Saturday, January 25, 2025
বাড়িরাজ্যবাড়ি ফিরলেও মানুষের আত্মনার্দ, নিঃস্ব চারিদিক

বাড়ি ফিরলেও মানুষের আত্মনার্দ, নিঃস্ব চারিদিক

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩১ আগস্ট : সোনালী ফসলের কৃষি জমি গুলির কঙ্কালসার চেহারা। বসত ঘর ভেঙে মাটির সাথে মিশে আছে। লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির বহর নিয়ে দিশেহারা ব্যবসায়ীরা। এ বন্যা চেলাগাঙের কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সকলকেই এক মহাবিপর্যয়ের মুখাপেক্ষী করে দাঁড় করিয়েছে। জানা যায়, গোমতী জেলার করবুক মহকুমার কৃষি প্রধান গ্রাম চেলাগাঙ। গ্রামের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের সাথে যুক্ত।

সর্বদা সবুজ শাকসবজিতে ভরপুর থাকা চেনা চেলাগাঙ আজ বদলে গিয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত কৃষি প্রধান চেলাগাঙ গ্রামটি। সুভাষ কলোনি, লেলিন কলোনি, মহাদেব পাড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মালোমকোয়া, সমতল পাড়া প্রভৃতি জনপদ গুলি বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। চেলাগাঙ বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী প্রমোদ সাহা জানান, ১৯৮৩ সালের বন্যায় চেলাগাঙ বাজারে পায়ের গোড়ালি সমান জল হয়েছিল। তাতে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। তবে এবারের বন্যায় বাজারের প্রায় সব ব্যবসায়ী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বাজারের উপর ৮-১০ হাত জল জমে ছিল। ব্যবসায়ী বিপুল সাহা জানান, বন্যার জলে প্লাবিত হয়ে লেলিন কলোনিতে বহু মানুষ বাড়িঘরে আটকে পড়েছিল। বাজারের কয়েকজন মিলে নৌকা করে তাদেরকে উদ্ধারের কাজে হাত লাগান। এরই মধ্যে হঠাৎ করে বাজারের বন্যার জলস্তর বৃদ্ধি হতে শুরু হওয়ায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করবেন।

চোখের নিমিষেই দোকানে অঠাই জল। লক্ষ লক্ষ টাকার মাল জলের নিচে চলে গেছে। কিছুই রক্ষা করা যায়নি বলে আক্ষেপ করেন ব্যবসায়ী বিপুল সাহা। বন্যার জল নেমে আসার পর থেকে পচা গন্ধে চেলাগাঙ বাজার বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। রোদে শুকিয়ে কিছু সামগ্রী বিক্রয় যোগ্য করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কিছু ব্যবসায়ী। কৃষি প্রদান চেলাগাঙে ভয়ংকরী বন্যার ফলে কৃষিজ জমিগুলির যে দুরবস্থা হয়েছে তা আর ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কৃষক বাবুল চন্দ্র দাস জানান, ধানের জমি, ঝিঙ্গা ক্ষেত সব জলের নিচে চলে গেল। ঘাম ঝরানো বহু কষ্টের সোনালী ফসল চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখেও কিছু করার মতো ছিল না।

এমনকি বাড়িতে সংরক্ষিত করে রাখা ফসল ও বিভিন্ন রকমের বীজ বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে। আগামী দিনের সংসার প্রতিপালন করার জন্য কিভাবে কি করবেন তাই এখন বুঝে উঠতে পারছেন না ওই এলাকার কৃষকরা। আদৌ সরকার কৃষকদের পাশে কিভাবে থাকবেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। বন্যায় চেলাগাঙের বহু পরিবার আজ গৃহহীন। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করায় এলাকায় মাটির ঘরের সংখ্যা বেশি। কিন্তু বন্যায় এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ মাটির ঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেছে। ঘরের কোন চিহ্ন নেই। শুধুমাত্র টিনের ছাউনি গুলি মাটির সাথে লেগে থেকে ঘরের চিহ্ন বহন করছে। ঘরের ভেতরে থাকা বহু মূল্যবান জিনিসপত্র ঘরের সাথে মাটিতে মিশে গেছে। ভয়াবহ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে কোনরকমে প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল মানুষজন। বন্যার জল নামার পর তারা শিবির থেকে বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করলেও তাদের কাছে মাথা গোজার জায়গাটি আজ নেই।

তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার এক নিমিষে বন্যার জল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তা তারা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। পরিস্থিতির শিকার হয়ে তারা ত্রান শিবিরে আশ্রয় নিয়ে সরকারের যত সামান্য সহযোগিতা ও বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার দ্বারা দেওয়া ত্রাণে কোনরকম বেঁচে আছে। কিন্তু আগামী দিনে তারা কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। সরকার কিংবা প্রশাসনের নিকট ক্ষতিপূরণের দাবী জানানো হলেও সরকার কতটুকু মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টা দেখবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে জানান বন্যা দুর্গতরা। তবে সরকার যদি সঠিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবেই চেলাগাঙ এর কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সকলে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য