Sunday, September 8, 2024
বাড়িরাজ্যআতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গন্ডাছড়ার সর্বহারা মানুষ, অভাব অনটন গ্রাস করেছে তাদের

আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গন্ডাছড়ার সর্বহারা মানুষ, অভাব অনটন গ্রাস করেছে তাদের

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৬ জুলাই :আতঙ্ক, অনাহার সবকিছু গ্রাস করে ফেলেছে গন্ডাছড়ার ৩০ কার্ড সহ আশেপাশের গ্রাম। সর্বহারা মানুষ চাইছে মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেতে। মুখ্যমন্ত্রী সবকিছু সরজমিনে গিয়ে দেখুক কেমন আছে তারা! প্রতি মুহূর্ত যেন তাদের কাছে এক আতঙ্কের কারণ। নেই নিরাপত্তা, নেই ঘরে খাবার, সব হারিয়ে জীবনে বাঁচা মরা আজ সমান হয়ে গেছে গোটা গ্রামের। নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নেই কোন ক্যাম্প।

 বাড়িতে পরিবারকে ফেলে যেতে পারছে না গৃহকর্তারা কাজের সন্ধানে। আর কাজে সন্ধানে গেলেও মিলছে না কোন কাজ। কারণ সব দিকে যেন এক শ্মশান ভূমি পরিণত হয়ে আছে। তার মধ্যে আবার মিলেনি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ পরিবারের সরকারি আর্থিক সহযোগিতা। এই অভিযোগগুলি তুলে ধরেছেন গোটা গ্রামবাসী। তাদের বক্তব্য গত ১২ জুলাই রাতে একদল দুষ্কৃতিকারী গ্রামের বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চালায়। তাতে করে হরিপুর, ত্রিশ কার্ড, দুর্গাপুর গ্রামের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রামবাসীরা জানান ১২ জুলাই সন্ধ্যা রাতের ঘটনা মনে পড়লে আজও তাদের শরীর শিউরে উঠে। এদিন দুষ্কৃতিকারীরা একে একে ১৭ টি পরিবারের বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয়। তাছাড়া বাকি আরো ৩৫ টি পরিবারের বাড়ি ঘর, দোকানপাট লুটপাট করে নিয়ে যায়।

 এমন অবস্থায় বর্তমানে ৩৫ পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। তারা তাদের ভিটামাটি রক্ষা করতে সারারাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছে‌। এইভাবে দিনের পর দিন পুরুষ লোকেরা রাতে পাহারা দেয় আর দিনে ঘুমায়। ঘর থেকে বের হলে কাজ মিলছে না। ঘরে ভাত রান্না করার সরঞ্জাম পর্যন্ত নেই। গ্রামবাসী একসাথে কান্না করে কাগজের মধ্যে নিয়ে ভাত খাচ্ছে। এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার বই খাতা সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। এক ব্যবসায়ী জানায় তার দোকান থেকে নগদ চল্লিশ হাজার টাকা সহ ফ্রিজ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে লুটপাট কারীরা। এক মহিলা জানান বন্ধন থেকে ঋণ নিয়ে একটি দোকান খুলেছিলেন সংসার পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু এই দোকানটি পুরোপুরি ভাবে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এই সর্বহহারা মানুষ করে আজ বলছে অবিলম্বে সিআরপিএফ এর ক্যাম্প স্থাপন না করা হলে তারা সেখানে বেঁচে থাকতে পারবে না। কারণ তারা গ্রামে বেঁচে থাকার মত কোন সাহস পর্যন্ত পাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো গ্রামের ১৭ টি পরিবার উচ্ছেদ হয়ে গেছে বলে জানান। স্বাভাবিকভাবেই তাদের পক্ষে  দিনের বেলা কাজকর্ম করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায় এসব পরিবার গুলো গন্ডাছড়া মহকুমা শাসকের নিকট ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়নি তাদের। এমনটাই তাদের অভিযোগ। এলাকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে ৩০ কার্ড গ্রামে অতি দ্রুত সিআরপিএফ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান। এছাড়া  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে না আসায় এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আশা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু ভালো মনের মানুষ এলাকার এই করুন চিত্র দেখতে তিনি আসবেন। কিন্তু তাদের আশা আশাই রয়ে গেল। তবে সরকারপক্ষের দাবি গন্ডাছড়ায় এখনো মোতায়েন রয়েছে নিরাপত্তা কর্মী। ছন্দে ফিরেছে গন্ডাছড়া। সবকিছুই স্বাভাবিক। অশান্তি নেই গন্ডাছড়ায়। তাহলে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়া তারা কারা? শ্মশানপুরীতে বসে আত্মনার্দ করা মানুষগুলির কথা শুনবে কে? ১৯৮০ দাঙ্গাতেও এ ধরনের দৃশ্য তারা দেখে নি। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না প্রশাসন যদি চাইত তাহলে যুবক মারা যাওয়ার পর ১৬৩ ধারা কঠোরভাবে লাগু করতে পারত। এবং গোয়েন্দা শাখাকে কাজে লাগিয়ে সে নির্দিষ্ট অংশের মানুষের আভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা জেনে সেখানে দুপুর থেকে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল তখন পুলিশ যদি কঠোরভাবে ভূমিকা নিয়ে লাঠিচার্জ, জল কামান, কাদান গ্যাস এগুলি দ্বারা শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করত তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। অনভিজ্ঞ আধিকারিক দ্বারা দায়িত্ব খালাস করতে গিয়ে পুলিশকে কাঠপুতুল বানিয়ে সবকিছুই পুলিশের সামনে ঘটেছে। তবে কেউ কেউ মনে করছে, সেদিনের ঘটনার জন্য দায়ী গন্ডাছড়া মহকুমা পুলিশ। কারণ যে আনন্দ মেলা বসানো হয়েছিল, তার অনুমোদন দেওয়ার আগে সেখানকার পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরী ছিল পুলিশ প্রশাসনের। সার্বিকভাবে দেখতে গেলে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ কর্মীদের নিষ্কর্মা কার্যকলাপের কারণে আজ শ্মশান পুরীতে পরিণত হয়েছে গন্ডাছড়া।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য