Saturday, February 15, 2025
বাড়িরাজ্যশহরে বামেদের বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশ

শহরে বামেদের বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশ

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৩ ডিসেম্বর : ভাজপা কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে তিনটি কৃষি আইন এনেছে। কিন্তু কৃষকরা রাস্তায় নেমে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে আন্দোলন করে ভাজপা’কে পরাজিত করেছে। সরকার দেশের রেল লাইন, এয়ার ইন্ডিয়া বিমান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, টেলিকম, বিমা, ব্যাংক সব কিছু বিক্রি করে দিতে চাইছে।

তাই দেশের সম্পদ রক্ষা করতে একমাত্র পথ আন্দোলন করে বিজেপি’কে পরাজয় করা। শুক্রবার প্যারাডাইস চৌমহনিতে কৃষক জুমিয়া ক্ষেত মজুরের সমাবেশে বক্তব্য রেখে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্ব ডঃ অশোক ধাওয়ালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কৃষকদের যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে এগুলি নিয়ে আগামী দিনে প্রতি জেলাতে ও গ্রাম পাহাড়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভাজপার গুন্ডাদের বিরুদ্ধে আগামী এক বছর সুসংগত ভাবে লড়াই করতে হবে। এ গুন্ডাদের এগিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।

 আর এর জন্য ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সরকার বিভিন্নভাবে কৃষক আন্দোলন রুখতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। কৃষকরা আন্দোলন করে তাদের অধিকার গ্রহণ করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষকদের সমস্যা রয়েছে এর মধ্যে বিশেষত্ব জল সেচের ব্যবস্থা নেই। বামফ্রন্ট সরকার যা কিছু করে দিয়েছ সেইগুলির গত তিন বছরে সর্বনাশ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তাই এগুলি পুনরায় ফিরে পেতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শ্রী ধাওয়ালে। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা ১ নম্বর ফ্লক হয়েছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলির মুনাফার জন্য সরকার ফসল বিমা যোজনা এনেছে। বিজেপি সরকারের ৭ বছরে দেশে প্রায় ১ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। কৃষকদের ঋণগ্রস্ত হয়ে জমি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। আর নয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হচ্ছে। কারণ কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তাই কৃষকরা আওয়াজ তুলেছে এমএসপি কেন্দ্রীয় আইন করতে হবে। এর জন্য দেশে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখান্ড, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিতে নির্বাচনে কৃষকদের প্রধান দাবি থাকবে এমএসপি কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় আনা বলে জানান তিনি। সরকারিভাবে সার এবং কীটনাশকের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা, জলসেচের মেশিনগুলি সচল করা, কৃষি দপ্তর এবং উদ্যান দপ্তরের প্রয়োজনীয় আধিকারিক কর্মী নিয়োগ করা, অকাল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা সহ যে ১০ দফা দাবির কথা বলা হচ্ছে। আর এই সবগুলি দাবি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত এবং সমর্থনযোগ্য। বামফ্রন্ট সরকারের সময় এ দাবিগুলি নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়নি। বরং মিছিল করে সরকারকে অভিনন্দন জানানো হতো। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার ৪৫ মাসে কৃষিকে সর্বনাশ করে দিয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ সমাবেশ থেকে ফিরে গিয়ে মানুষকে সুসঙ্গত করতে হবে। গ্রাম, পাহাড়ে মাঠে-ঘাটে হাঁটে সমাবেশ করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি পূরণ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন করে যেতে হবে আহব্বান জানান সভায় উপস্থিত বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন দেশের কৃষকদের আন্দোলনকে শুধু অভিনন্দন জানালেন চলবে না। দেশের এই ঐতিহাসিক আন্দোলন থেকে রাজ্যের কৃষকদের শিক্ষা নিতে হবে। মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না, কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোট দান।

