Wednesday, February 12, 2025
বাড়িরাজ্যইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মানিক

ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মানিক

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৪ জানুয়ারি : ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্য হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবারই রাজন্য আমলকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাজ্যে রাজারা কখনও চান নি যে ত্রিপুরা রাজন্য শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দান করুক। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বছর পূর্ণ রাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বারবারই রাজন্য আমলকে গুরুত্ব দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন।

 কিন্তু পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা জন্য যাদের ভূমিকা তাদের সম্মান জানানো হয়। সোমবার সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে তীব্র নিন্দা জানান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সারাদেশে যখন শিক্ষার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন রাজ্য শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন শুরু হতে থাকে। আর সেই আন্দোলন অবদমন করার চেষ্টা করেছিলেন মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য। তিনি ১৯৪৭ সালে প্রয়াত হওয়ার পর একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। আর সেই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন কাঞ্চন প্রভাদেবী। কিন্তু ১৯৪৮ সালে কাঞ্চন প্রভা দেবীকে সেই কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করতে হয়। তারপর রাজ অন্দরের ষড়যন্ত্রের খবর মানুষের সামনে উঠে আসে। এতে ক্ষোভে গণ আন্দোলনের রুপ নেয়। ১৯৫০ সালে ২৬ জানুয়ারি সংবিধান গৃহীত হয়। তারপর ত্রিপুরা ত্রাস শ্রেণীভুক্ত রাজ্য হিসেবে ঘোষণা হয়। গণআন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ লড়াইয়ে ১৯৭২ সালে ২১ জানুয়ারি ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো চলতি বছর পূর্ণ রাজ্য দিবসের ৫০ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তৎকালীন সময়ে যারা গণ আন্দোলন করে ত্রিপুরাকে রাজন্য শাসিত আমল থেকে মুক্ত করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তাদের শ্রদ্ধা জানান নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গত ২১ জানুয়ারি ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ভার্চুয়াল ভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করতে গিয়ে বারবারই রাজন্য আমলের গুরুত্ব তুলে ধরেন। কিন্তু রাজন্য আমল থেকে মুক্তি লাভ করে যে প্রক্রিয়ার যে সম্মিলিত প্রয়াস তার কোন উল্লেখ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মনে হয়েছিল যেন পূর্ণ রাজ্যের জন্য রাজাদের গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনগণের আন্দোলন অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রিপুরার ইতিহাস বিকৃত করে গণতন্ত্রের প্রতি বিজেপি সরকারের অশ্রদ্ধা তুলে ধরেছেন। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের রাজা মহারাজা পুঁজিপতিদের সাথে উঠা পড়া তা সকলের জানে। এভাবে জনগণের ভূমিকা আড়াল করে অসম্মানের চেষ্টা করা কিছুতেই মেনে নেবে না রাজ্যবাসী বলে জানান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। ইতিহাস কিন্তু সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এগুলি প্রধানমন্ত্রীর জানা দরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মোদির যুগলে গুজরাটে কি হয়েছে তা দেশবাসী জানে। অমিত শাহ বলেন ত্রিপুরার লক্ষ্য ২০৪৭ পর্যন্ত ত্রিপুরার উন্নয়নের রূপ রেখা ব্যাখ্যা করা। এবং তিনি কমিউনিস্টের কটাক্ষ করেন। আসলে কমিউনিস্টদের কটাক্ষ করা তাদের রক্তে মিশে গেছে। মনে হয় যেন কমিউনিস্টরা দীর্ঘ ২৫ বছর রাজ্যে কোন রকম উন্নয়ন করেনি। কিন্তু রাজ্যে দীর্ঘ ২৫ বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। বনজ সম্পদ, কৃষি কাজ এবং মৎস্য চাষের বিকাশ হয়েছে। আর তখন বিরোধীরা রক্ত খেলায় মেতে উঠেছিল। উন্নয়নের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে। পরে জনগণকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া হয়। এখন সংকীর্ণ স্বার্থে বামেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে তারা। দীর্ঘ চার বছরে কি করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। সরকারটা ২৯৯ টা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কোনো প্রতিশ্রুতি কার্যকর করছে না। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর পিঠ চাপড়াচ্ছেন দিল্লি থেকে। বেকার সমস্যা, অনিয়মিত চাকুরিত কর্মীদের নিয়মিত করার দেখা নেই, রেগা মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। শুধু বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। গণত্রন্ত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছে। রাজ্যে শুধুমাত্র শ্মশানের শান্তি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় গত চার বছরে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র লুটপাট হয়েছে রাজ্যে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ত্রিপুরার মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে অমিল বলে জানান বিরোধীদলীয় নেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন এখন ঘরে ঘরে মানুষ সরকার তাকে জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। মানুষ বলছে কি ভুল করেছে এ সরকার এনে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ভিশন ডকুমেন্ট রাজ্যের মানুষের মাথায় নিয়ে হাঁটবে নাকি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুতরাং সরকারটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য