স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১০ জানুয়ারি : কোন বিধায়ক, মন্ত্রী বা জন প্রতিনিধিরাই সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব নেবে এমন নয়। স্থায়ী সমাজ পরিবর্তনের জন্য সরকারি চাকুরি করে কর্মচারিরা। বেতন দেয় জনতা। অনেক সময় অনেকে ভুলে যায় তারা দলের প্রতিনিধি নয়, জনতার প্রতিনিধি।
সরকারে বসলে জনতার প্রতিনিধি। এটা কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সোমবার এডি নগর পুলিশ মাঠে ত্রিপুরা পুলিশ সপ্তাহ দিবসের উদ্বোধন করে বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।সোমবার থেকে শুরু হল ত্রিপুরা পুলিশ সপ্তাহ দিবস। এদিন এডি নগর পুলিশ মাঠে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রিপুরা পুলিশ সপ্তাহ দিবস উদযাপন করা হবে।
অরুন্ধতী নগর পুলিশ মাঠে পুলিশ কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিবাদন গ্রহণের পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন পুলিশ সপ্তাহ কর্মসূচি থেকে আগামীর পথে অন্তত একটি সংকল্পবদ্ধ পরিকল্পনা স্থির করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার সফল বাস্তবায়ন আবশ্যক। কেননা সব কাজ এক সঙ্গে করা যায়না। আগামী এক বছর ত্রিপুরা পুলিশ কোন বিষয়ের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে তা আগাম ঠিক করে রাখতে হবে। কোন সমস্যা হলে সাধারন মানুষ প্রথমে পুলিশকেই স্মরণ করে। সেই দিকে নজর রেখে যে কোন একটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তাকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর অঞ্চল সব জায়গাতেই উপস্থিতি রয়েছে পুলিশের। জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে সৌহার্দ পূর্ণ মানসিকতার সঙ্গে এক আত্মীয়তা তৈরি করা পুলিশের দায়িত্ব। দায়িত্ব পালনের সময় সংবিধানের সিদ্ধান্ত গুলিকে উচ্চারন করে কাজে যোগদান করেছেন তাকে মনে রাখতে হবে। মিথ্যা ছবি দেখিয়ে ত্রিপুরা পুলিশকে বদনাম করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত সত্য নিজে থেকেই সামনে চলে এসেছে। পুলিশ, টি এস আর , এস পি ও নিয়ে প্রায় ৩৮০০ জনকে নিয়োগ করা হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদের। কোভীডের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এই ব্যবস্থা করা সহজ ছিল না। টি এস আর- এ নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। মহিলারা এসে টি এস আর- এ নিয়োগের জন্য বলে। এটা রাজ্যে আগে হয়নি বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এম এ পাশ করা মহিলা এবার টি এস আর- এ নিয়োগ পেয়েছে। সেই মাপের মেধা টি এস আর-এ রাইফেল ওঠানোর জন্য এসেছে। এটাই ত্রিপুরার পরিবর্তন বলে জানান তিনি। ৫০০ জন মহিলা কনস্টেবল নেওয়া হবে। আগেও সরকার ছিল । তাদের পুলিশের পক্ষ থেকে পদোন্নোতির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সরকারের পাথর গলেনি। কারন উচু ভবন থেকে আদেস মিলত না। এই সরকার আসার পর কেবল পুলিশি ব্যবস্থায় নয়, অন্যান্য কর্মীদের জন্য এডহক পদোন্নোতির ব্যবস্থা করেছে। রাজানীতি করার জন্য রাজনীতি এই ব্যবস্থা ও সরকার করেনা বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ ব্যবস্থা বড় সরকারী মাধ্যম বলেও জানান তিনি। নাকারাত্মক, দেশ বিরোধী মানসিকতা নিয়ে যারা আসে তারা চেপে বসতে চায়। আগে ভারত মাতার জয় বললে বলা হত সাম্প্রদায়িক। এখন সবাই ভারত মাতার নামে স্লোগান দেয়। এটাই ত্রিপুরার পরিবর্তন। নতুন ত্রিপুরার প্রমান। নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্যের ব্যবহার স্বমূলে উৎখাত ও যুব সম্প্রদায়কে এর অশুভ সংস্পর্শমুক্ত রাখতে প্রয়োজন সবার অঙ্গীকারবদ্ধ প্রয়াস। যা অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা হ্রাসের সহায়ক।
ইতিবাচক সমাজ পরিবর্তনের অগ্রণী ভুকিমা নিতে হবে। ভালোবাসায় রাজ্য পুলিশ বাহিনী একাধিক ক্ষেত্রের সাফল্য ও দক্ষতার নজির রেখেছে। কোভীড মোকাবেলায় ত্রিপুরা পুলিশ দক্ষ। তৃতীয় ঢেউ রুখতে রাজ্য সরকার যে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে তা পুলিশ সঠিক ভাবে করবে। সৌহার্দ পূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে এটা করতে হবে। চাল, চরণ ,চরিত্র বদল করার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে ৬০ শতাংশের এই পরিবর্তন এসেছে। আগে কমিউনিস্টরা মানুষকে কাজ করতে দিত না । হরতালের নামে বসিয়ে রাখত। এখন ত্রিপুরার মানুষ বসার নয়। অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন থানা গুলিকে প্রশংসনীয় কাজ করার জন্য পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। ১২ জন পুলিশের আধিকারিকদেরও ভালো কাজের প্রশংসায় ডিজিপি ডিস্ক প্রদান করা হয়। মোট ৩৭ পুলিশ অফিসার এবং সাব-ইন্সপেক্টর সিআরপিএফ ও ত্রিপুরা পুলিশের কনস্টেবল এবং নায়েক সুবেদার এর মধ্যে এই ডিস্ক প্রদান করা হয়। পরে এডি নগর পুলিশ মাঠে পুলিশের উদ্যোগে এক রক্তদান শিবির আয়োজন করা হয়। রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরা পুলিশের উদ্যোগে আর্ট অ্যান্ড হান্ডিক্রাফটস প্রদর্শনী, ছোটদের মধ্যে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, পুলিশ গ্যালারি প্রদর্শনী, ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা, সাইবার কুইজ, ও ডিবেট কম্পিটিশন চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এইদিন পুলিশ মাঠে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব, মুখ্য সচিব সহ পুলিশএর উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা।