Sunday, September 8, 2024
বাড়িরাজ্যজিবি হাসপাতালে ডাক্তারদের হাতে আক্রান্ত মৃত রোগীর পরিবার, সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত...

জিবি হাসপাতালে ডাক্তারদের হাতে আক্রান্ত মৃত রোগীর পরিবার, সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করলেন রোগীর পরিবার পরিজন

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২০ জুলাই :  কলঙ্ক মুছতে পারল না জিবি হাসপাতাল। এবার সরাসরি গুন্ডাগিরিতে নাম লেখালো জিবি হাসপাতালের কিছু ডাক্তাররা। কতটা নগ্ন শিক্ষায় শিক্ষিত হলে রাজ্যের একটি প্রধান রেফারেল হাসপাতালে রোগীর পরিবারকে পুলিশের সামনে বেধড়ক মার খেতে হয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অভিযোগ উঠেছে শুক্রবার রাতে জিবি হাসপাতালের মৃত রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে।

জানা যায়, শারীরিক সমস্যা নিয়ে সুনিত কুমার ভৌমিক নামে এক ব্যক্তিকে জিবি হাসপাতালের আই সি ইউ -তে ভর্তি করানো হয়েছে। গত কয়েকদিনে আড়াই থেকে তিন লক্ষাধিক টাকার ঔষধ ক্রয় করে দিলেও রোগী সুস্থ হয়ে উঠে নি। শুক্রবার কোন এক সময় রোগীর মৃত্যু হয়। জিবি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল এক বৃদ্ধ রোগী। শুক্রবার বিকালে হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঐ রোগীর পরিবারের লোকজনদের জানিয়ে দেন রোগীর অবস্থা ভালো নয়। যে কোন সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে ঐ রোগী। যথারীতি রোগীর পরিবারের লোকজন আইসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করছিল। রাতের বেলায় আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ছিল চিকিৎসকরা।

রোগীর পরিবারের লোকজন বহুবার আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসকদের নিকট আবেদন জানায় দুই মিনিটের জন্য তাদের রোগীকে দেখতে দেওয়া হোক। কিন্তু রোগীর পরিবারের লোকজনদের রোগীকে দেখতে দেওয়া হয় নি। রাত সাড়ে দশটার নাগাদ রোগীর পরিবারের লোকজনদের ফোন করে জানানো হয় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সাথে সাথে রোগীর পরিবারের লোকজন আইসিইউ ওয়ার্ডে ছুটে যায়। রোগীর পরিবারের লোকজন মৃতদেহ দেখার পর কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পরে। তবে চিকিৎসকদের সাথে কোন ধরনের ঝামেলা হয় নি। পরে আবার এই বিষয়ে সিনিয়র ডাক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে ডাক্তার আগরতলা মেডিকেল কলেজের প্রায় শতাধিক জুনিয়র ডাক্তারকে নিয়ে এসে পুলিশের সামনেই বেধড়ক মারধর করে রোগীর পরিবারের অঙ্কিতা ভৌমিক, সুমিত ভৌমিক, সৈকত ভৌমিক সহ অন্যান্যদের। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জুনিয়র ডাক্তারদের হাত থেকে এদের রেহাই পায়নি মহিলারা পর্যন্ত।

তারপর অসহায় রোগের পরিবার মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে। সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হয়ে তারা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, আইসিও -র নামে প্রধান রেফারেল হাসপাতালে একটি ব্যবসা সৃষ্টি হয়ে আছে। রোগীর জন্য ক্রয় করে দেওয়া ঔষধ সঠিকভাবে রোগীকে না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে খোলা বাজারে। তারা আরো জানান, আই সি ইউ -র মধ্যে সঠিকভাবে পরিষেবা না দিয়ে ডাক্তার এবং নার্সরা ঘুমিয়ে থাকছে কিংবা তারা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে দাবি জানান অবশ্যই যেন আই সি ও -র মধ্যে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি হাসপাতালে গুন্ডাগিরির শিকার হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করেন মৃত রোগীর পরিবার। সূত্রে খবর জিবি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশ প্রায়ই রাতের বেলা হোস্টেলের মধ্যে মাতাল হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাখে। যার রেশ পড়ল এই রোগী পরিবারের উপর। এর জবাব কে দেবে? জিবি হাসপাতাল তো খবরের শিরোনামে আগে থেকেই রয়েছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সিকিউরিটি গার্ডদের চূড়ান্ত গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের এক গর্ভধারিণী মায়ের পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটির রিপোর্ট সামনে আসার আগেই আবারো হাসপাতালে পরিষেবার পরিচয় দিল কিছু ডাক্তাররা। যারা আগামীদিনে মানুষের জীবন মরণ নির্ণয় করবে। প্রশ্ন হল তাহলে তাদের হাতেই কি রাজ্যের ভবিষ্যৎ? তবে তাদের এই শিক্ষা কারা দিচ্ছে? নিশ্চয়ই জিবি হাসপাতালের কিছু সিনিয়র ডাক্তার এই শিক্ষা দিচ্ছেন। শুক্রবার রাতে রোগীর পরিবার যদি কোন ধরনের উৎশৃঙ্খলতা করে থাকে তাহলে সেটা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারতো কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই জায়গায় জুনিয়র ডাক্তারদের আইসিওতে ডেকে এনে রোগীর পরিবারকে মারধর করার মত গুন্ডাগিরি করার অধিকার কে দিয়েছে সেসব ডাক্তারদের? এ বিষয়টি নিয়ে এখন দেখার হাসপাতালের চিকিৎসকরা মুখ খোলে কিনা? নাকি বিষয়টি নিয়ে আবারো সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে ধাপা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, এমনটাই গুঞ্জন হাসপাতাল চত্বরে সৃষ্টি হয়েছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য