স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২২ ফেব্রুয়ারি : বিচার বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। সালটা ছিল ২০১৭ -র ২১ নভেম্বর। সেদিন রাজ্যের গর্ব টি এস আর বাহিনীর বণিক্য চৌমুহনীর অদূরে রাধা কিশোর নগরে টি এস আর -এর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানের ক্যাম্পের ভেতরে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক। সেদিন বেলা আনুমানিক ১২ টার নাগাদ কমান্ড্যান্ট তপন দেববর্মার অফিস কক্ষের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিককে।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। আরক্ষা প্রশাসনের সুরক্ষিত অঞ্চলের ভেতরে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে একজন সাংবাদিককে খুন করা হবে, আর এই খুনের সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকবেন না এমনটা হতেই পারে না। এই হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড ছিল কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মা। এমন অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়ের বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ উঠেছিল সুদীপ দত্ত ভৌমিকের মৃত দেহকে উধাও করে দেবারও। পরে সাংবাদিকরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ দেখতে পায়। পরে মাস্টারমাইন্ড চাপে পরে মৃতদেহ জিবি হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনায় পরবর্তী সময়ে পুলিশ কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মা সহ আরো দুজন গ্রেফতার করেছিল। নিম্ন আদালত থেকে পরবর্তী সময়ে এই মামলা গড়ায় উচ্চ আদালতে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর বুধবার ত্রিপুরা হাইকোর্ট সুদীপ দত্ত ভৌমিক হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মার জামিন মঞ্জুর করে।
বরিষ্ঠ আইনজীবী পীযূষ কান্তি বিশ্বাস এ বিষয়ে জানান, ত্রিপুরা হাইকোর্টে সিবিআই -এর আপত্তি মূলে তপন দেববর্মার জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছিল। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তপন দেববর্মা দারস্থ হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের। সুপ্রিম কোর্ট কয়েকটি নির্দেশিকা বিচার বিবেচনা করে তপন দেববর্মাকে জামিন দেওয়া যায় কিনা সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বলেছিল ত্রিপুরা হাইকোর্টকে। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সেই নির্দেশিকা গুলো বিচার বিবেচনা করে বুধবার ত্রিপুরা হাইকোর্ট তপন দেববর্মার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। তপন দেববর্মাকে প্রতি সপ্তাহে এই মামলার তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করার জন্য ও নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআই এর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সরব হয়েছিল সাংবাদিকদের একটা অংশ। তারা দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন এই বিষয়টিকে। মানিক সরকার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সাংবাদিকদের সেই দাবি কোনভাবেই মেনে নেয়নি। সেই সময়ে ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় এলে সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেওয়া হবে সিবিআই -এর হাতে। ২০১৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিবিআই এর হাতে।
২০১৮ সালের পর ২০২৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে সম্পন্ন হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা। প্রশ্ন হলো সিবিআই -এর তদন্ত চলাকালীন সময়ে সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মাস্টার মাইন্ড তপন দেববর্মা কিভাবে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। গুঞ্জন সর্বত্র। আসলে তদন্ত প্রক্রিয়া ঢিলেঢালা করে মামলা গুছাতে চেষ্টা করছে একটা অংশ। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের দাবি সুষ্ঠু বিচার।