স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৬ নভেম্বর: চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ১৩৫ রানের জয়ে চার ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।এই সংস্করণে রানের হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০২৩ সালে জোহানেসবার্গে তাদের ১০৬ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড।সেই জোহানেসবার্গেই শুক্রবার ভারত ২০ ওভারে করে ১ উইকেটে ২৮৩ রান। জবাবে প্রথম তিন ওভারে চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে লড়াই থেকে অনেকটাই ছিটকে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় ১৪৮ রানে।তিলাক ও স্যামসনের কাছেই যেন হেরে গেছে প্রোটিয়ারা। তিনে নেমে ১০ ছক্কা ও ৯ চারে ৪৭ বলে ১২০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিলাক। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই। ৪ ম্যাচে ১৪০ গড় ও ১৯৮.৫৮ স্ট্রাইক রেটে ২৮০ রান করে সিরিজ-সেরার স্বীকৃতিও পান ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
ওপেনার স্যামসন ৯ ছক্কা ও ৬ চারে করেন ৫৬ বলে অপরাজিত ১০৯ রান। সেঞ্চুরিতে সিরিজ শুরুর পর শেষটাও করলেন তিনি শতক দিয়ে। পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি।এই সংস্করণে যেকোনো উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় উইকেটে বিশ্ব রেকর্ড ২১০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি তিলাক ও স্যামসন গড়েন স্রেফ ৮৬ বলে! দুজনের ব্যাটে আরও একগাদা রেকর্ড হয় এই ম্যাচে।দা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে স্যামসন ও আভিশেক শার্মার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। যেখানে দায় ছিল রিজা হেনড্রিকসেরও। প্রথম ওভারে স্লিপে আভিশেকের ক্যাচ নিতে পারেননি তিনি।জীবন পেয়ে ঝড় তোলেন আভিশেক। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফেরার আগে ৪ ছক্কা ও ২ চারে তিনি করেন ১৮ বলে ৩৬ রান। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৫ বলে ৭৩ রান।পরের গল্পটা শুধুই স্যামসন ও তিলাকের। তাদের সামনে বল ফেলার যেন জায়গা খুঁজে পাননি প্রোটিয়া বোলাররা।
দুজনের তাণ্ডবে ভারতের রান একশ পূর্ণ হয় নবম ওভারে, দুইশ ছুঁয়ে ফেলে তারা পঞ্চদশ ওভারের প্রথম বলেই।অষ্টাদশ ওভারে স্যামসন সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫১ বলে। ৭৫ ও ৯৫ রানে জীবন পেয়ে ৪১ বলে শতক স্পর্শ করেন তিলাক। শেষ পর্যন্ত তাদের থামানোর পথ খুঁজে পায়নি স্বাগতিকরা।রান তাড়ার শুরুটাও দক্ষিণ আফ্রিকার হয় দুঃস্বপ্নের মতো। অসাধারণ সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনীতে তাদের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন আর্শদিপ সিং।প্রথম ওভারেই তিনি দারুণ ইনসুইঙ্গারে বোল্ড করে দেন হেনড্রিকসকে। পরের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার রায়ান রিকেলটন।আর্শদিপ নিজের পরের ওভারে পরপর দুই বলে বিদায় করে দেন এইডেন মার্করাম ও হাইনরিখ ক্লসেনকে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১০!
একে তো বিশাল লক্ষ্যের চ্যালেঞ্জ, তারওপর শুরুতেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়ারা।পঞ্চম উইকেটে ট্রিস্টান স্টাবস ও ডেভিড মিলার ৫৪ বলে ৮৬ রানের জুটি গড়েন বটে, কিন্তু পরপর দুই বলে এই দুজনের বিদায়ের পরই কার্যত শেষ হয়ে যায় ম্যাচের সব উত্তাপ।মিলারকে (২৭ বলে ৩৬) ফিরিয়ে ওই জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার ভারুন চক্রবর্তি। আরেক লেগ স্পিনার রাভি বিষ্ণইয়ের শিকার হয়ে ফেরেন স্টাবস (২৯ বলে ৪৩)।পরে মার্কো ইয়ানসেনের ১২ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২৯ রানের ক্যামিওতে পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার।২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার আর্শদিপ। এই ম্যাচে দুটিসহ সিরিজে ভারুনের শিকার ১২ উইকেট।গত মাসে দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে প্রায় তিন বছর পর এই সংস্করণে ফেরার পর ৭ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিলেন ৩৩ বছর বয়সী ভারুন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২৮৩/১ (স্যামসন ১০৯*, আভিশেক ৩৬, তিলাক ১২০*; ইয়ানসেন ৪-০-৪২-০, কুটসিয়া ৩-০-৪৩-০, সিপামলা ৪-০-৫৮-১, সিমেলানে ৩-০-৪৭-০, মহারাজ ৩-০-৪২-০, মার্করাম ২-০-৩০-০, স্টাবস ১-০-২১-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮.২ ওভারে ১৪৮ (রিকেলটন ১, হেনড্রিকস ০, মার্করাম ৮, স্টাবস ৪৩, ক্লসেন ০, মিলার ৩৬, ইয়ানসেন ২৯*, সিমেলানে ২, কুটসিয়া ১২, মহারাজ ৬, সিপামলা ৩; আর্শদিপ ৩-০-২০-৩, পান্ডিয়া ৩-১-৮-১, রামানদিপ ৩.২-০-৪২-১, ভারুন ৪-০-৪২-২, বিষ্ণই ৩-০-২৮-১, আকসার ২-০-৬-২)
ফল: ভারত ১৩৫ রানে জয়ী
সিরিজ: ৪ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: তিলাক ভার্মা
ম্যান অব দা সিরিজ: তিলাক ভার্মা