স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৮ আগস্ট : ককবরক ভাষা রোমান হরফে স্বীকৃতির দাবিতে সোমবার ছিল টি এস এফ -এর ১২ ঘন্টার বনধ। এই বনধ রাজ্যের চম্পকনগর, হতাইকাতর, হেজামারা, বিশ্রামগঞ্জ এবং মনুঘাটে পিকেটিং হওয়ার কথা থাকলে অঘোষিতভাবে এদিন সকাল থেকে সারা রাজ্যে নেমে পড়ে টি এস এফ। কিন্তু তারা এদিন দাবি করে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নাকি সারা রাজ্যে বনধ। বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয় এদিন আন্দোলন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রাজধানী আগরতলার বুকেও আছড়ে পড়ে টি এস এফ -এর আন্দোলন।
এদিন আগরতলা শহরে বুকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে তারা আন্দোলন শুরু করে। রাজধানীর উত্তর গেট, বুদ্ধ মন্দির সংলগ্ন এলাকা এবং অভয়নগর ব্রীজের উপর পথ অবরোধ করে ককবরক ভাষা রোমান হরফে লেখার স্বীকৃতি দাবি জানায় টি এস এফ -এর চিপ এডভাইজার বিশ্ব কুমার দেববর্মা। দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুললে, পুলিশ বাধ্য হয়ে পিকেটারদের আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ আধিকারিক জানান যেদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু বিক্ষোভকারীতে আটক করা হয়েছে। এদিকে বড়মুড়া জাতীয় সড়ক অবরোধ করে প্রায় শতাধিক জাতি জনজাতি। সামনে সারিতে ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত থাকলেও পেছনের সারিতে ছিল অধিকাংশই মাঝ বয়েসী পুরুষ মহিলা। যারা পেছন থেকে সামনে ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্ব দেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে জাতীয় সড়ক। পুলিশ তেমন সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারল না এদিন ঘটনাস্থলে। টানা হেঁচড়া করে গাড়িতে তুললেও পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভকারীদের মুক্ত করে নেয়। অপরদিকে টিএসএফ -এর ডাকা ১২ ঘন্টা ত্রিপুরা বনধে ব্যাপক সাড়া পড়ে উদয়পুর মহকুমার পৃথক দুটি স্থানে। মহকুমার ৩০ বাগমা বিধানসভা কেন্দ্রের দুটি স্থানে পৃথক ভাবে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন সংগঠনের ছাত্রছাত্রীরা। উদয়পুর – আঠারোভোলা রাস্তার খুপিলং এলাকায় হয় অবরোধ। এবং কিল্লা- উদয়পুর সড়কের রাইয়াবাড়ি আই এস অফিস সংলগ্ন সড়কে সকাল ছয়টা থেকে অবরোধ করে রাখেন ছাত্রছাত্রীরা। মূলত ককবরক রোমান হরফ চালুর দাবিতে তাদের এই অবরোধ চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। প্রতিটি অবরোধস্থলে ব্যাপক পরিমাণে নিরপত্তা রক্ষী মোতায়েন রয়েছে। দুপুর একটা পর্যন্ত কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর নেই উদয়পুর মহকুমায়। কিন্তু টি এস এফ -এর ডাকা ১২ ঘন্টা বনধে অবিভক্ত গোমতী – দক্ষিণ জেলা। কারণ সমস্ত যানবাহন সকাল থেকে আটকে দেওয়া হয় বাগমা পুলিশ ফাঁড়ি থানার নাকা পয়েন্টে।বিপাকে পড়ে সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বহু মানুষ অফিস আদালতে যেতে পারেনি। এদিকে বিশ্রামগঞ্জ দেওয়ানবাজার এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন টি এস এফ -এর পিকেটাররা। বিক্ষোভকারীরা জানায় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ককবরক ভাষাকে রোমান হরফে এলাকার স্বীকৃতির দাবি রাজ্য সরকারের কাছে করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকার এই দাবি পূরণে কোন মর্যাদা দিচ্ছে না। কিন্তু ৯০ শতাংশ জনজাতির চাইছে ককবরক ভাষা রোমান হরফে লেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য। এবং এই দাবি নিয়ে কোন ধরনের রাজনীতি হওয়ার ঠিক নয়। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে কোন ককবরক ভাষায় রোমান হরফে লেখা সুযোগ না দেয় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। অপরদিকে বনধের প্রভাব পড়ে গন্ডাছড়া মহকুমাতে। গন্ডাছড়া মহকুমা বাজার হাট, যানবাহন ছিল বন্ধ। কিন্তু অফিস কাচারি ছিল খোলা। কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। তবে বনধ ঘিরে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই রাজ্যে। এমনকি তিপ্রা স্টুডেন্ট ফেডারেশন ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ আংশিক প্রভাব পড়লো আমবাসা মহকুমায়ও। ককবরক ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফেডারেশনের ডাকা এই বনধ। এদিন আমবাসা মহকুমার বাগমারা বাজারে তিপ্রা স্টুডেন্ট ফেডারেশনের কর্মীরা বনধের পিকেটিং করতে দেখা যায়। বাগমারা বাজারে তারা রাস্তা অবরোধে বসে। সকাল থেকেই পিকেটিংয়ে দেখা যায় তিপ্রা স্টুডেন্ট ফেডারেশনের কর্মীদের। এদিকে সোমবার দুপুরে নাগাদ আচমকা উত্তপ্ত হয়ে উঠে হাজামারা খোয়াই চৌমহনি এলাকা। পিকেটাররা রাস্তা অবরোধ করে ককবরক ভাষায় রোমান হরফে স্বীকৃতির দাবি সহ ১২৫ তম সংশোধনী বিলের দাবি জানায়। আটকে পড়ে বহু গাড়ি। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তাদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে পুলিশ অবরোধ মুক্ত করে। তবে অবরোধকারীদের বক্তব্য তাদের দীর্ঘদিনের দাবি নিয়ে রাজ্য সরকার ছেলে খেলা করছে। বহুবার সরকারের কাছে দাবি জানানোর পরেও কর্ণপাত করছে না। তাই এবার এই সংগ্রাম যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি পূরণ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে বলে জানায় তারা।