স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৭ নভেম্বর : নির্বাচন কমিশনারের কাছে বুধবার অভিযোগ জানাল বামফ্রন্ট। আসন্ন নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় এর জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সাথে বুধবার দুপুরে সাড়ে বারোটা নাগাদ বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করেন। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্টের আহবায়ক নারায়ণ কর, সিপিআইএম মনোনীত প্রার্থী জিতেন চৌধুরী, ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পাদক দুলাল দেব, সি পি আই নেতা বিক্রমজিৎ সেনগুপ্ত, আর এস পি নেতা দীপক দেব। নির্বাচন কমিশনার এম এল দে’কে বলা হয়েছে গত ২১ অক্টোবর আপনার আমন্ত্রণ পেয়ে বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল এসে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলো।
তারপর নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন, রাজ্য পুলিশ সহ প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পায়নি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীদের বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি এবং প্রাণনাশের চেষ্টা করা সহ বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা করেছে শাসক দলের দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো মামলা পুলিশের কাছে করার পরেও একজনও গ্রেফতার হয়নি। এটি কি আপনার শাসন প্রশাসন? তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় নির্বাচন কমিশনারকে। নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান বামফ্রন্টের আহবায়ক নারায়ণ কর। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনারকে আরও বলা হয়েছে ধর্মনগর থেকে সাব্রুম পর্যন্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কোন ধরনের প্রচার সজ্জা লাগিয়ে রাখতে পারছে না। ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন লাগানো এক ঘণ্টার মধ্যে তুলে নিচ্ছে। আর এটাই কি আপনার সাংবিধানিক পদে আসীন থেকে দায়িত্ব পালন করার দিক। এমনকি শাসক দলের দুর্বৃত্তরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে বামপন্থী কোন প্রার্থী এবং কোন কর্মী যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য তারা ব্যবস্থা নেবে।
তাই এর বিরুদ্ধে আপনাকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে প্রত্যেক পোলিং এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা সাথে নিয়ে যাওয়া এবং ভোট কেন্দ্র থেকে নিরাপত্তার সাথে তার অফিসে বা নিজ বাড়িতে নিয়ে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে ৪৮ ঘন্টা আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেউ ঢুকতে পারবে না ভোট কেন্দ্রে। শুধুমাত্র পুলিশ থাকবে। কারণ বিজেপি আশ্রিত বাইক বাহিনী এবং গুন্ডারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিরোধীদলের প্রার্থী এবং কর্মীদের ২৪ নভেম্বর থেকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার জন্য। তাই প্রত্যেকটি এলাকায় বহিরাগত কোন মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না। দ্বিতীয়তঃ ওয়েব কাস্টিং -এর ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে দুর্বৃত্তরা চিহ্নিত হতে পারে। কারণ এখন যে পরিবেশ রাজ্যে জারি রয়েছে তাতে কখনো সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে না। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা মাধ্যমে নির্বাচনে আইন লঙ্ঘন করে মানুষের একাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘুষ দিচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে কোন মামলা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এদিকে রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে বসিয়ে রেখে বলছেন, হাজার হাজার ভোট চাই। তার জন্য তিনি বলেন বিরোধী দলের প্রার্থীদের দেখলেই দৌড়ানো শুরু করার জন্য বলছেন। তাই দাবি করা হয়েছে সেই বিধায়ককে যাতে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হয়। এইগুলি দাবি জানানোর পর নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন তিনি জেলাশাসক বলবেন যাতে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেন। নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকায় এখন সবচেয়ে বড় বিষয় বলে জানান শ্রী কর। সংবিধানে নির্দিষ্ট ধারায় একটি প্রতিষ্ঠান হলো নির্বাচন কমিশনার। রাজ্যে জোট সরকার প্রতিষ্ঠার পর রাজ্য নির্বাচন কমিশন তার গরিমা দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এতে বামফ্রন্ট প্রার্থী না এবং কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এমনকি যে আরোক্ষা দপ্তর রাষ্ট্রপতি দ্বারা সম্মান পেয়েছে সেই আরক্ষা দপ্তর পর্যন্ত এখন তার সুনাম ও গরিমা হারাচ্ছে। তাই নির্বাচন কমিশনারকে বলা হয়েছে তিনি যাতে রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের ডেকে এনে সুনাম রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করতে সজাগ করেন। আর এখন সবটাই নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকার উপর নির্ভর বলে জানান সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ভোট গণনার দিন প্রত্যেক কেন্দ্রের রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনারকে। পাশাপাশি ধর্মনগরের মহকুমা শাসকের ভূমিকায় বিষয়ে উনাকে অবহিত করা হয়েছে। সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তি উপাধ্যক্ষ বিশ্ব বন্ধু সেন আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে ধর্মনগর পুর পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সিপিআইএম মনোনীত প্রার্থী নিকুঞ্জ দেবনাথকে দীপাবলি দিন বাড়ি থেকে তুলে এনে মহকুমা শাসককে দিয়ে অফিস খুলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ফর্ম পূরণ করেছেন। একজন মহকুমা শাসকের কাছ থেকে এ ধরনের বেআইনি কাজ আশা করা যায় না। এখন পর্যন্ত সেই মহকুমার শাসক এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলেননি। একজন মহকুমা শাসক হয়ে সেই বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়ে উপাধ্যক্ষের সাথে মনোনীত প্রার্থী ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার কেড়ে নিলেন। এমনকি শুধু তাই নয় সেই মহাকুমার শাসক সেদিনের সমস্ত ঘটনা লোপাট করে নিয়েছেন। এটা ফৌজদারি অপরাধ। সেই মহকুমা শাসকের বরখাস্তের দাবি সহ গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। আরো অভিযোগ জানানো হয় ধর্মনগর থেকে সাব্রুম পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের পোস্টার লাগিয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য যে আবেদন লাগানো আছে, তা অবিলম্বে খুলে ফেলার দাবি জানানো হয়েছে। কারণ বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগে এ ধরনের প্রচার খুলে নেওয়া হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের প্রচার খোলা হচ্ছে না। তাতে নির্বাচন বিধি ভাঙছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।