আর ভোটদানের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিচ্ছে বিজেপি। ৪৫ মাসে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে সবগুলি নির্বাচন সন্ত্রাস করে প্রহসনে পরিণত করেছে বিজেপি। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে শহরের বাইরের ছেলেদের এনে এবং পুলিশকে কাঠ পুতুল বানিয়ে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করেছে। এইগুলি আর কতদিন সহ্য করে নেবে মানুষ। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস করানো হতো তাদের মধ্যে অনেকেই এখন সাথে নেই বিজেপি’র। সেসব যুবকদের সাথে প্রতারণা করে সন্ত্রাসের কাজে লাগানো হতো। কিন্তু তারা জন্মসূত্রে সমাজ বিরোধী নয়। আরে এগুলির বুঝতে পেরে এখন সন্ত্রাস থেকে সরে আসছে সেসব যুবকরা বলে অভিমত ব্যক্ত করলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। যারা সন্ত্রাসে এখনও লিপ্ত আছে তাদের সুসংগঠিত করতে হবে। তাহলে সন্ত্রাস পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হবে রাজ্যে বলে অভিমত ব্যক্ত করলেন মানিক সরকার। তিনি আরো বলেন উপজাতি অউপজাতি মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে রাজ্যে চক্রান্ত চলছে। পূর্বে যে ঐক্যতা গড়ে তোলা হয়েছিল তার মধ্যে বিভাজনের বীজ রোপন করেছে কিছু লোক।

কাজ, খাদ্যের জন্য জনজাতিদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক জৈনিক ব্যক্তি গ্রেটার তিপরাল্যান্ড নিয়ে জনজাতিদের ঐক্যবদ্ধ হতে বলছেন। তিনি স্বশাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে এক কথা বলেছেন, নির্বাচনের পর অন্য কথা বলেছেন, কর্মী-সমর্থকদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে আবার অন্য কথা বলছেন, রাজ্যে ফিরে এসে পুনরায় অন্য কথা বলছেন। তাহলে প্রশ্ন দীর্ঘ ১৩০০ বছর আপনারা রাজা ছিলেন, উপজাতি রাজা থেকে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়নি কেন ? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন ? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীদলীয় নেতা মানিক সরকার। মানিক সরকার আরো বলেন কৃষি রাজ্যের অর্থের মূল ভিত্তি। কৃষকদের জীবন এগিয়ে না গেলে দেশে কিভাবে এগিয়ে যাবে। আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার কৃষকদের জন্য যে নিকৃষ্টতম সিদ্ধান্ত করছে তা মেনে নেওয়া যায় না।

পূর্বের বাম সরকার কৃষকদের জন্য যেগুলি করেছে সেগুলো এখন কেড়ে নিচ্ছে বর্তমান সরকার। আর এখন যাতে রাজ্যের মানুষ মুখ খুলতে না পারে তার জন্য জাতি ও উপজাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। এবং প্রতিষ্ঠিত হয়ে ফুর্তি করছে তারা। বাইরে থেকে নাচ বার জন্য এবং গাইবার জন্য লোক আনছে। তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্য চোখের মুনির মতো হয়ে কাজ করতে হবে। একদিকে যেমন সন্ত্রাস মুক্ত রাজ্য করতে মানুষকে সুসংগত করতে হবে, অপরদিকে কৃষকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য লড়াই করতে হবে। পাশাপাশি যুবক-যুবতীদের বিভ্রান্ত থেকে বিরত থাকতে হবে বলে জানান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। রাজ্যের অধিকাংশ কৃষক সংখ্যালঘু। বাংলাদেশে দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরা রাজ্যের সংখ্যা লঘুদের উপর আঘাত নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই বিভ্রান্ত না হয়ে জাতি উপজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে জানান তিনি। এদিন বামেদের এই সমাবেশ শেষে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী, সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য কমিটি সভাপতি অঘোর দেববর্মা, সম্পাদক পবিত্র কর সহ অন্যান্যরা। সমাবেশের আগে প্যারাডাইস চৌমুহনি থেকে একটি মিছিল সংঘটিত করে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। মিছিলে উপস্থিত ছিল হাজার হাজার কর্মী সমর্থক।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য