স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৫ জানুয়ারি : আবার এসেছেন রথে চড়ে প্রচার করার জন্য, মানুষকে মিথ্যে কথা বলে বিভ্রান্ত করে এবং স্বপ্ন দেখিয়ে আবার ভোট আদায় করার জন্য। এটা উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশ নয়। এটা ত্রিপুরা রাজ্য। রাজ্যের মানুষ রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট সচেতন। মানুষ বুঝে গেছে বিজেপি একটা জুমলা, মিথ্যাচার, ঠগবাজ, বাটপারের পার্টি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথা কেউ কর্ণপাত করবে না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।
বৃহস্পতিবার নলছড় বাজারে কংগ্রেসের পথসভায় বক্তব্য রেখে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন আরো বলেন, যারা গত পাঁচ বছর অন্যায় ভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন তারাই বিজেপি বিজেপি করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিজেপির মিছিল মিটিংয়ে যাচ্ছে। তাদের দেহ বিজেপির সাথে যাচ্ছে, মন বিজেপির সাথে নেই বলে জানান তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৈত্রিক বাসভবন সংলগ্নে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ৩ জানুয়ারি উদয়পুর মহকুমা জামজুড়িতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের পৈতৃক বাসভবনে সামনে দোকানে অগ্নিসংযোগ করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা ন্যাশনাল মিডিয়া মধ্যে অপপ্রচার করেছে নাকি বিরোধীরা বিপ্লব কুমার দেবের বাসভবনে অগ্নি সংযোগ করেছে। আর এটা বিভিন্ন ন্যাশনাল চ্যানেল ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এদিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে থাকা সাধু সন্তরা বলতে শুরু করেছে সারা দেশের মতো এদিন বিজেপি একটা অংশের মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।
কিন্তু শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এবং সেখানে সমস্ত অংশের মানুষ সহ গ্রামবাসী বিজেপি এই অপপ্রচার বানচাল করে দেয়। এবং সম্মিলিতভাবে তাদের এ সাম্প্রদায়িক অপপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে। আর এটাই হলো রাজ্যের সংস্কৃতি এবং দেশের পরম্পরা। বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ সাম্প্রদায়িক অপপ্রচেষ্টা করেছে। পরের দিন যখন খবরের কাগজে এই ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার হলো তখন ত্রিপুরা হাইকোর্টে একটি স্ব-মুঠো মামলা গ্রহণ করে সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। হাইকোর্টের এই পদক্ষেপে কংগ্রেস আপ্লুত। এই ধরনের ঘটনা আগেও সংঘটিত হয়েছে রাজ্যে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যখন ধনপুরে গিয়েছিলেন তখন তার উপর আক্রমণ হয়েছিল। ভানু লাল সাহার উপরও দুবার আক্রমণ হয়েছে, বিধায়ক সুধন দাসও দুবার আক্রান্ত হয়েছেন এবং তিনি নিজেও তিনবার আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সবগুলি ঘটনা ধাপাঝাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু খুশি হওয়া যেত যদি তখন বিচারপতিরা খবরের কাগজ পড়ে স্ব-মুঠো মামলা গ্রহণ করতেন। তখন বিচারপতিরা মামলা গ্রহণ করেন নি। এতে বোঝা যায় দেশ এবং রাজ্য কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে বলে জনসভায় বক্তব্য রেখে বলেন শ্রী বর্মণ। রাষ্ট্রপতি কলার্স প্রাপ্ত পুলিশের এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কোন বক্তব্য নেই, কিন্তু কষ্ট হয়। কারণ এই পুলিশ ইউনিফর্ম পরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। যার ফলে এই রাজ্যে সব দিক দিয়ে অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। গত একমাস আগে চড়িলাম বাজারে সহীদ মিঞা নামে একবার বয়জ্যেষ্ঠকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুন করেছিল দুর্বৃত্তরা, এই ঘটনায় আটক হয়েছিল দুজন। কিন্তু তাদের জামিন হয়ে গেছে বুধবার। আর অন্য একটি ঘটনায় যারা জেলে রয়েছেন তারা এখনো জামিন পাচ্ছে না। কিন্তু ৯০ দিনের আগে কোন বিচারপতিকে বক্তব্য শোনার কথাই নয়। কিভাবে জামিন পেয়ে গেল। তাই বলা হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের রাজত্বে এক জঙ্গলের শাসন চলছে ত্রিপুরায়। এটাই এই দুটি ঘটনার উদাহরণ। অন রেকর্ড বলা হচ্ছে সিপিআইএম সরকারের ২৫ বছর এবং কংগ্রেসের আমলে এ ধরনের ঘটনা ত্রিপুরা রাজ্যে ঘটলে আইনিভাবে শাস্তি পেয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাই বলা হচ্ছে এই সরকারের আমলে ত্রিপুরা রাজ্যে গণতন্ত্র নেই, সংবিধান অচল। তাই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য ময়দানে নেমেছে কংগ্রেস। তাই বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য সরকার পরিবর্তন করার আহ্বান জানান সুদীপ রায় বর্মন। আরো বলেন কংগ্রেস কসম খেয়ে ময়দানে নেমেছে যে বিষ বাতাসে ছড়াচ্ছে এবং ধর্মের নামে রাজনীতি করতে চাইছে তাদের পরাস্ত করতে হবে। তাই সকলকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান শ্রী বর্মন। আয়োজিত সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা, ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ও জেলা কংগ্রেস সভাপতি সহ অন্যান্যরা। সভার পর ৫৩ পরিবারের ২৩৪ ভোটার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছেড়ে কংগ্রেসের যোগদান করেন। তাদের হাতে তুলে পতাকা তুলে দিয়ে দলে স্বাগত জানান সুদীপ রায় বর্মন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।