Saturday, June 28, 2025
বাড়িখেলা‘চোকার্স’রাই চ্যাম্পিয়ন, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্টে বিশ্বজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা

‘চোকার্স’রাই চ্যাম্পিয়ন, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্টে বিশ্বজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৪ জুন : অবশেষে ঘুচল ‘চোকার্স’ তকমা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল দক্ষিণ আফ্রিকা। একদিকে যেমন ছিল প্রোটিয়া পেসারদের দাপট, তেমনই প্রায় শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেন আইডেন মার্করাম। ১৩৬ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে দেন। ২৭ বছর ধরে যে ব্যর্থতা, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ম্যাচের রাশ আলগা করার যে ‘কলঙ্ক’ প্রোটিয়াদের তাড়া করেছে, লর্ডসে তার থেকে শাপমুক্তি ঘটল। ৫ উইকেটে জিতে ২০২৩-২৫ চক্রের বিশ্বসেরার খেতাব এখন টেম্বা বাভুমার হাতে।

লর্ডসে প্রথম দুদিন দাপট ছিল পেসারদের। টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। লর্ডসের মেঘলা আকাশ ও পিচের সুইংয়ের সুযোগ নিতে ভুল করেননি দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ২১২ রানে বন্দি করে ফেলেছিলেন তাঁরা। বিউ ওয়েবস্টার ৭২ রান জুড়ে যান, স্টিভ স্মিথ করেন ৬৬ রান। কাগিসো রাবাডা নেন পাঁচটি উইকেট, তিনটি মার্ক জানসেনের।

ব্যাট করতে নেমে একই পরিস্থিতি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলের বাউন্স, পেস, সুইং বুঝতে সমস্যায় পড়েছিলেন ত্রিস্তান স্টাবসরা। তার মধ্যেই বাভুমা ৩৬ ও বেডিংহাম ৪৫ রান করেন। কামিন্সের ধাক্কা সামলাতে পারেনি লোয়ার অর্ডার। ১৩৮ রানে সব উইকেট হারায় তারা। একাই ৬ উইকেট নেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার হাতে তখন ৭৪ রানের বিরাট লিড। ফের যেন সত্যি হতে চলেছে, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া অবধ্য। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ফের চোকার্স। কিন্তু এর মাঝেও বোঝা যাচ্ছিল, আকাশ পরিষ্কার হলে বা একটু বেলা গড়ালে ব্যাট করা কঠিন কিছু নয়। আর সেভাবে সুইংও হচ্ছে না। বাভুমা সেটা করে দেখালেনও।

দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে অজিরাও বেকায়দায় পড়েছিল। স্মিথ, ওয়েবস্টাররা রান পাননি। অ্যালেক্স ক্যারি করেন ৪৩ রান। দ্বিতীয় দিনের শেষবেলায় মিচেল স্টার্কের সহজ ক্যাচ ফেলেন মার্কো জানসেন। ম্যাচও বোধহয় প্রায় ফেলেই দিচ্ছিলেন। কারণ স্টার্ক একাই ৫৮ রান করে ল্যাজেগোবরে করে দিয়েছিলেন প্রোটিয়াদের। রাবাডার ৪ উইকেট ও এনগিডির ৩ উইকেট সত্ত্বেও ২৮২ রানের বিরাট লক্ষ্য খাঁড়া করে অস্ট্রেলিয়া।

সেই অসাধ্যসাধন করে দেখালেন মার্করাম-বাভুমারা। শুরুতে রিকেলটনের উইকেট তুলে পালটা আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন স্টার্ক। কিন্তু মার্করাম-বাভুমাদের টপকাতে পারলে তো? কাঁধে-কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করলেন। তৃতীয় দিনের শেষে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৬৯ রান। হাতে ছিল আট উইকেট। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও হাফসেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক বাভুমা। পায়ে চোট, দৌড়তে পারছেন না। কিন্তু স্টার্কের বাউন্সারগুলো আলতো হাতে পুল করলেন। কখনও বা কামিন্সের সুইংকে ব্যাটের মাঝখান দিয়ে নামিয়ে নিলেন মাটিতে।

তৃতীয় দিনের শুরুতে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না তিনি। কামিন্সের বলে তিনি আউট হন ৬৬ রানে। তখন জয়ের থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ৪১ রান দূরে। ত্রিস্তান স্টাবসও মাত্র ৮ রান করে আউট হন। কিন্তু একা কুম্ভের মতো লড়ে যান মার্করাম। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সফল এক ব্যাটার দেখিয়ে দিলেন কীভাবে প্রবল চাপ মাথায় নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হয়। তাঁর সামনে কার্যত হার মানল অজি পেস ত্রিফলা। মার্করাম ১৩৬ রানে আউট হয়ে ফিরলেন। গোটা লর্ডস উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। টেস্টে একজন ক্রিকেটারের কাছে এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? বাকি ৬ রান তুলতে অসুবিধা হল না ভেরেনি-বেডিংহাম। ২১ রান করলেন বেডিংহাম। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।

চলতি বছর ক্রীড়াবিশ্ব অনেক ‘মিরাকল’ দেখেছে। টটেনহ্যাম, প্যারিস সাঁ জাঁ থেকে আরসিবি। এবার তাতে নাম জুড়ল দক্ষিণ আফ্রিকারও। এবার যেন বলাই যায়, ‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা’।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!