স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৫ জুন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গঠনের পর ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি এগিয়ে চলছে। রবিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যকালের ৯ বছর উদযাপনের অংশ হিসাবে ৮ টাউন বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এদিন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশের বিকাশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৭ – ১৮ অর্থবছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৯০.৬৮ কোটি টাকা। যা এখন ২০২২ – ২৩ এ বেড়ে ৭৫৮.৯ কোটি টাকা হয়েছে। এই বিষয়টি ত্রিপুরায় ব্যাপক উন্নয়নের ইঙ্গিত তুলে ধরেছে। উপরন্তু, আমরা এই বছর বাংলাদেশে ১২১.৩৭ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করেছি।
এর পাশাপাশি দক্ষিণ জেলার সাব্রুমে মৈত্রী সেতু নির্মাণের ফলে এই অঞ্চল আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। আগামী দিনে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে। মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর এই সেতু নির্মাণের ফলে গ্রামীণ এলাকায় জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ভারতীয় জনতা পার্টি এমন একটা দল যারা কাউকে কোন সময় বঞ্চিত করে না। আমাদের সরকার জনজাতি সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েদের উন্নত মানের শিক্ষার জন্য জনজাতি এলাকায় আরও ১৭টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন দেশের পূর্ববর্তী কোন প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করেন নি। রাজ্যে ককবরক ভাষা সম্পর্কিত কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে আমাদের সরকার রাজ্যের ১,৪০০টি স্কুলে ককবরককে একটি বিশেষ বিষয় হিসাবে চালু করেছে। আইপিএফটির সঙ্গে আমাদের বিজেপি সরকারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চায় জাতি – জনজাতি উভয় অংশের মানুষ একসঙ্গে শান্তি সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করুক। মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, আমাদের কাউকে বঞ্চিত করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। কারণ আগের সিপিএম সরকার বঞ্চনার সরকার হিসেবে পরিচিত ছিল।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে দেশের উন্নয়নে এবং ত্রিপুরার জন্য কাজ করছেন তা নজিরবিহীন। প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরাকে হিরা মডেল উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তাঁর অ্যাক্ট ইস্ট নীতির কারণে রাজ্যে জাতীয় মহাসড়ক, বিমান যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ, উন্নততর ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়েছে রাজ্য। আগামীতে জলপথের মাধ্যমেও সংযোগ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা আমরা আগে কখনও দেখিনি। এতে ‘ফিল গুড’ অনুভূতি এসে পড়েছে। উত্তর-পূর্বের অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের সময়েও তারা মত প্রকাশ করেন যে এখন নিজেদের ভারতের মূল স্রোতের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়।
এদিন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গত ৯ বছরে যে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে সেটা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। গর্বের সাথে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি সরকারের সময়ে কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন। তিনি জানান, ২.৪৭ লক্ষেরও বেশি কৃষককে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের বার্ষিক আয় ১৩,৫০০ টাকা হয়েছে। প্রায় ৩.৭ লক্ষ কৃষক কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) স্কিমের মাধ্যমে ঋণ পেয়েছেন। সরকার ১৩ লক্ষ আয়ুষ্মান কার্ড ইস্যু করে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। পাশাপাশি ১ লক্ষ ছাত্রীকে বিনামূল্যে সাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। শিশু ও মহিলাদের উন্নয়নের জন্যও খুবই আন্তরিক সরকার। রাজ্যে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।