আগরতলা, ১৩ মার্চ (হি.স.) : রাজনৈতিক সন্ত্রাসে বিজেপির পৃষ্ঠাপ্রমুখের মৃত্যুর ঘটনায় আজ সোমবার আগরতলার গোর্খাবস্তি এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল। মৃতদেহ নিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা পথ অবরোধ করে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে স্লোগান দেন। দোষীদের গ্রেফতারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। অবশেষে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা অবরোধস্থলে গিয়ে উত্তেজিত বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের শান্ত করেন। তাঁর হস্তক্ষেপে এদিন অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে। তিনি সিপিএআইম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলায় বিজেপির পৃষ্ঠাপ্রমুখ তপনকুমার ভৌমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন, জানান দেববর্মা।
গত ২ মার্চ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সিপিআইএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলায় বিজেপির ৮ জন কর্মী আহত হয়েছিলেন। বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর গোর্খাবস্তি এলাকায় তপনকুমার ভৌমিক সহ ৮ জন বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হন। তাঁদের জিবি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে তপন ভৌমিক সহ দুজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। কিন্তু আজ সোমবার সকালে চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে তপনকুমার ভৌমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে বড়জলার প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক ডা. দিলীপকুমার দাস এবং আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার জিবি হাসপাতালে ছুটে গেছেন।
মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, ত্রিপুরার পরিবেশ অশান্ত করে তোলার জন্যই সিপিএম-কংগ্রেস মিলে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাঁরা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। অবশ্য সিপিএম বরাবরই সন্ত্রাসের রাজনীতি করেছে, কটাক্ষ করে বলেন তিনি। প্রাক্তন বিধায়ক ডা. দিলীপকুমার দাস বিজেপির পৃষ্ঠাপ্রমুখের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, সিপিএমের হিংসার রাজনীতির তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ডা. দাস বলেন, গোর্খাবস্তি এলাকায় তপনকুমার ভৌমিকের খুবই সুনাম ছিল। বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই ছিল তাঁর পরিচিতি। তিনি কুঞ্জবন স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। নির্বাচনী ফলাফলের দিন তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করেছে সিপিএমের মদতপুষ্ট সমাজদ্রোহীরা। তাতে তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ডা. দাস দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, তপনকুমার ভৌমিকের মরদেহ জিবি হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে গোর্খাবস্তি এলাকায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা মরদেহ নিয়েই রাস্তা অবরোধ করেন। জনৈক বিজেপি কর্মী বলেন, রাজনৈতিক হিংসায় তপনকুমার ভৌমিকের মৃত্যু হয়েছে। অথচ, পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ফলাফল ঘোষণার তপনকুমার ভৌমিক সহ ৮ বিজেপি কর্মীকে মারধরের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থানায় জানানো হয়েছে। অথচ পুলিশ কেবলমাত্র দুজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পলাতক অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন বোধ করেনি পুলিশ। ফলে, আজ তপনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এদিন দীর্ঘক্ষণ গোর্খাবস্তি এলাকায় অবরোধের ফলে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছিল। পুলিশের আবেদনেও বিজেপি কর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহারে রাজি হননি। অবশেষে খবর পেয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা অবরোধস্থলে ছুটে যান এবং পুলিশ ও অবরোধকারীদের সাথে কথা বলেন। তাঁর হস্তক্ষেপে বেলা তিনটা নাগাদ অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে। তিনি বলেন, হিংসায় মদত দেওয়া সিপিএমের বহু পুরনো অভ্যাস। তাঁরা ত্রিপুরায় শান্তি থাকুক, কখনও চায় না। তিনি বিজেপির পৃষ্ঠাপ্রমুখ তপনকুমার ভৌমিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ত্রিপুরা সরকারের কাছে আবেদন রেখেছেন। সাথে তিনি যোগ করেন, সকল দোষীকে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রী সাথে কথা বলবেন।