স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২১ নভেম্বর : নির্বাচনের নির্ঘণ্ট বাজতেই শুরু হয়েছে রাজ্যে সন্ত্রাসের বাতাবরণ। আর নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে শহরের সন্ত্রাস ততই মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। এমনটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে রাজ্য রাজনীতিতে। বিশেষ করে আগরতলা পুর নিগম কামড়ে ধরতে মরিয়া বিজেপি। এবং মর্যাদার লড়াই হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বদের।
কিন্তু এরই মধ্যে রবিবার দুপুরে ফের আরও একবার পরিস্থিতি সহ সগরম হয়ে উঠলো। পুলিশের সামনেই আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। মারধর করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর পূর্ব মহিলা থানার গণ্ডিতে। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেত্রী সায়নী ঘোষকে পূর্ব মহিলা থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের শতাধিক কর্মী সমর্থকও এসে লাঠিসোটা নিয়ে থানা এলাকায় জড়ো হয়। তখন দুর্বৃত্তরা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের গাড়ি।
আহতদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় জিবি হাসপাতালে। ঘটনায় পুলিশের সামনে ঘটলেও পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ নির্বিকার। পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি এদিন বলে অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেত্রী সায়নী ঘোষকে পূর্ব মহিলা থানায় ডাকা হয়েছিল শনিবার সন্ধ্যায় ইন্দ্রনগর এলাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু থানায় দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় দুর্বৃত্তরা দলগতভাবে এসে হামলা চালায় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের উপর। বেশ কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী গুরুতর আহত হয়। তবে এদিন এ ঘটনার বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, রবিবার সকালে হোটেলে এসে পূর্ব মহিলা থানার পুলিশ গিয়ে জানায় সায়নী ঘোষকে থানায় যেতে হবে। পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন থানায় যেতে হবে। এবং কোন মামলায় সায়নী ঘোষকে থানায় নিয়ে যেতে পুলিশ এসেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পুলিশ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এমনকি পুলিশ কোনো নোটিশ ছাড়াই সায়নী ঘোষকে হোটেল থেকে আনতে গিয়েছিল বলে জানান কুনাল ঘোষ। এবং পুলিশ কোন ধারায় সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহন করেছে সে বিষয়েও কোনো উত্তর দিতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে সৌজন্যতা দেখাতে থানায় আসে সায়নী ঘোষ। কিন্তু দেখা গেল হিন্দি সিনেমার মতো গুন্ডামি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। এবং এর পেছনে জড়িত পুলিশ। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের পুলিশ থানায় ডেকে এনে মার খাইয়েছে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রমেশ যাদব ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও বিজেপি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরা রাজ্যে অশান্তি করতে আসেনি। কিন্তু ত্রিপুরা বিজেপি যে গণতন্ত্র তৃণমূল কংগ্রেসকে ত্রিপুরার মাটিতে শেখাতে চাইছে সেই গণতন্ত্র পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে শিখিয়ে দেবে তৃণমূল কংগ্রেস বলে আঙ্গুল তুলে হুঁশিয়ারি দেন কুনাল ঘোষ।
এদিকে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক জানান পুলিশ কোনো ভূমিকা গ্রহণ করছে না বিজেপির দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরও ত্রিপুরা রাজ্যে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। রাজ্যসভার সংসদ সুস্মিতা দেব জানান থানাতে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা সুরক্ষিত নয়। থানায় ডেকে আনা হয়েছে এ ধরনের সন্ত্রাস করানোর জন্য। আর এতে জড়িত সম্পূর্ণভাবে পুলিশ বলে জানান তিনি।
পরবর্তী সময় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আইনজীবী থানায় গিয়ে জানতে চান সায়নী ঘোষকে থানায় কেন ডাকা হয়েছে। এবং সে বিষয়ে পুলিশের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর আইনজীবী জানান বিশ্বজিৎ দেবনাথ নামে একজন ব্যক্তি সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সায়নী ঘোষ শনিবার সন্ধ্যায় আশ্রম চৌমুহনি এলাকায় বিজেপি সভা চলাকালীন সময়ে কটুক্তি করেছেন এবং ডিল দিয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশ কোনো নোটিশ ছাড়াই সায়নী ঘোষকে থানায় ডেকে এনেছে বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। রবিবার দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে জানান, বিপ্লব দেব এতটা নির্লজ্জ হয়ে গেছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পর্যন্ত মানতে চাইছেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের, কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে গুন্ডা পাঠিয়েছেন আক্রমণ করতে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ঘটনার পর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ এবং টিএসআর বাহিনী সহ আধা সামরিক বাহিনী।