স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১৭ জানুয়ারি : মুখ্যমন্ত্রী পবিত্র বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কর্মসংস্থান নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। শুক্রবার ছাত্র-যুব ভবনে ডিওআইএফআই এবং টি ওয়াই এফের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই অভিযোগটি তুলেছেন ডি ওয়াই এফ আই রাজ্য সম্পাদক নবারুণ দেব। তিনি বলেন ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নেশার বিরুদ্ধে, কর্মসংস্থানের দাবিতে ডি.ওয়াই.এফ.আই-র কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেই কর্মসূচি এখনো চলছে।
এই সময়ের মধ্যে ১৪ টি মহকুমায় ২৮ টি পদযাত্রা সংগঠিত করা হয়েছে। ২২ জানুয়ারির মধ্যে আরও ৬ টি মহকুমায় ৮ টি পদযাত্রা সংগঠিত করা হবে। সমগ্র রাজ্যের ছোট বড় ও মাঝারি প্রায় ১০০ টি বাজারে সভা সংগঠিত করা হয়েছে। ডি.ওয়াই.এফ.আই-র কর্মসূচিতে সাধারন মানুষের ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হয়েছে। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই কর্মসূচি দ্বিতীয় ধাপে চলবে। তারপর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তৃতীয় ধাপে আবার এই কর্মসূচি চলবে। এবং বাম যুব সংগঠন এই নেশার বিরুদ্ধে যখন কথা বলছে তখন শাসক দলের কিছু নেতা কর্মী ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় বাম যুব সংগঠনের কর্মী সমর্থকরা আন্দোলনের ঝড় তুলে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নেশা মুক্ত ত্রিপুরার স্লোগান তুলেছিলেন।
কিন্তু ২০২৫ সালের বিধানসভা অধিবেশনের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা প্রতিবেদন পেশ করে তথ্য দিচ্ছেন নেশা সাগরের ভাসছে ত্রিপুরা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ২৬৯৭ জন নেশা কারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে একজনও নেই নেশার বাদশা এবং নেশার সাম্রাজ্যের পরিচালনা কারী। সুতরাং নেশার বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান চলছে রাজ্যে। তিনি আরো অভিযোগ তুলে বলেন, মোহনপুর এবং ধনপুরে এত পরিমাণে গাঁজা চাষ হওয়ার পরেও কোন ধরনের অভিযান নেই। শুধু তাই নয় বিধানসভার মতো একটি পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করছেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে গেলে ইউডিসি -র গাইডলাইন অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের অনুপাত ২৫ঃ১ থেকে কমিয়ে ২০ঃ১ করার প্রয়োজন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলছেন এই অনুপাত ৬০ঃ১ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের জলন্ত মিথ্যাচারে অবাক করেছে রাজ্যবাসীকে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন রাজ্যে পিএইচডি, নেট, স্লেট পাশ করা যুবক-যুবতীদের সংখ্যা হল ২০০০ এর অধিক। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলছেন কলেজগুলিতে বারোশো ত্রিশ জন অধ্যাপক থাকার প্রয়োজন।
কিন্তু ২০১৯ সালে বর্তমান সরকার বিধানসভায় বলেছিল ২২ টি সাধারণ ডিগ্রী কলেজের জন্য কলেজ গুলিতে অধ্যাপককে সংখ্যা থাকার প্রয়োজন ১৩৯০ জন। কিন্তু তারপর রাজ্যে কলেজের সংখ্যা বেড়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর এমন হিসেবে বোঝা যায় পরিকল্পিতভাবে রাজ্যের শূন্য পদ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবং লক্ষ্য করে দেখা যায় রাজ্যের ২৫ টি সাধারণ ডিগ্রী কলেজে অধ্যাপক রয়েছেন ৭৮৭ জন। তারপর হিসেব করে দেখা যাচ্ছে ১১০ জনে একজন অধ্যাপক রয়েছে রাজ্য সাধারণ ডিগ্রী কলেজ গুলির মধ্যে। ফলে পরীক্ষায় বসে ৯০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী অকৃতকার্য হচ্ছে। তারপর ইচ্ছা করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। এরপরই সরকার সকলকে পাশ করিয়ে দিচ্ছে। বর্তমান সরকারের এবং মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের কার্যকলাপ তীব্র নিন্দনীয় বলে জানেন তিনি। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে আর বলেন এ ধরনের প্রতারণা ছেড়ে যাতে সরকার মানবিক দৃষ্টিতে রাজ্যের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। একই সাথে সভাপতি পলাশ ভৌমিক দাবি করেন রাজ্যে অর্ধ লক্ষাধিক শূন্যপদ পড়ে আছে। সরকারের নিয়োগের কোন উদ্যোগ নেই। সরকার ব্যস্ত আছে খেলা, মেলা এবং জলসা নিয়ে। পাশাপাশি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব কুমার দেবকে কামান দেগে বলেন, তিনি গোটা রাজ্যে ঘুরে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে উঠে পড়ে লেগেছে। এভাবেই সরকারকে তুলে ধরে বললেন বাম যুব সংগঠন ডি ওয়াই এফ আই এবং টি ওয়াই এফ।