স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১৬ জুন : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রচয়িতা। কিন্তু গত বছর আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সংস্কারপন্থীরা কট্টর মৌলবাদী রূপ ধারণ করে। মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংস্কারপন্থীদের কাছে জাতীয় সংগীতের গুরুত্ব অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর এবারে আক্রান্ত হলেন বঙ্গদেশের সেই বিখ্যাত জাতীয় সংগীত এ আমার সোনার বাংলা, সোনার বাংলাদেশ এর স্রষ্ঠা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়ি। ঘটনার সূত্রপাত গত ৮ জুন। ঈদের ছুটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়িতে ভ্রমণ করতে গেলে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে পার্কিং ফী নিয়ে এক কর্মচারীর ঝগড়া বাধে। একটা সময়ে সেটা হাতাহাতির রূপ নেয়।
দর্শনার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠে তখন। সেদিনকার সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ জুন শাহজাদপুর উপজেলার সাধারণ মানুষ একটি ব্যানারে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শামিল হয়। স্থানীয়রা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেই সময়ে উত্তেজিত সাধারণ মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়িতে সঙ্গবদ্ধ আক্রমণ চালায়। অডিটোরিয়াম এর দরজা, জানালা, অফিস রুম সহ বেশ কিছু জায়গায় তারা ভাঙচুর চালায়। তারা সেখানকার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মারধর করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। কম করেও ৪০ থেকে ৫০ জন দুষ্কৃতকারী এদিন এই আক্রমণ সংগঠিত করে। এই বিষয় নিয়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ভারতবর্ষের মধ্যে। এই দেশের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মর্যাদার যোগ্য। উনার সম্মানের উপর কোন ধরনের আঘাত বরদাস্ত করবে না ভারতবাসী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাসভবনে বর্বরোচিত আক্রমণের প্রতিবাদে ১২ জুন বিকেলে প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাক দিয়েছিল প্রদেশ বিজেপি। কিন্তু আমেদাবাদে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার পর সেই কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। সোমবার পুনরায় কর্মসূচি ডাক দিয়ে আগরতলা বাংলাদেশ ভিসা অফিস অভিযান শুরু করে প্রদেশ বিজেপি। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান থেকে শুরু হয় এই প্রতিবাদ মিছিল। ভিসা অফিস সংলগ্ন এলাকায় গেলে বেরিকেট দিয়ে মিছিল রুখে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু বেরিকেট ভেঙে মিছিল এগিয়ে যায় প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তথা সংসদ রাজীব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে।
তারপর রাস্তা অবরোধ করে ভিসা অফিসের সামনে তীব্র আন্দোলন সংঘটিত করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুগামীরা। প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার। সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য বলেন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেখানে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর আঘাত নামে আনা হচ্ছে। তার সঙ্গে গত কয়েকদিন আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে আক্রমণ করেছে। এর দ্বারা বোঝা যায় না এটা কেমন সরকার? তারা মানুষ হত্যাকারী সরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সংসদ। তিনি বলেন, বিশ্বকবির উপর যে পৈচাশিক আক্রমণ করে বাংলাদেশ অপমান করেছে সেটা হিন্দুস্তান কখনো বরদাস্ত করবে না। এর জন্য প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। আরো বলেন এই ঘটনার পর এখন পর্যন্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে নি। এর ধিক্কার জানান সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য। এদিনের কর্মসূচিতে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ বিজেপি সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক, প্রাক্তন মন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস, প্রদেশ যুব মোর্চার সভাপতি সুশান্ত দেব, প্রদেশ মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মিমি মজুমদার সহ অন্যান্যরা।