Thursday, January 16, 2025
বাড়িরাজ্যবোধিসত্ত্ব দাস হত্যাকান্ডের ঘটনায় চারজনের যাবজ্জীবন জেল

বোধিসত্ত্ব দাস হত্যাকান্ডের ঘটনায় চারজনের যাবজ্জীবন জেল

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩ জুন : রাজনীতির আগরতলা জ্যাকসন গেইট এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রামনগরের বাসিন্দা ধর্মনগরের ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বোধিসত্ত্ব দাস। এক ব্যক্তি তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি এটিএম সেন্টারের সামনে পড়ে থাকতে দেখে খবর দেয় পুলিশে। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় জিবি হাসপাতালে। পরে কলকাতার একটি হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বোধিস্বত্ত দাসের।

 এরপর হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এই খুনের ঘটনায় চার অভিযুক্তের নাম উঠে আসে তারা প্রত্যেকেই শহরের নামিদামি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। গ্রেপ্তার করা হয় সুমিত চৌধুরী ওরফে বাবাই, কলেজটিলা এলাকার ঠিকেদার সুমিত বণিক ওরফে বাপী, ট্রাফিক পুলিশের প্রাক্তন ইন্‌সপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস এবং সোয়েব মিঞা ওরফে ওমর শরিফ শরিফ। চারজনই শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তি। শুক্রবার মামলার হত্যাকান্ডের চার বছর পর দীর্ঘ সুনানী শেষে ৫৬ জনের সাক্ষ্যবাক্য গ্রহণের পর পশ্চিম জেলার জেলা ও দায়রা আদালত চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। তারা হল সুমিত চৌধুরী ওরফে বাবাই, সুমিত বণিক, সুকান্ত বিশ্বাস ও ওমর শরিফ ওরফে শোয়েব মিয়া। শনিবার পশ্চিম জেলার জেলা ও দায়রা আদালত চার আসামীর সাজা ঘোষণা করে। এদিন আদালত চার আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের সাজা ঘোষণা করেন বলে জানান মামলা পরিচালনার কাজে নিযুক্ত স্পেশাল পিপি সম্রাট কর ভৌমিক। তিনি জানান বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা হলে এই মামলায় আসামীদের ফাঁসি চাওয়া যেত। কিন্তু এটা বিরলতম ঘটনা নয়। তাই যাবজ্জীবন চাওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের সুপ্রীম কোর্টের একটি মামলার প্রসঙ্গে টেনে তিনি জানান যাবজ্জীবন মানে নির্দিষ্ট কোন সময় বেঁধে দেওয়া নয়। যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন তাদের সংশোধনাগারে থাকতে হবে। রেমিশন না পেলে বাকী জীবন জেলেই কাটাতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি আদালত।

তাই কোন ক্ষমা প্রদর্শন না করলে বাকী জীবন তাদের জেলেই কাটাতে হবে বলে জানান তিনি।  ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাব্রটরি ও চণ্ডীগড় ল্যাব্রটারি সহায়তা করেছে বলে জানান স্পেশাল পিপি সম্রাট কর ভৌমিক। যে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল তার থেকে বহু তথ্য পেয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। যা মামলার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। শোয়েব মিয়ার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দিয়েই বোধিসত্ত্ব হত্যা করা হয়েছিল। বোধিসত্ত্ব শেষ জবানবন্দীর ভিডিও রেকর্ড চণ্ডীগড় ল্যাব থেকে পরীক্ষা করে আনা হয়। তাতে কোন টেম্পারিং করা হয়নি তাও আদালতে স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। যা মামলার পক্ষে গেছে। তবে আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে দুজন সাক্ষী হোস্টাইল হয়ে যায়। এদের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বাসু কর ও অপরজন এজিএমসি-র চিকিৎসক অভিজিৎ দাশ গুপ্ত। মামলা পরিচালনার জন্য সরকার পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী স্পেশাল পিপি সম্রাট কর ভৌমিক জানান প্রত্যক্ষদর্শী বাসু কর কিভাবে বোধিসত্ত্বকে হত্যা করা হয়েছিল তা নিজে চাক্ষুষ করেছেন। অন্যদিকে জিবিতে মৃত্যুকালীন সময়ে বোধিসত্ত্বর জবানবন্দী চিকিৎসক অভিজিৎ দাশগুপ্ত শোনেননি বলে জানান।

 এই মিথ্যা বয়ান দেওয়ার জন্য মামলা বিচার করবে অপর কোর্ট। তবে এটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। আদালত আবেদন গ্রহণ না করলে সরকার উচ্চ আদালতে যেতে পারে বলে জানান স্পেশাল পিপি সম্রাট কর ভৌমিক। হত্যার ঘটনার প্রায় চার বছর পর চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস বোধিসত্ত্বর পরিবারে। এদিন আদালত চত্বরে এই মামলার রায় দান পর্বকে ঘিরে ছিল কৌতূহলী মানুষের ভীড়। তিন বছরের মধ্যেই স্বামী এবং সন্তানকে হারিয়ে এখন অনাথ বোধিসত্ত্বের মা রঞ্জনা দাস। তাই শহরে চাঞ্চল্যকর বোধিসত্ত্ব দাস হত্যা মামলার রায়ে সন্তানহারা অসহায় মা খুশী।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য