Sunday, April 20, 2025
বাড়িরাজ্যশহর নাকাবন্দী করে টিএসএফের আন্দোলন, জনদুর্ভোগ চরমে, প্রশ্রয় দিল সরকার, বিধানসভা অধিবেশনে...

শহর নাকাবন্দী করে টিএসএফের আন্দোলন, জনদুর্ভোগ চরমে, প্রশ্রয় দিল সরকার, বিধানসভা অধিবেশনে যেতে বিপাকে পড়লেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, দাঁড়িয়ে নমুনা দেখল পুলিশ

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২১ মার্চ :  গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করার প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে আন্দোলন করার অধিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাউকে দেওয়া হয়নি। জনজাতি অংশের ছাত্র-ছাত্রীদের মূল দাবি ককবরক ভাষাকে রোমান হরফের সুযোগ দেওয়া। এই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা লড়াই করে চলেছে আঞ্চলিক দলগুলি এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ও যুব সংগঠন গুলি। পূবর্তন সরকার এবং বর্তমান সরকার তাদের দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে চলেছে।

 গত ১৭ মার্চ ককবরক ভাষার পরীক্ষার পর টিএসএফ -এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদে ডেপুটেশন প্রদান করেছে। এর মধ্যে শুক্রবার থেকে ত্রিপুরা বিধানসভা অধিবেশন। পরিকল্পিতভাবে সরকারের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সকাল থেকেই রাজধানীর ভিআইপি রোড এবং জিবি হাসপাতালে যাওয়ার প্রধান রাস্তা আটকে রাখে টিএসএফ -এর কর্মী সমর্থকরা। মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এদিন বিধানসভা অধিবেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কুঞ্জবন এলাকায় গিয়ে অবরোধের কারণে এগোতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এসকট নিয়ে ঘোরপথে গেলেন। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা আটকে রাখার ফলে গোটা শহর নাকাবন্দি হয়ে পড়ে। জিবি হাসপাতালে পৌঁছাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় অ্যাম্বুলেন্সের। কারণ এই রাস্তা দিয়ে প্রতি কয়েক মিনিট অন্তর অন্তর অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে জিবি হাসপাতাল পৌঁছায়। বিশেষ করে রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা থেকে অ্যাম্বুলেন্স জিবি হাসপাতালে পৌঁছাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়। এমনকি বহু রোগীকে আইজিএম হাসপাতালে পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ সার্কিট হাউজ এলাকায় টিএসএফ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানীর বটতলা থেকে শুরু করে বড়জলা রোড, পোস্ট অফিস চৌমুহনি, উত্তর গেট রোড, আইজিএম চৌমুহনী, অভয়নগর রোড নাকা বন্দী হয়ে পড়ে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করার জন্য তিল পরিমাণ জায়গা পর্যন্ত ছিল না।

যারা বিমান যাত্রী ছিলেন তারাও সঠিক সময় মত বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা পর অলি গলির পথ ধরে মানুষ অফিস, আদালত ও বিমানবন্দরে যেতে পেরেছে। এবং এদিন প্রত্যেক অফিসে সরকারি কাজ প্রায় দু তিন ঘন্টা আটকে যায়। একদিকে যেমন মানুষের সময় ব্যয় হয়েছে, অপরদিকে এদিনের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ তীব্র নিন্দা করেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ছিঃ ছিঃ করেছে। কারণ অফিসের সময় যদি এ ধরনের আন্দোলন প্রধান সড়কের মধ্যে চলে তাহলে সাধারণ মানুষের কতটা নাজেহাল হতে হয় সেটা হয়তো বর্তমান সরকার প্রধানের অভিজ্ঞতার বাইরে। কারণ সরকারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের আন্দোলন করার প্রশ্রয় পেয়েছে। নাহলে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে তাদের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া কোন ভাবেই কঠিন বিষয় ছিল না।

কিন্তু প্রশাসন সেটা করতে পারল না। এ ধরনের ঘটনা হয়তো টিপল ইঞ্জিন জামানায় রাজ্যের মানুষের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। গণতান্ত্রিকভাবে টি এস এফ -এর আন্দোলন বিধানসভার সামনেও করা যেত, কিন্ত সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে এ ধরনের আন্দোলনের কোন প্রশংসা হয় না সাধারণ মানুষের কাছে। আরো বলা যায় বর্তমানে আন্দোলন করার অন্যতম একটি প্রধান জায়গা হয়ে গেছে রাজধানীর সার্কিট হাউস এলাকা। পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হোক কিংবা নাইবা হোক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি রাজভবন অভিযান, সড়ক বন্ধ সহ বিভিন্ন আন্দোলনের নাম করে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে গোটা শহরকে নাকাবন্দি করছে। অথচ সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব জানেন ত্রিপুরা হাইকোর্ট, জিবি হাসপাতাল, এমবি বিমান বন্দর, আর্ট কলেজ, বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়ার প্রধান সড়ক হল ভিআইপি রোড। সরকারের দুর্বলতায় প্রশাসনকে কাঠপুতুল বানিয়ে এই ভিআইপি রোডকে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের স্বার্থে। সাধারণ মানুষের কাছে এটা ভালো নজরে আসছে না। এমনটাই গুঞ্জন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য