Tuesday, December 3, 2024
বাড়িরাজ্যরাত ঘনালেই আগরতলা বাইপাসে ফেন্সি আনলোডিং!

রাত ঘনালেই আগরতলা বাইপাসে ফেন্সি আনলোডিং!

স্যন্দন প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ এপ্রিল।। ভোটে যখন কেন্দ্রীয় বাহিনী বা রাজ্যের নিরাপত্তা কর্মীরা নিরাপদে বা ভয় মুক্ত পরিবেশে ভোট করতে ব্যস্ত তখন ফেন্সি কারবারিদের তৎপরতা বেড়েছে। ফেন্সি আনলোডিং-এর জন্য আগরতলা বাইপাস সড়ক এখন ফেন্সি কারবারিদের নিরাপদ জায়গা । গভীররাতে আমতলী বাইপাস সড়কের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন যুবকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । তাদের নজরদারিতে ছোট ছোট গাড়িতে নেশা সামগ্রী বোঝাই করা হয়। গভীর রাতে গাড়ির আনাগোনা বেড়ে যায়। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে। তাদের কাজ শুধু নজর রাখা। অথচ বাইপাসের রেলব্রীজের কাছে বা শ্রীনগর থানার দিকে যাওয়ার রাস্তার মোড়ে বাইক থামিয়ে বিট কনস্টেবলদের ঘাপটি মেরে বসে থাকতে চোখে পড়ে ।

সেখানে নেই কোন কেন্দ্রীয় বাহিনী। আবার থাকলেও নিরাপদে গালিগুলোকে চলে যেতে দেওয়া হয়। আর গভীর রাতে নাকা পয়েন্টে তেমন নজরদারি থাকে না। নাকা পয়েন্টে থাকা অস্থায়ী ছাউনিতে ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে ক্লান্ত কর্মীরা। আর তার সুযোগ নিচ্ছে নেশা কারবারিরা। গভীর রাতে আমতলী বাইপাস সড়কে বড় বড় লরি থেকে আনলোড হয় ফেন্সি।

তারপর ছোট গাড়িতে করে ফেন্সি পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়। রাতে আমতলী থানার নাকের ঢগা দিয়ে পাচার হয় ফেন্সি । পুলিশ ব্যবস্থা নেবার বদলে উল্টো রাস্তা পরিস্কারে সাহায্য করে বলেই অভিযোগ। অনেক সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ কর্মীরা। তাদের চোখের সামনে দিয়ে রাতের অন্ধকারে ছোট গাড়িতে করে ফেন্সি পাচার হয়। সামনেইভোট। আরক্ষা দপ্তর যখন ভোট নিয়ে ব্যস্ত তখন পোয়াবারো নেশা কারবারিদের।

আগরতলা শহরের মধ্যে বাধারঘাট সহ সন্নিহিত এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফেন্সির গোডাউন। মাঝে মধ্যে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে পুলিশের অভিযান হয় বটে তারপর সব চুপচাপ। বাধারঘাটের ফেন্সি গোদাম থেকেও ছোট গাড়িতে করে ফেন্সি পাচার হয়। আবার খয়েরপুর থেকেও আমতলী বাইপাস সড়ক ধরে পাচার হয় নেশা সামগ্রী। রাজ্যে এখন নেশা কারবারিদের পোয়াবারো। পুলিশ সব জেনেও নীরব। মাঝে মধ্যে অস্তিত্বের জানান দেওয়া ছাড়া আর কোন ভূমিকা নেই পুলিশ কর্মীদের। এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ। আজ থেকে গত দুই বছর আগে শেষ অভিযান করে পুলিশ। এমনকি বাধারঘাটের মার্কফেডের গোদামে অভিযানের পর কেটে গেছে দুই বছর। তারপর আর অভিযান হয়নি। এখন ভোট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফেন্সি পাচারকারীরা নিজেদের পকেটের শ্রীবৃদ্ধি করতেই ব্যস্ত। রাতে যখন শহর নিঝুম, শুনশান, মানুষ ঘুমোচ্ছে তখন ফেন্সি ব্যাপারিদের মুল ব্যবসা শুরু হয় বাধারঘাটের কিছু গোদামে। ভোট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আবার ফেন্সিতে ভরে উঠছে। রাতেই আসে ফেন্সির চালান, আবার রাতেই আনলোড হয়ে চলে যায় সীমান্ত এলাকায়। গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে তখন ফেন্সির চালান নিয়ে গাড়িগুলো সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। আমতলী থানার সামনে দিয়ে প্রতিদিন গভীর রাতে ফেন্সির চালান সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। বরং একাংশ পুলিশ। কর্মী রাস্তায় ওভারটাইম খেটে ফেন্সির চালান সীমান্তে নিয়ে যেতে সহায়তা করে বলে অভিযোগ। রাতে বাইপাসে ফেন্সি বোঝাই

চালান আনলোড করতে দেখছেন গভীর রাতে বাড়ি ফেরত অনেক মানুষ। একেই বলে কারোর পৌষ মাস আবার কারোর সর্বনাশ। ফেন্সি পাচারের পাশাপাশি বহুমূল্য নেশাকারবারীদের ও পোয়াবারো। একদিকে আগরতলা শহর ভাসছে নেশার সাগরে অন্যদিকে প্রশাসনের কোন হেলদোল নেই। যুব সমাজ নেশার অতলে নিমজ্জিত।

প্রতিটি পাড়ায়, প্রতি মহল্লায় এখননেশার ঠেক। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে টিনেজাররা নেশায় আসক্ত হচ্ছে। সিরিঞ্জ ব্যবহার করে ড্রাগস নেওয়া কারণে এইডস রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ও এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। নেশার তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কথা ভেবে আতঙ্কিত। বিভিন্ন গোপন জায়গায় গড়ে উঠেছে নেশা দ্রব্যের গোডাউন। সরকার পরিবর্তনের নেশা মাফিয়াদের রঙ পরিবর্তন হয়েছে। ইদানিং কিছু নব্য নেশাব্যাপারি বিভিন্ন জায়গায় মাথা তুলছে। তারাই পুলিশকে ম্যানেজ করার দায়িত্বে। একাংশ পুলিশের পকেটে টুপাইস পৌঁছে দিলে সব

কিছুই সম্ভব। শহর দক্ষিণাঞ্চলের বাধারঘাট সহ আশপাশ এলাকায় শাসক দলের কিছু নেতার নেশা বাণিজ্য হাতখড়ি হয়েছে। তারাই এখন সামনের সারিতে। আর পিকু, সোমেন, উত্তমদের মতো পুরনো নেশা ব্যাপারিরা তাদের সাথে পেরে উঠছেনা। বাধারঘাটের কিছু যুবক এখন নেশা ব্যবসায় নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে। তাতে কামাই একেবারে মন্দ নয়। ফলে

নতুনদের সাথে পুরনোদের দূরত্ব বাড়ছে, বাড়ছে শত্রুতা। এক গ্রুপের গোপন খবর পুলিশকে দিয়ে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করলেও তাতে যে সংঘাত অনিবার্য তা বলাই বাহুল্য ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য