স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ জুলাই : সারাদেশে সাথে সোমবার ত্রিপুরার পশ্চিম জেলাতেও লাগু হয়েছে তিনটি ফৌজদারি আইন। ভারতীয় দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর আইনের পরিবর্তে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন বা IEC-এর জায়গায় ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম– এই তিন বিকল্প আইনে লাগু হয়েছে। পুরনো আইনগুলি দীর্ঘ ১০০ থেকে ১২০ বছর পুরনো ছিল। মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই আইন গুলি তৈরি করা হয়েছে। এ তিনটি আইন তৈরি করার পেছনে মূলত কারণ হলো বর্তমান সময়ে যেসমস্ত ঘটনা দেশে সংঘটিত হচ্ছে সেই ঘটনাগুলি সুষ্ঠু ন্যায় অনুযায়ী আইন গুলি ছিল না।
যার কারণে বর্তমান ঘটনাবলীর উপর গুরুত্ব দিয়ে আইন গুলি তৈরি করা হয়েছে। কারণ লক্ষ্য করা গেছে গত কয়েক বছরে যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করতে গিয়ে পুরনো আইন গুলির জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। তাই বর্তমান ঘটনা বলি উপর নির্ভর করে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন লাগু করা হয়েছে। আইন লাগু করার আগে চার বছর আলোচনা হয়েছে। তারপর বিচারপতি, আইনজীবী সহ বিভিন্ন অংশের বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এই আইন কার্যকর করেছে সরকার। পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে যাতে পুলিশ প্রশাসন তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থাপনা এ আইনগুলির মধ্যে রয়েছে। সোমবার পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার। তিনি বলেন, নয়া আইন অনুযায়ী পুলিশির তদন্তে ক্ষেত্রে বা যেকোনো তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের ক্ষেত্রে ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে সময়সীমা ১৪ দিন থেকে বাড়িয়ে ৪০ দিন করা হয়েছে। আগের আইন অনুযায়ী একেবারে পুলিশ হেফাজত থেকে জেল হেফাজত হলো পুনরায় পুলিশি হেফাজতে নেওয়া যেত না, নতুন আইন অনুযায়ী তদন্তকারী সংস্থা চাইলে ৪০ দিন সময়সীমার মধ্যে যতবার ইচ্ছে জেল হেফাজত থেকে পুলিশ হেফাজতে নিতে পারবে। আগের বিবাহ গোপন করে যদি নতুন কাউকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেই ক্ষেত্রে মেয়াদ ন্যূনতম দশ বছর, সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন। সন্ত্রাসবাদে যুক্ত ও অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে প্যারোলের কোন সুযোগ থাকছে না। সাক্ষীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা আইন অনুযায়ী ৩৫ সাব সেকশন ৭ অনুযায়ী গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে।
সঙ্ঘবদ্ধভাবে পাঁচজন বা তার অধিক ব্যক্তি কোন ঘটনা ঘটালে বা হত্যা সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ১২ বছর বা তার নিচে কোন নাবালিকাকে ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। পুলিশি তদন্তের সময়সীমাও নির্দিষ্টভাবে বেধে দেওয়া হয়েছে। পণ ঘটিত কারণে কোন মহিলার মৃত্যু হলে নূন্যতম সাজা সাত বছর এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রয়েছে নয়া আইনে। সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধে ক্ষেত্রে কেউ মারা গেলে ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকার জরিমানা ও মৃত্যুদন্ডের সুপারিশ রাখা হয়েছে। গাড়ি চালকের অসতর্কতায় কোন ব্যক্তির মৃত্যু হল দুই থেকে পাঁচ বছরের জেল হতে পারে। ছিনতাই ঘটনায় জরিমানার পাশাপাশি তিন বছরে জেল রাখা হয়েছে। তদন্তের সময় পুলিশকে বয়ান নথিভুক্ত করে সেটিকে তদন্তকারী সংস্থা চাইলে বিচার প্রক্রিয়ায় প্রামান্য নথি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক আরও জানান, আইন গুলি যাতে সঠিকভাবে কার্যকর হয় তার জন্য ইতিমধ্যে ৪ হাজারের অধিক সরকারী কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ দিনের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার কিরণ কুমার কে।