Monday, September 16, 2024
বাড়িরাজ্যরাজ্যে ভারী বর্ষণের ফলে বন্যায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে,...

রাজ্যে ভারী বর্ষণের ফলে বন্যায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, সর্বদলীয় বৈঠক করে সহযোগিতা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৪ আগস্ট : ভারী বৃষ্টির জেরে ত্রিপুরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের নীচে। তৈরি হয়েছে বন্যার পরিস্থিতি। বন্যার ফলে রাজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষের প্রান গিয়েছে। বন্যার কারনে বাড়ি ছাড়া বহু মানুষ। পরিস্থিতি এতটা খারাপ পর্যায়ে পৌছায় যার কারনে উদ্ধার কাজে নামানো হয় বায়ু সেনার দুইটি হেলিকপ্টার। তার সাথে এনডিআরএফ, আসাম রাইফেল, এসডিআরএফ, টিএসআর জওয়ান সকলে উদ্ধারের কাজে হাত লাগায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান শিবিরে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শনিবার সর্ব দলীয় বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা।

 স্টেট গেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। বৈঠকে বিজেপি, সিপিআইএম, কংগ্রেস, তিপ্রা মথা, আইপিএফটি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব পিকে চক্রবর্তী, রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেস পাণ্ডে সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা। বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা জানান ১৯ আগস্ট থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যে পরিমাণ বৃষ্টি ত্রিপুরা রাজ্যে হয়েছে তা ত্রিপুরাবাসী কোনদিন দেখে নি। যার কারনে ত্রিপুরা রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সাথে সাথে তিনি হেলিকপ্টার, এনডিআরএফ জওয়ান প্রেরন করেছেন। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গোমতী নদীর জলস্তর এখনো বিপদ সীমার উপর বইছে। এখনো পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুইজন নিখোঁজ ও দুইজন আহত হয়েছে। মৃত ২৪ জনের মধ্যে ভূমি ধ্বসে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ঘর ভেঙ্গে পরে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এইদিনের সর্ব দলীয় বৈঠকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন। সকলে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সকলে এক হয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জানান।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা বৈঠকে ভালো মতামত দিয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। বন্যার কারনে যে সকল ছাত্র-ছাত্রীর বই নষ্ট হয়ে গেছে, তাদেরকে দ্রুত বই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য শিক্ষা দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যে ৫৫৬ টি ত্রান শিবির খোলা হয়েছে। বন্যায় ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন লাইন ডিপার্টমেন্টের কর্মীরা দিবারাত্রি ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। ১ হাজার ৬০৩ টি বিদ্যুৎ-এর খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ৫০১ টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। দুইটি সাব স্টেশন ড্যামেজ হয়ে গেছে। সর্ব দলীয় বৈঠকে বিষয় গুলি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও জানান ত্রিপুরা রাজ্যে এখনো পর্যন্ত ২ হাজার ৫৮৮ টি জায়গায় ভূমি ধ্বস হয়েছে। ২ হাজার ৩২৪ টি জায়গা থেকে মাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। এই কাজে ১৫৩ টি জেসিবি কাজে লাগানো হয়েছে। বহু জায়গায় রাস্তা খারাপ হয়ে গেছে। ২ হাজার ৬৬ টি জায়গায় রাস্তা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় ইতিমধ্যে রাস্তা সারাই করা হয়েছে। প্রায় ২০০ জন ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছে। রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন। যাতে করে কোন অবস্থায় মূল্য বৃদ্ধি না হয়। জ্বালানী, খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বর্তমানে রাজ্যে মজুত রয়েছে। সবদিকে নজর রাখা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার খাবারের প্যাকেট বন্যা দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এখনো খাবারের প্যাকেট বিতরণের কাজ চলছে। এইদিনের সর্বদলীয় বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। মৃত ২৪ জনের পরিবারকে এক কালিন ৪ লক্ষ টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি আহতদের আড়াই লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে।

সর্ব দলীয় বৈঠক শেষে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন বন্যা দুর্গত মানুষদের খাবার দিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে বাচিয়ে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা দুর্গত মানুষ গুলি যেন বাড়িতে ফিরে যেতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করার বিষয়ে বৈঠকে দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস কুমার সাহা জানান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এইদিন সর্ব দলীয় বৈঠক করা হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট সহায়তার দাবি জানানোর জন্য। পাশাপাশি জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরে সর্ব দলীয় কমিটি গঠন করে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করার দাবি জানানো হয়েছে। এইদিনের বৈঠকে কংগ্রেস, সিপিআইএম ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও তাদের মতামত তুলে ধরেন। তবে সকলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে যেন কোন ধরনের রাজনৈতিক রং দেখা না হয়। দলের উপরে উঠে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করার পক্ষে মতামত দেন সকলে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য