Monday, January 13, 2025
বাড়িরাজ্যরবিবার সকালে রীতি-নীতি মেনে শুরু হল সম্প্রীতির উৎসব খার্চি পূজা

রবিবার সকালে রীতি-নীতি মেনে শুরু হল সম্প্রীতির উৎসব খার্চি পূজা

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৪ জুলাই : রাজ্যের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব খার্চি পূজা। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে শুক্লাষ্টমী তিথিতে চিরা চরিত প্রথা অনুযায়ী চৌদ্দ দেবতার বিগ্রহ গুলিকে মন্দির থেকে বের করে মন্দিরে পুজো করা হয়। ১৭৬০ সালে খয়েরপুর পুরাতন আগরতলায় চতুর্দশ দেবতা মন্দিরে খার্চি পূজা শুরু হয়। এ বছর ২৬৫ বছর হয়েছে খার্চি পূজা। তারপর ১৯৮৪ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে এই উৎসবের দায়িত্ব নেয় সরকার। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে শুক্রাষ্টমী তিথিতে হাভেলির চতুর্দশ দেবতা বাড়িতে এই পূজা শুরু হয়।

একইভাবে রবিবার সকাল ৫ টায়৪৫ মিনিটে স্নান যাত্রার পর সাড়ে সাতটার নাগাদ পূজা শুরু হয়। উলুধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি, ধুপ ধুপ মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রচুর ভক্তরা মঙ্গল কামনায় দেব দেবীকে দর্শন করতে হাজির হয়। সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব ঘিরে পুরাতন হাভেলি উৎসবের রূপ নেয়। পরে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সকাল সাড়ে ১১ টায় মেলা ও প্রদর্শন এর সূচনা হয়। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী রাম পদ জামাতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়ক রতন চক্রবর্তী। মেলার শুভ উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এবছর খার্চি পূজার থিম হল “সবুজায়ন।”

এ ধরনের থিম রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ প্রকাশ করে নির্ণয় করা হয়েছে। রাজন্য শাসিত আমলে প্রকৃতির প্রতি রাজাদের ভালোবাসা ছিল অন্যতম। সেদিকে বিচার করে এ ধরনের থিম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কারণ প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক না থাকলে অস্তিত্ব বলীন হয়ে যাবে। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারও সেই দিশায় চলছে। এই পূজা বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন অষ্টধাতুর তৈরি তিনটি মূর্তির পূজা সব সময় হয়। শুধুমাত্র বছরে এই একটা সময় সবগুলোই মূর্তি পূজা করা হয়। এই পরম্পরা তখনই রক্ষা করা যাবে যখন আমাদের পরবর্তী জন্ম কে এ বিষয়ে অবগত করা যাবে। এই মেলা দিয়ে জাতি ও জনজাতি সব অংশের মানুষের মধ্যে আরও বেশি মেলবন্ধন হবে। এদিকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমার জানিয়েছেন এই ঐতিহাসিক মেলার শান্তি ও ঐক্যবদ্ধতা বজায় রাখতে ৫ কোম্পানি টিএসআর জওয়ান, দুই শতাধিক পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন মানুষ পুরোপুরি নিরাপত্তার সাথে এই পূজা ও মেলা উপভোগ করতে পারবে। অপরদিকে মেলা কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক রতন চক্রবর্তী সকলকে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সকলকে নিজেদের মূল্যবান সামগ্রীর প্রতি নজর রাখার জন্য বলেন। তিনি আরও জানান গত বছরের তুলনায় এই বছর মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আগে এই পূজা ছিল জন জাতিদের। এখন এই পূজা হয়েছে সার্বজনীন।

মহারাজের আমল থেকে চলে আসা এই ঐতিহ্যবাহী পূজায় বহু মানুষের সমাগম ঘটে। ত্রিপুরায় রাজার আমল থেকে এই পূজা শুরু হয়েছে। এরপর পরম্পরায় মানুষ এই পূজায় সমবেত হচ্ছেন। এই পূজার প্রধান পুরোহিত চিন্তাই। উনার নাম দুর্গা মানিক দেববর্মা। তিনি এই পূজার সূচনা করেন প্রতিবছর। রাজ্যের মহারাজা কৃষ্ণ মানিক্যের সময় ১৭৬১-১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে পাথরের মস্তকের পরিবর্তে ধাতু তৈরি ১৪ টি মস্তক নির্মাণ করে পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রবিবার সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে হাজির হয় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। মন্দির চত্বরে সামিল হয় জাতি জনজাতি সব অংশের মানুষ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য