স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ জুলাই : দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যে কোনো পথ দুর্ঘটনায় গাড়ির ধাক্কায় কোনো গাড়ির চালক যদি কাউকে মেরে ফেলেন তাহলে আদালতে আইনিভাবে সেই চালকের কোনো ধরনের সাজা হয় না। আর হলেও তা নামমাত্র। অতি সামান্য সাজা। এই ধারণায় কোনো যান দুর্ঘটনায় কেউ মরে গেলেও চালাকরা সেই রকম ভয় পেতেন না।
কিন্তু সোমবার সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এমন এক ঐতিহাসিক রায়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। যান চালকদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে। বাস গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়েছিলেন এক তরতাজা যুবক। সেই অপরাধে বাস গাড়ির চালকের দশ বছরের সাজা ঘোষণা হল সোমবার। বিশ্রামগঞ্জ পুষ্করবাড়ী এলাকায় গত ২০১৫ সালের ২২ জুন সমীর বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে গাড়ির চাপা দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে গাড়ির চালক জীবন কৃষ্ণ দেবনাথকে দীর্ঘ ৯ বছর পর ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড সহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায় এবং আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিলো সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ২০১৫ সালের ২২ জুন আগরতলার পূর্ব প্রতাপগড়ের বাসিন্দা সমীর বিশ্বাস তাঁর সহদর্মিনীকে নিয়ে মেলাঘর থেকে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। বিশ্রামগঞ্জ পুষ্করবাড়ী এলাকায় আসা মাত্রই অপর দিক থেকে আগরতলা থেকে উদপুরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে TR01A1297 নাম্বার একটি বাস গাড়ি সমীর বিশ্বাসের স্কুটিকে স্বজোরে ধাক্কা মারে। সেই বাস গাড়িটি সমীর বিশ্বাসকে গাড়ির চাকার নিচে পিষে অনেকটা দৌড় নিয়ে একটি বোলেরো গাড়ির সাথে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় স্কুটি চালক সমীর বিশ্বাসের ।
পরবর্তী সময়ে সমীর বিশ্বাসের শশুর রবীন্দ্র বিশ্বাস বিশ্রামগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা হাতে নিয়ে বিশ্রামগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনার দিনই চালক জীবনকৃষ্ণ দেবনাথকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে ৩০৪ এর দুই ধারায় মামলা গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে বিশ্রামগঞ্জ থানার পুলিশ। সেই মামলায় দীর্ঘ ৯ বছর পর অভিযুক্ত বাস গাড়ির চালক জীবনকৃষ্ণ দেবনাথকে সোমবার দুপুরে বিশালগড় মহকুমা আদালতের বিচারপতি দেবাশীষ কর ১০ বছরের কারাদন্ডের সাজা ঘোষণা করেন। সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এই যুগান্তকারী রায় এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মামলার বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।