Tuesday, February 11, 2025
বাড়িরাজ্যচিকিৎসককে মারধর, ভাঙচুর হাসপাতাল

চিকিৎসককে মারধর, ভাঙচুর হাসপাতাল

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৬ জুন :  দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সঠিক সময় মতো না পেয়ে লঙ্কাকান্ড কৈলাসহর মহকুমা ওয়েলনেস সেন্টার কণিকা মেমোরিয়্যাল হাসপাতালে। মারধোর করা হয় চিকিৎসককে। ভাঙচুর হাসপাতালের চিকিৎসার সরঞ্জাম। হাসপাতাল থেকে রাতেই পালিয়ে যায় বহু রোগী। সোমবার ছুটে গেলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব এবং জেলা পুলিশ সুপার। বৈঠক করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের।

ঘটনা রবিবার রাতে কৈলাসহরের মাইলং এডিসি ভিলেজের ঠাকুর সিং পাড়ার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সংলগ্ন ২০৮ জাতীয় সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনায় মোট ছয়জন পথচারী জখম হয়। পরে গ্রামবাসী জখম হওয়া ছয়জন পথচারীকে স্থানীয় সিংগিরবিল গ্রামের কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সত্যজিৎ দত্ত দুইজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি চারজনের মধ্যে দুইজনকে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে রেফার করেন। তারপরই গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে সিংগিরবিলের কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সত্যজিৎ দত্তকে বেধড়ক মারধর করে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙচুর চালায়। এমনকি হাসপাতালে ভেতরে পর্যন্ত প্রবেশ করে ভাঙচুর করে উত্তেজিত গ্রামবাসী। এমনকি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সমস্ত মেশিন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। হাসপাতালের ভিতরে থাকা সেলাইন ও সমস্ত ঔষধ পত্র বাইরে ফেলে দেয়।

পরবর্তী সময়ে ডাঃ সত্যজিৎ দত্তের অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়। কনিকা মেমোরিয়াল হাসপাতালে অরাজকতা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে বিগত তিন দিন ধরে ভর্তি থাকা তিনজন রোগী ভয়ে হাসপাতালের কাউকে না বলে পালিয়ে যায় বাড়িতে। এই ঘটনায় গোটা মাইলং এডিসি ভিলেজ এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। রবিবার রাতেই ঊনকোটি জেলা জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা এবং জেলার পুলিশ সুপার কান্তা জাহাঙ্গীর পুলিশ এবং টি.এস.আর বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে যান। অপরদিকে পুলিশ রবিবার রাতেই ঘাতক গাড়িটি কৈলাসহর পুর পরিষদের পদ্মেরপাড় এলাকায় অমিত সিনহার বাড়ি থেকে আটক করে কৈলাসহর থানায় নিয়ে যায়। তবে গাড়ির চালক তথা গাড়ির মালিক অমিত সিনহাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি। এদিকে ঘটনায় ত্রিপুরা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব দেবাশীষ বসু, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ড: সুপ্রিয় মল্লিক, স্বাস্থ্য দপ্তরের সহ অধিকর্তা সৌভিক দেববর্মা কৈলাসহরে এসে কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় সাথে ছিলেন ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা, ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার কান্তা জাহাঙ্গীর, কৈলাসহরের মহকুমাশাসক প্রদীপ সরকার, ঊনকোটি জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ড: জে.বি দারলং, ঊনকোটি জেলার সার্ভিল্যান্স অফিসার ড: শংখ শুভ্র দেবনাথ সহ অন্যান্য আধিকারিক। কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করে তারা সবাই কৈলাসহরের ভগবান নগর এলাকায় অবস্থিত ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে গিয়ে জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ড: সমরেন্দ্র দেববর্মার চেম্বারে এক বৈঠকে করেন। এদিকে সকাল দশটায় ঘাতক গাড়ির চালক অমিত সিনহাকে কঠোর শাস্তির দাবিতে মাইলং এডিসি ভিলেজের গ্রামবাসীরা ঠাকুর সিং পাড়ার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সম্মুখে ২০৮ বিকল্প জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। অবরোধের খবর পেয়ে আধ ঘন্টার মধ্যেই অবরোধ স্থলে ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা চলে যান।

 এবং সেখানে অবরোধ কারীদের সাথে কথা বলার পর অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় মৃত দুই পথচারী নিকেন্দ্র দেববর্মা এবং বিদ্যাভাগী দেববর্মার মৃতদেহ ময়না তদন্ত করে দুপুর বারোটায় পরিবারের সদস্যদের হাতে তোলে দেয় ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ড: সমরেন্দ্র দেববর্মার চেম্বারে প্রায় দুই ঘন্টা পর বৈঠক শেষে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ড: সুপ্রিয় মল্লিক সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, স্বাস্থ্য দপ্তর কোনো ধরনের হিংসায় বিশ্বাসী নয়। স্বাস্থ্য দপ্তর সমাজের সবাইকে নিয়েই চলতে চায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ড: সত্যজিৎ দত্তকে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে। তারপরও ক্ষোভে চিকিৎসককে মারধোর করা ঠিক হয়নি বলে জানান। তবে, হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে কনিকা মেমোরিয়াল হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার কৈলাসহর থানায় লিখিত মামলা সোমবার করেছেন। তাছাড়া কনিকা মেমোরিয়াল হাসপাতালের এম্বুল্যান্স সহ হাসপাতালের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। আরও জানান যে, কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাধারণ বিভাগ সহ হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ বন্ধ থাকলেও কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইমারজেন্সি বিভাগ খোলা রয়েছে। এবং কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইমারজেন্সি বিভাগ থেকে হাসপাতালে আসা রোগীদের পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান। স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা সুপ্রিয় মল্লিক জানান, সোমবার সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ডিউটি থাকা অবস্থায় কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইমারজেন্সি বিভাগে কোনো রোগী আতঙ্কে আসেননি। তিনি আরো জানান, এম্বুলেন্স বিকল পাওয়ার পরে তারা আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তারপরে অন্য একটি গাড়ি ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু উত্তেজিত গ্রামবাসী যা খুশি তাই করেছে। এখন দেখার বিষয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য