স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ১০ অক্টোবর :বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপর অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের পক্ষ থেকে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদে পুনর্বিবেচনার জন্য ডেপুটেশন প্রদান করা হয়। অপরদিকে শিক্ষা ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই এবং টি এস ইউ। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে মুখোমুখি হলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনের স্বার্থে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফি করতে হয়েছে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। তবে দেশের অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি অনেক কম বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তারের মানিক সাহা। এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের বিকাশকে পেছন দিকে ফেলে দিতে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি করেছে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদের ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায়। আরো বলেন, যদিও বলা হয় পর্ষদ স্বাধীন। কিন্তু সরকারের আঙ্গুলি হেলন ছাড়া এবং সরকারের মদত ও সঙ্গতি ছাড়া ফি বৃদ্ধি হয় না। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার গুনগত মান উন্নয়নের সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। বছরের পর বছর ধরে একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষক স্বল্পতা চলছে। আবার মাঝে মধ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকুরী মেলার নামে তামাশা করে এই সরকার। কিন্তু শিক্ষার সামগ্রিক কি হাল হয়েছে, তা নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারণ মানুষ শিক্ষিত হলে সচেতন হবে। তাহলে ভারতীয় জনতা পার্টির যে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দর্শন তা এগিয়ে নেওয়া যাবে না। যার জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে সরকার।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে মান উন্নয়ন করার জন্য কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। অপরদিকে পরিকাঠামোগত উন্নয়নেরও কোন উদ্যোগ নেই। মফসলের স্কুলগুলি অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ক্লাসরুম ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিরোধী দলনেতা বলেন, আড়াই গুণের বেশি ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহার করার জন্য। একই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের আহ্বান জানান তিনি। অপরদিকে রাজ্যের শিক্ষা ভবনে গিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয় বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং টি এস ইউ। বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন দেব জানান, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদন্ড আগেই ভেঙে ফেলেছে বর্তমান সরকার। কিন্তু গতকাল আরো একটি পেরেক মেরেছে ফি বৃদ্ধি করে। ছয়টি ক্যাটাগরিতে এই ফি বিক্রি করা হয়েছে।
সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো দ্বিগুণ হারে ফি বৃদ্ধির আগে একবারের জন্য পর্ষদ কর্তৃপক্ষ রাজ্যের কোন ছাত্র সংগঠন এবং অভিভাবক মহলের সাথে কথা বলে নেই। এভাবে ফি বৃদ্ধি করা কোনভাবেই মানতে পারছে না রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই এর প্রতিবাদে আজকে বিক্ষোভ কর্মসূচি সংঘটিত করে পর্ষদ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে এবং সরকারের উদ্দেশ্যে দাবি অবিলম্বে যাতে ফি প্রত্যাহার করা হয়। নাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে গোটা রাজ্যে বড়সড়ো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। কারণ শারদ উৎসবের মধ্যে কোটি কোটি টাকা অর্থ ব্যয় করে সরকার শুভেচ্ছা বার্তার ফ্ল্যাক্স ঝুলিয়েছে। আর ছাত্রীদের উপর এত বড় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই রাক্ষস সরকারকে উৎখাত করতেও আহ্বান জানান তিনি। পরবর্তী সময়ে পুলিশ এসে তাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ছাত্র স্বার্থ বিরোধী ফি স্ট্রাকচার বাতিলের দাবিতে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির নিকট ডেপুটেশন প্রদান এ.বি.ভি.পি-র।
শুক্রবার অখিল ভারতী বিদ্যার্থী পরিষদের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদে গিয়ে পর্ষদ সভাপতি ডঃ ধনঞ্জয় গন চৌধুরীর নিকট ডেপুটেশান প্রদান করে। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয় নয়া যে ফি স্ট্রাকচার ঘোষণা করা হয়েছে তা যেন পুনঃবিবেচনা করা হয়। পর্ষদ সভাপতির নিকট ডেপুটেশান প্রদান শেষে প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানান সম্প্রতি ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি স্ট্রাকচার বৃদ্ধি করেছে। দেখা গেছে এক লাফে প্রায় দেড়শ শতাংশ ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজের সকল অংশের ছাত্র-ছাত্রিদের কথা মাথায় রেখে ফি স্ট্রাকচার বৃদ্ধি করা উচিত ছিল। তাই পর্ষদ সভাপতির নিকট দাবি জানানো হয়েছে নয়া ফি স্ট্রাকচার পুনঃবিবেচনা করার জন্য। এদিকে প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী। রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন ট্রিপল ইঞ্জিন সরকারের মনোনীত ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ রাজ্য সরকারের অনুসরণ করেই অবিবেচনাপ্রসূত চরম শিক্ষা ও ছাত্র বিরোধী কসাইয়ের ন্যায়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীকে নিয়ে আন্দোলনে নামতে চায় কংগ্রেস। তাই বিবৃতি প্রকাশ করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি। ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। কারণ শিক্ষা মৌলিক অধিকার। রাজ্যে যেখানে অর্থের জন্য সন্তান বিক্রি হচ্ছে সে জায়গায় দাঁড়িয়ে পর্ষদের ফি বৃদ্ধি করাটা সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া সমান। কারণ এবার অভিযোগ করতে শুরু করেছে সরকারের মন্ত্রী, বিধায়ক, চেয়ারম্যান এবং মন্ডল নেতাদের ভোগবিলাস ছেড়ে। যেখানে তাদের ভোগ-বিলাসের কোনরকম কমতি নেই সেখানে কেন দ্রব্যমূল্যে দোহাই দিয়ে পর্ষদ নিল এত বড় সিদ্ধান্ত?

