয়েছে। দোষী পুলিশ আধিকারিকের বরখাস্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থার দাবিতে আমরা ধরনায় বসেছি। ত্রিপুরায় সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় সমস্ত রাজনৈতিক দলও মাঠে নেমে পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিজেপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। এছাড়া, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পর ত্রিপুরা পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) ধরনায় অবস্থানকারী সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন, সন্ধ্যার মধ্যেই অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হবে।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলস্বরূপ, কলেজ টিলা ফাঁড়ির ইনচার্জ অরিন্দম রায়-কে বরখাস্ত করা হয়েছে।এক আদেশনামায় পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার বিজে রেড্ডি লিখেছেন, ইন্সপেক্টর অরিন্দম রায়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হবে। কর্তব্য পালনে মারাত্মক গাফিলতির জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।
অন্যদিকে পুলিশ আজ সাংবাদিক নিতাই দে-কে আদালতে সোপর্দ করেছিল। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে এবং পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারকে পূর্ব আগরতলা থানার ওসি এবং কলেজ টিলা ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।