Thursday, November 13, 2025
বাড়িরাজ্যহাসপাতাল গিয়ে আহতদের খবর নিলেন সুদীপ ও জিতেন্দ্র চৌধুরী, সরকারের নিন্দা জানান...

হাসপাতাল গিয়ে আহতদের খবর নিলেন সুদীপ ও জিতেন্দ্র চৌধুরী, সরকারের নিন্দা জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, বনধের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বললেন রঞ্জিত

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ২৪ অক্টোবর :  বনধ ঘিরে কমলপুরে আক্রান্ত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মীরা। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতের বেলা ধলাই জেলা হাসপাতাল থেকে জিবি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে জিবি হাসপাতালে ছুটে গেলেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা বনধকে কেন্দ্র করে বনধ সমর্থকরা হামলা চালায় সালেমা ব্লকের বিডিও অভিজিৎ মজুমদার, ইঞ্জিনিয়ার সহ বেশ কয়েকজনের উপর। এতে গুরুতর আহত হয় তিন জন। তারা বর্তমানে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের দেখতে শুক্রবার জিবি হাসপাতালে ছুটে যান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। জিবি হাসপাতালে গিয়ে তিনি কথা বলেন আহতদের সাথে। অবগত হন ঘটনার বিষয়ে। তারপর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে কথা বলে আহতদের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

 সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ জানান রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। তা কমলপুরের ঘটনা থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। পুলিশের সামনে সালেমা ব্লকের বিডিও ও ইঞ্জিনিয়ারকে মারধর করা হয়েছে। সুদিপ রায় বর্মণ প্রশাসনের নিকট আহ্বান জানান বনধের আহ্বায়ক ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অপরদিকে এই ঘটনা নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্র বলে ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তিনি বলেন বৃহস্পতিবার যে বনধের আহ্বান করা হয়েছিল সেটা সরকারের নৈতিক সমর্থনে হয়েছে। তাই বিজেপি বনধের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। আসলে বিজেপি এবং তিপরা মথার মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে জনগণ। তাই নতুন চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছে তারা। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে বনধের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু বনধ ডাকার অধিকার প্রত্যেক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের রয়েছে। মানুষ যদি বনধ সমর্থন না করে সেটা মানুষের বিষয়।

বামফ্রন্ট সরকারের সময়েও দেখা যেত বনধ ডাকা হলে কিছু মানুষ দোকানপাট খুলে রাখতো। কিন্তু এর জন্য বনধ মানতে কাউকে বাধ্য করা হতো না। অথচ বৃহস্পতিবার বনধ সমর্থন না করায় কমলপুরের শান্তির বাজার এলাকায় কিছু বনধ সমর্থনকারী দোকানপাট খোলা দেখে আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের মত অপরাধমূলক কার্যকলাপ সংঘটিত করেছে। এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায় রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম। তিনি আরো বলেন, যারা বনধের ডাক দিয়েছে তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, তারা কিছু মানুষকে চিহ্নিত করে ত্রিপুরার বাইরে পাঠাতে চাইছে। কিন্তু এটা কোন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব একমাত্র সরকার নিতে পারে। আর এটা জেনেও বনধের নাম করে রাজ্যের পরিবেশ এবং পরিমণ্ডল বিষাক্ত করার চেষ্টা করছে বলে তিপরা সিভিল সোসাইটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এদিকে জিবি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়ে ঘটনা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেছেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, বিজেপি ও তিপরা মথার গট আপ গেইম। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনীতিতে যে একটা বর্বরতা চলছে তার উলঙ্গ ও নিকৃষ্টতম এবং নিন্দনীয় উদাহরণ হল এই ঘটনা। তিনি বলেন এদিন ঘটনার সময় পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। কিন্তু জনগণের ধৈর্যের কারণে অন্য কোন জায়গায় যে আর এমন ঘটনা ঘটেনি সেটা সকলের সৌভাগ্য। তারপরও রাজ্য সরকারের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিব এবং ডিজেপির মনের মধ্যে কোন জংশন আছে বলে মনে হয় না। বলেন তিনি আরো বলেন, এই বনধ হলো বিজেপি এবং তিপরা মথার ডুবন্ত নৌকা বাঁচানোর চেষ্টা। আরো বলেন যে দাবিগুলি নিয়ে তারা বনধ ডেকেছিল সেগুলি রাজ্য সরকারের সমাধান করার মতো বিষয় নয়। সবগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়।

কিন্তু রাজ্যে এ ধরনের কার্যকলাপ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবি ঝুলিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তাই রাজ্যবাসীকে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে চক্রান্ত রুখতে হবে বলে জানেন বিরোধী দলনেতা। বনধ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা বললেন, এটা সরকারের মিলি ঝুলি বনধ। মানুষকে অসুবিধায় ফেলতে এবং নির্বাচনের লাভা লাভ নিতে এই বনধ ডাকে তারা। তিনি আরো বলেন এ রাজ্যের শাসক জোট জনসমর্থন হারিয়ে দিশেহারা। পাহাড় সমতল সর্বত্র তাদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। এক কথায় সাধারন মানুষ এই সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই প্রতার অন্তরে সন্ত্রাসী ভূমিকা বলে দাবি করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। পাশাপাশি বলেন, জনগণ জোট সরকারের মিলি ঝুলি এই বনধ প্রত্যাখ্যান করে বুঝিয়ে দিয়েছে আগামী দিন তাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হয়ে আছে। পাশাপাশি বনধের আহ্বান করা সংগঠনের নেতা তথা প্রাপ্তন জঙ্গি নেতা রঞ্জিত দেববর্মা বলেন বৃহস্পতিবার বনধ সফল হয়েছে। এটা রাজ্যের ইতিহাস হয়ে থাকবে। কমলপুরের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দা জনক। এটা পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আহতদের খোঁজখবর নিতে তিনি জিবি হাসপাতাল যাবেন। এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় অংশের মানুষের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করবেন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে। পাশাপাশি তিনি বলেন সাংবিধানিক অধিকারের জন্য তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য