আগরতলা, ২১ জানুয়ারি (হি. স.) : পূর্ণ রাজ্য দিবসে হৃদয় থেকে আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্য বাহাদুরকে স্মরণ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। ত্রিপুরার বিকাশের ভিত স্থাপনে মহারাজার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি। সেই সঙ্গে আগামী ২৫ বছরের জন্য সংকল্প পত্র তৈরী করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব্বর্মার পিঠ চাপরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। এখানেই শেষ নয়, আরও অনেক বিকাশ এবং বিনিয়োগ আগামীদিনে ত্রিপুরার জন্য অপেক্ষা করছে বলে স্বপ্নও ফেরি করলেন তিনি। ত্রিপুরার পূর্ণ রাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে সমগ্র রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অমিত শাহ।
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অতীতের পাতা থেকে স্মৃতি ফিরিয়ে এনে দেশভাগের সময়কার বিভীষিকার বর্ণনায় ত্রিপুরার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলের, দেশভাগের বিভীষিকাময় যন্ত্রণা ত্রিপুরা সহ্য করেছে। ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতি গ্রহণে মহারাজা বীর বিক্রম প্রথম রাজা ভারতভুক্তিতে সায় দেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথায়, মুসলিম আততায়ীরা ত্রিপুরায় প্রবেশের পরিস্থিতি সামলাতে মহারানী কাঞ্চনপ্রভা দেবী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সর্দার প্যাটেল অসম থেকে বায়ু সেনা পাঠিয়ে ত্রিপুরার সাহায্য করেছিলেন। তাই, আজকের স্বর্নিম দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকেও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আধুনিক ত্রিপুরা গঠনে মহারাজা বীর বিক্রমের অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য। রুদ্রসাগর, নীরমহল, শিক্ষার জন্য জমি দান, বিমানবন্দর সর্ব ক্ষেত্রেই মহারাজা ত্রিপুরাকে আধুনিক করে তোলার অকৃত্রিমভাবে চেষ্টা করেছেন। তাই, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগরতলা বিমানবন্দর মহারাজা বীর বিক্রমের নামাকরণ করেছেন। অমিত শাহ বলেন, মহারাজা বীর বিক্রম সব সময় প্রতিভার অন্বেষণে থাকতেন। এজন্যই তিনি আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাই, দেশ আজ মহান বিজ্ঞানীর সান্নিধ্য পেয়েছে। তাঁকে হৃদয় থেকে প্রণাম জানাচ্ছি, বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী
এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকার আজ লক্ষ্য ২০৪৭ ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাপত্র শুধুই দস্তাবেজ নয়। ত্রিপুরার মানুষের আশা আকাঙ্খার আধুনিক চিত্রকল্প। বিকাশের দলিল, প্রত্যয়ের সুরে বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ২৫ বছর বাদে ত্রিপুরার চেহেরা কেমন হবে তার রূপরেখা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত দীর্ঘ সময় পরাধীনতা সহ্য করেছে। তাতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পূরণের সংকল্প স্থির করা হয়েছে।
তাঁর দাবি, ত্রিপুরাকে বিকশিত, সুরক্ষিত এবং আত্মনির্ভর বানানোর কাজ জোর গতিতে চলছে। প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে দিল্লির দুরত্ব কমেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দুর্নীতির আতুরঘর ছিল। উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থ মানুষের কাছেই পৌছাত না। আজ দিল্লি থেকে সমস্ত অর্থ শুধুই উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামীদিনে ত্রিপুরায় বিকাশ ও বিনিয়োগ অপেক্ষা করছে। কারণ, ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হতে চলেছে।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তাঁর কথায়, দুই দশকের বেশি সময় ধরে ত্রিপুরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। কারণ, ত্রিপুরাকে পিছিয়ে রাখার জন্য কমিউনিস্ট শাসন কোন কসুর রাখেনি। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে এনএলএফটি উগ্রপন্থীদের সঙ্গে শান্তি সমঝোতা অনেক বড় সাফল্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্রু চুক্তি তিন দশকের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করেছে।তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গঠন হওয়ার পর নেশামুক্ত রাজ্য গড়ে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে। নেশা সামগ্রী পাচারের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে, শুধু ত্রিপুরা নয় সমগ্র দেশ উপকৃত হচ্ছে। বিশেষ জনজাতি অংশের মানুষ দারুনভাবে উপকৃত হচ্ছেন। তাঁর সাফ কথা, ডাবল ইঞ্জিনে ত্রিপুরায় আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় মানুষের গড় আয় বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১ লক্ষ টাকা গড় আয় বেড়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে হয়েছে ১.৩০ লক্ষ টাকা। তিন বছরে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি দেশের বিভিন্ন রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট প্রশংসনীয় অবদান, তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তিনি আরও যোগ করেন, ত্রিপুরায় বেড়েছে কৃষকের আয়ও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃষকের আয় দ্বিগুন করার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে ত্রিপুরায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে যেখানে ছিল ৬৫৮০ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ১১০৯৬ টাকা।
সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় দারুন উন্নতি হয়েছে। প্রায় ২৬ শতাংশ গম্ভীর অপরাধ কমেছে। সবমিলিয়ে নতুন যুগের সূচনায় ত্রিপুরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে, কুর্ণিশ জানিয়ে বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।