স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৬ সেপ্টেম্বর : পাট্টা প্রদানের নামে বাম সরকার রাজনীতি করে গেছে। সীমানা নির্ধারণ না করে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে অনেককেই। সেই সমস্ত অবৈধ পাট্টা প্রাপকদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার স্বচ্ছতা ও সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এতে কেউ যাতে সন্দেহে না থাকেন । মঙ্গলবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে এই কথা বলেন মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া। রাজ্য সরকার জনজাতি গোষ্ঠী আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষভাবে সচেষ্ট এবং জনজাতিদের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে সার্বিক গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়িত করে চলেছে। এজন্য নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার পাশাপাশি জনজাতি উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে পর্যালোচনা করে সময় ও পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে আরও বাস্তবমুখী করে তোলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিকাঠামগত উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, কলা সংস্কৃতি ও চির ঐতিহ্য সমূহের সংরক্ষণ এবং পুনরুজ্জীবন, সাংবিধানিক ও পরস্পর্গত অধিকারসমূহ সুনিশ্চিত করা। বনাধিকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনজাতিদের আর্থিক বিকাশ সুনিশ্চিত করার জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন ৬৫ টাকা করে শিক্ষাবর্ষে ছাত্রাবাসের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ২৭ হাজার ৩৬১ জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্রাবাস ব্যক্তি প্রদান করা হয়েছে। কিভাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম এবং নবম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রাবাস বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। একাদশ বা উচ্চতর শ্রেণীতে পাথরত জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। মেধা পুরস্কার প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ, মৌলিক বিষয়ের উপর বিশেষ কোচিং, এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদানের কাজ করছে জনজাতি কল্যাণ দপ্তর। ২০২২ ২৩ অর্থবর্ষে অষ্টআশিটি সরকারি বোডিং হাউস এর মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১৫ কোটি টাকার উপর ধার্য করা হয়েছে। সেগুলির কাজ চলছে বলেও জানান মন্ত্রী। ২১১ হোস্টেলে অন লাইনে ক্লাসের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মডার্ন এডুকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সমৃদ্ধি করার জন্য জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের কিন্ডার গার্ডেন থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত নতুন একটি পরিকল্পনা চালু করা হয়েছে। কোন শিক্ষকের বাসভবনে মাসিক কুড়ি দিন এই স্কিম আওতায় শিক্ষা প্রদান করা হবে।
প্রতিটি কেন্দ্রে একটি ইউনিটে ১৫ জন শিক্ষার্থী এবং সর্বাধিক ২৫ জন শিক্ষার্থীকে নথিভুক্ত করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা গুলিতে এই প্রকল্প চালু করা হবে বলে জানান তিনি। এর জন্য শিক্ষকদের জন্য বেসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাম সরকার থাকাকালীন সময়ে বনাধিকার আইনে সীমানা নির্ধারণ না করে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। পাট্টা প্রদান করা হলেও জমির মালিকের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি বহু ক্ষেত্রে। বাম সরকার রাজনীতি করার জন্য এটা করেছে। এর জন্য বেশ কিছু নাম বাদ গেছে। আবার দেখা গেছে অনেকে চাকুরী করেন তাদের জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত অবৈধ নাম গুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। বর্তমান সরকার স্বচ্ছতা ও সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ যাতে সন্দেহে না থাকে তা স্পষ্ট করে দেন মন্ত্রী। চাকুরী প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হচ্ছে। স্বচ্ছতা বজায় রাখলেই মানুষ তার সুবিধা নিতে পারবে বলে জানান তিনি। বর্তমানে ১৬ টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল স্থাপনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য জমি নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে ৯ টির কাজ শেষ হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তা চালু করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। করবং সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য পানীয় জল, রাস্তা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। কেন করবং সম্প্রদায়ের মানুষ কমে যাচ্ছে তা দেখার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে বলা হয়েছে। মাসে একটি করে স্বাস্থ্য শিবির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া। লিংক মডেলে শূকর পালনের জন্য ত্রিপুরা সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তর একটি নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। একই সঙ্গে ক্রেডিট লিংক মডেলে ছাগল পালানোর জন্য জনজাতি কল্যাণ দপ্তর নতুন প্রকল্প চালু করেছে। জনজাতি সম্প্রদায়ের অর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অধ্যায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লাস্টার গঠনের মাধ্যমে একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জনজাতি অধ্যুষিত ব্লকে যোগাযোগ, অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক ও রাজ্য সরকার প্রকল্প তৈরিতে সহায়তা করেছেন। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ২৩ টি জনজাতির অধ্যুষিত ব্লকে এবং বারোটি পিছিয়ে পড়া ব্লকে শিক্ষা, যোগাযোগ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে জোর দেওয়া। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ রাজ্য সরকারের সহায়তায় প্রকল্পটি রূপায়িত হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া।