স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৩ নভেম্বর : চেনা ছন্দ হারিয়ে গেল বটতলা বাজারের। দাম্ভিক নিগমের উচ্ছেদের ঘটনায় ব্যবসায়ী মহলে চরম ক্ষোভ। শহর কাঁপিয়ে মিছিল করে তীব্র বিরোধিতা করল ব্যবসায়ী মহল। উল্লেখ্য, আগরতলা পুর নিগম বুল ডোজার দিয়ে বটতলা এলাকায় দোকানপাট উচ্ছেদের ঘটনা সংঘটিত করার প্রতিবাদে বাজার বনধের পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল আগরতলা শহরে সংগঠিত হয়। তাদের অভিযোগ বাজারে বুল ডজার চালিয়ে দোকান ভেঙ্গে ফেলার কোন আগাম নোটিশ দেয়নি পুর নিগম। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বটতলা বাজারে বুল ডজার চালানোর মতো ঘটনা ঘটেনি। বুধবার সকাল থেকেই বটতলা বাজারের সমস্ত দোকান বন্ধ ছিল।
অনেক ক্রেতাই বাজার মুখী হয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে বাধ্য হন। বটতলা বাজার জুড়ে ঘটনার প্রতীবাদ জানিয়ে ফ্যাস্টুন লাগায় বটতলা উদ্বাস্তু বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অবৈধ মদের ঠেক বন্ধ করতে পারে প্রশাসন। কিন্তু দোকান ভাংচুর করা মেনে নেওয়া যায় না। এই অভিযানের প্রতীবাদ স্বরূপ বাজার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিন চেনা ছন্দে ছিল না বটতলা বাজার। ছিল না লোক জনের ভীড়। গোটা বাজার ছিল শূন্য ও স্তব্ধ।
এদিকে বুধবার সকালে বটতলা উদ্বাস্তু বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে শহরে এক প্রতীবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করা হয়। মিছিলটি বটতলা বাজার থেকে শুরু হয়ে শহর পরিক্রমা করে আবার বটতলা বাজারে গিয়ে শেষ হয়। বটতলা উদ্বাস্তু বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানান বটতলা বাজারে অনৈতিক ভাবে বুল ডজার দিয়ে দোকান ভাঙ্গা হয়েছে। তার প্রতীবাদে মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। তিনি রাজ্যের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কাছে এদিন বাজার বন্ধ রাখার জন্য যে অসুবিধা হয়েছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। আগামী দিনে এই ধরনের অভিযান চালানোর আগে বটতলা উদ্বাস্তু বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস না পেলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এদিনের মহামিছিলে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে।
অভিযান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মেয়র দীপক মজুমদার জানান বটতলা বাজারে দীর্ঘ দিন ধরে বেআইনি ভাবে মদের ঠেক চলত। এগুলি রাজ্যের মানুষ অবগত ছিল। এই অবৈধ মদের ঠেক গুলি পুর নিগম আরক্ষা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভেঙ্গে দেয়। পাশাপাশি যারা বেআইনি ভাবে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করত এবং পার্কিং করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাত তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জয়নগর মধ্য এলাকায় বর্ষায় জল জমে যায়। তার জন্য একটি ড্রেইন নির্মাণ আবশ্যক। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী অবৈধ ভাবে জায়গা দখল করে রাখায় এই কাজ ব্যহত হচ্ছিল। আগামী বর্ষার আগে ড্রেইন নির্মাণ করা হবে। এতে খুশী জয়নগরবাসী। কিছু অসাধূ ব্যবসায়ী বাদে সকলে খুশি। সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার ও পুর নিগম। এই মদের ঠেক ভাঙ্গার পর বিরোধী দলনেতা তাদের পক্ষ নিলেন। যারা এভাবে নেশার ব্যবসা করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা না বলে তাদের পক্ষ নিলেন তিনি। তাদের রাজনীতি করার আর কিছুই নেই। তাই তারা এই পথ অবলম্বন করেছেন বলে কটাক্ষ করেন মেয়র। একে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে। যে সমস্ত বাজার গুলিতে এই ধরনের অবৈধ নেশার ঠেক চলছে সেগুলি বন্ধ করার জন্য বাজার সমিতি উদ্যোগ না নিলে কড়া পদক্ষেপ নেবে পুর নিগম ও আরক্ষা প্রশাসন। বটতলা বাজার বনধ ডেকে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। তাই বনধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান। এভাবে বাজার বন্ধ রাখা হলে বাজার থেকে ক্রেতারা চলে যাবে। ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদের। বটতলা বাজারের ব্যবসায়ীরা কোন ট্যাক্স দেয় না। তার পরেও পরিষেবা প্রদান করে চলেছে পুর নিগম। যারা রাজনীতির জন্য রাজনীতি করে চলেছে তারাই দূরত্ব তৈরি করছে। বটতলা বাজার যাতে সুন্দর ভাবে চলে তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুর নিগম বলে জানান মেয়র। অভিযানের সময় ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা ছিলেন। সেই সময় তারা কিছুই বলেন নি। পরে ভিন্ন সুর তাদের মুখে। তিন দিন আগে মাইকিং করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগাম জানানো হয়েছে । তাই বেআইনি কোন কাজ হয়নি বলেও জানান তিনি। সরকার ও পুর নিগম স্বচ্ছ ভাবে কাজ করছে বলে স্পষ্ট জানান তিনি। আলোচনার টেবিল খোলা রয়েছে। কিন্তু বনধ প্রত্যাহার করে আসতে হবে বলে জানান মেয়র।
বটতলা বাজার নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে পুর নিগমের মেয়র স্পষ্ট করে দেন বেআইনি ঠেকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোয় আঁতে ঘা লাগে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের। তাই তারা এই পন্থা নিয়েছে। বিরোধীরা এই নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত। তিনি সতর্ক করে দেন যে সমস্ত বাজারে এই ধরনের অবৈধ নেশার ঠেক চলছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে পুর নিগম। বনধের পথ পরিত্যাগ করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন মেয়র দীপক মজুমদার।
এদিন বাজারে এসে বহু ক্রেতা বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে অধিকাংশই সরকার পক্ষে সংগঠন। এবার বিজেপি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পুর নিগমের বিরুদ্ধে এই ব্যবসায়ী মহলে যুদ্ধ ঘোষণা বলে মনে করছে অনেকে।