স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১১ ফেব্রুয়ারি : নিজের দুষ্কর্ম থেকে বাঁচাতে এবং পীঠ বাঁচাতে ত্রিপুরায় এসে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী সভা থেকে অসত্য কথা বলছেন। এর তীব্র প্রতিবাদ জানালেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি শনিবার সিপিআইএম রাজ্য দপ্তরের আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, শনিবার রাজ্য সফরে এসে দেশের প্রধানমন্ত্রী মানুষকে আরও একবার বিভ্রান্ত করার জন্য অসত্য কথা বলে গেছেন।
গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরায় বিজেপি এবং আইপি একটি জোট সরকার কোন প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেনি। ২০১৮ সালে প্রতিশ্রুতির ডালি সাজিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু আজকে নির্বাচনী প্রচারে ত্রিপুরায় এসে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি গুলি কেন পালন করতে পারেননি সে বিষয় নিয়ে কোন কিছুই বলেননি। বছরে পঞ্চাশ হাজার চাকুরি, ১০ হাজার ৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্থায়ী সমাধান, ২০০ দিনের রেগা কাজ সহ যতগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলি কেন পালন করতে পারেন নি সে বিষয় নিয়ে কোন কিছুই বলেননি প্রধানমন্ত্রী। এবং কেন করতে পারেননি বা কে তাদের হাত চেপে রেখেছিল সে বিষয় নিয়েও মুখ খুলে নি প্রধানমন্ত্রী। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলির দৃষ্টিভঙ্গি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে তিনি রেল পরিষেবা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন। ত্রিপুরার রেল পরিষেবা যুবকদের আন্দোলনের ফসল। পূর্বতন সরকারের আমলে রাজ্যের যুবকরা আন্দোলন করে রাজ্য সরকার কর্তৃক কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজি করিয়ে রেল পথ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ দিয়ে কলকাতা পর্যন্ত রেল পরিষেবা চালু করার ব্যবস্থা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ পরিষেবা পালাটানায় চালু করার জন্য বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করায় ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার পর একটি ভাগ বাংলাদেশকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলি ২০১৮ সালে বিজেপি এবং আই পি এফ টি জোট সরকার আসার পর হয়নি। রাজ্যের মানুষকে এগুলি নিয়ে বিভ্রান্ত করে বেকুব বানাতে চাইলে ভুল করছেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের দুষ্কর্ম এবং পীঠ বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী এগুলি বলে গেছেন ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে এসে। এবং গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরায় লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে যতগুলি নির্বাচন সংগঠিত হয়েছে সবগুলি নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। আর তাদের নিয়ে এই মন্ত্রীসভা গঠন করছেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে প্রধানমন্ত্রী বেকাদায় পড়েছেন। তাই অসত্যের স্থান নিচ্ছেন তিনি। বামফ্রন্ট সরকার দীর্ঘ ২৫ বছর ত্রিপুরা মৌলিক পরিকাঠামোর দিকে জোর দিয়েছে। কেন্দ্র টাকা না দিলে তার জন্য লড়াই করেছে। কেন্দ্রের আগের সরকারকে বাধ্য করেছে অর্থ দেওয়ার জন্য। তাই এই ধরনের সংকীর্ণতা সিপিআইএমের রাজনীতিতে নেই বলে জানান মানিক সরকার। জনজাতি প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন জনজাতিদের জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন তিনি।
এটা কুমিরের কান্না ছাড়া আর কিছু নয়। টিটিএডিসি হয়েছে এই বামফ্রন্ট সরকারের জন্য। তাই ভাষনেই হতাশার ছাপ প্রধানমন্ত্রীর। এডিসি’কে শুকিয়ে মারার চেষ্টা করছে। বিজেপি এডিসিতে ক্ষমতায় আসতে না পেরে এখন জনজাতিদের কোন ধরনের সহযোগিতা করছে না। জনজাতিদের জীবন বিপন্ন। অনাহারে ভুগছেন জনজাতি অংশের মানুষ। এগুলি প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলন ছাড়া হচ্ছে না। রাজ্যে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে আছে। জালিয়াতি করে একের পর এক নির্বাচনে জয় নিচ্ছে তারা। জঙ্গলেরও কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে। বিজেপির শাসন জঙ্গলে শাসনকে হার মানিয়ে দিয়েছে বলে জানান মানিক সরকার। বিরোধী দলনেতা এদিন আরো বলেন প্রধানমন্ত্রীর এখন মূল মাথা ব্যথা হল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট কাছাকাছি আসা নিয়ে। কিন্তু এই বিজেপির সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় বাধ্য করেছে দুই দলকে কাছাকাছি আসতে। মানুষ চাইছে এই সরকার থেকে মুক্তি হতে। যার ফলে এখন বিজেপি এবং আইপিএফটি দুই দল থেকেই মানুষ ছেড়ে আসতে শুরু করেছে। বিজেপির নৌকায় জল প্রবেশ করায় ডুবে যাচ্ছে। মানুষ ঝাঁপ দিয়ে নৌকা থেকে পড়ে যাচ্ছে বলে সমালোচনা করলেন জানান শ্রী সরকার।