স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ ফেব্রুয়ারি : এ সরকারের মেয়াদ আর এক বছর। ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার রাজ্যে আর ফিরে আসবে না। একটি আসনেও ভারতীয় জনতা পার্টিকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না। দিল্লি থেকে রাজ্যে পা রেখে কংগ্রেস ভবনের সামনে অভিনন্দন অনুষ্ঠানে একথা বললেন বিদ্রোহী সুদীপ রায় বর্মন। গত চার বছর ধরে রাজ্যের মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। আইন শাসন বলতে কিছু নেই। পুলিশের উপর থেকে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
কারণ যারা মার খাচ্ছে তাদেরই পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে অনেক বাধা বিপত্তি পরেও চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যপরিষেবা সঠিকভাবে পায়। ত্রিপুরায় কোন উন্নত চিকিৎসক আসতে না চাইলে তাদের আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। মানুষের জন্য যখন কাজ করতে চাইলেন তখন ঈর্ষা করা হয়েছে। এতে কোন আক্ষেপ নেই। মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে দুবার ডেকে মন্ত্রিত্ব পদ দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেই মন্ত্রিত্বের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে নিজের চার বছরের কথা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন সুদীপ রায় বর্মন। তিনি বলেন, রাজ্যে যখন চিকিৎসকরাই নিরাপদ নয়, মার খেতে হয়, তখন এসকট নিয়ে মন্ত্রীরা ঘুরে আর কি করবেন। তাই তিনি এসকট প্রত্যাহার করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন মন্ত্রী বিধায়ক থেকে শুরু করে কারোর কোনো ক্ষমতা নেই এ রাজ্যের বর্তমান সরকারের আমলে।
মন্ত্রীদের কথা অফিসাররা শুনেন না। এক ব্যক্তি দ্বারা চলছে রাজ্য। একদলীয় ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান এদিন। রাজ্যের মানুষকে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্যে নামিদামী হাসপাতাল আনা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি। মানুষকে ঠকিয়েছে তারা। মানুষের সাথে প্রতারণা করে প্রতিশ্রুতি প্রতারণার দলিল করে তুলেছে। রাজ্যের চাকুরিচ্যুত ১০,৩২৩ তো মানুষ! চাকুরি হারিয়ে তারা কিভাবে বেঁচে আছেন, সংসার পরিচালনা করছেন, কোন খবর টুকু পর্যন্ত সরকার নেয় নি। সরকার তাদের জন্য অর্থ উপার্জনের কোনো ব্যবস্থাও করে নি। সম্পূর্ণ একটা ঠকবাজ সরকার বলে জানান তিনি। সুদীপ রায় বর্মন আরো বলেন, দুর্নীতি বর্তমান সরকারের আমলে চরম আকার ধারণ করেছে। জে আর বি টি গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে ফলাফল দ্রুত প্রকাশ না করার পেছনে মূলত কারণ হলো লিখিত পরীক্ষার তালিকায় ৭৫ শতাংশ যুবক-যুবতী বহিঃরাজ্য থেকে স্থান পেয়েছে। মন্ডল থেকে শুরু করে শাসকদলের নেতৃত্ব টাকা নিয়ে এখন বেকাদায় পড়েছে। তাই ফলাফল ঘোষণা করতে পারছে না। তাই দাবি জানানো হচ্ছে দ্রুত যাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আরো বলেন কলেজগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। কিন্তু নেট স্লেট পাশ করা বেকার যুবক যুবতী রাজ্যে থাকার পরেও তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে নার্সের অভাব। প্রশিক্ষিত যুবক-যুবতী রাজ্যে বেকার হয়ে থাকলেও তাদের কথা কেউ শুনছে না। বাইরের ছেলে মেয়েদের রাজ্যে এনে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে চাকরি দিচ্ছে। কিন্তু বেকারদের আত্মনার্দ কেউ শুনছে না। বেকারদের সাথে প্রতারণা করেছে এ সরকার। মিসকল বাবারও দেখা নেই রাজ্যে। আবার বলছে রাজ্যে নাকি আই টি হাব করা হবে। কিন্তু এগুলি এখন আর বেকারদের মন পর্শ করছে না। রাজ্যে নেশা অবাধে চলছে। গাঁজা ক্ষেত নষ্ট করে লোক দেখানো হচ্ছে। শাসক দলের নেতা নেশা সামগ্রী বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বানাচ্ছে। এদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মানুষের কাজ নেই। আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মজুরি বাড়ছে না। এগুলি সরকারের ভাববার সময় নেই। এভাবে রাজ্য চলতে দেওয়া যায় না। মানুষ তাদের মুখ্য জবাব দেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন সুদীপ রায় বর্মন। শ্রী বর্মন আরও বলেন ভিলেজ কমিটির নির্বাচন সঠিক সময়ে হয়নি।
কাজকর্ম লাটে উঠেছে। তিপ্রা মথার নেতা প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ষড়যন্ত্র করে এডিসি ভেঙ্গে দখল করার প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু কংগ্রেস জনজাতিদের বোকা বানাতে চায় না। কংগ্রেস এডিসি জনজাতিদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। সুদীপ রায় বর্মন বলেন বহির রাজ্যের ঠিকাদার এনে কাজ করছে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে আধিকারিকেরা। দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। বহির্রাজ্যের ঠিকাদারদের এনে কাজ করতে গিয়ে তারা নয়া কৌশল অবলম্বন করছে। ৪০-৫০ শতাংশের অধিক টার্ন ওভার দেখানো হচ্ছে বহির্রাজ্যের ঠিকাদারদের। রাজ্যে এনে বহিঃরাজ্যের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য তারা রাজ্যের প্রথম সারির ঠিকাদারদের বঞ্চিত করে ৪০-৫০ শতাংশ অধিক টাকা দিয়ে কাজ করাচ্ছে। আর মুখ্যমন্ত্রী টি এস আর ক্যাম্প গুলিতে ঝুল খেতে যাচ্ছেন। আর তাদের ২৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে প্রতারণা করে চলেছে বর্তমান সরকার বলে জানান শ্রী বর্মন। তাই আগামী দিনে এর বিরুদ্ধে লড়াই করে কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠা করবেন বলে এদিন শপথ নিন সুদীপ রায় বর্মন এবং আশীষ কুমার সাহা। এদিন বিমানবন্দরে সুদীপ রায় বর্মন এবং আশীষ কুমার সাহাকে শুভেচ্ছা জানান দলের নেতৃত্ব ও কর্মী সমর্থকরা। পরে বাইক মিছিল করে প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সামনে আসেন। প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সামনে দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয় সুদীপ রায় বর্মন এবং আশীষ কুমার সাহাকে।